ভয়াবহ বন্যায় বাংলাদেশে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। পাশাপাশি লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যা এখানে নিয়মিত। তবে জলবায়ু পরিবর্তন এর তীব্রতাকে অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। সূত্র মতে, প্রবল বর্ষণের জেরে তৈরি বন্যায় এর মধ্যে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েই মারা গিয়েছেন ২১ জন। বন্যায় মোট মৃতের সংখ্যা ২৫।
বাংলাদেশের সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। পাহাড়ি ঢল আর অতি ভারী বৃষ্টিতে নদনদী ও হাওরের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যার আরও বিস্তৃতি ঘটেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন দুই জেলার প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি সিলেটে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা।
পানিবন্দি মানুষের মধ্যে হাহাকার ও আর্তনাদ চলছে। আশ্রয়ের খোঁজে পানি-স্রোত ভেঙে ছুটছে মানুষ। সবচেয়ে বিপদে আছেন শিশু ও বয়স্করা। আটকে পড়াদের উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হচ্ছে। যেখানেই শুকনো ও উঁচু জায়গা পাওয়া যাচ্ছে সেখানেই আশ্রয় নিচ্ছে মানুষ।
বাংলাদেশ সরকারের তরফে জানা গিয়েছে, সেদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট এবং সুনামগঞ্জ বন্যার জেরে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বাকি দেশের থেকে। সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, দেশের দশ জেলার ৬৪ উপজেলা বন্যার কবলে পড়েছে। সেদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানের কথায় ১২২ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হচ্ছে সিলেট ও সুনামগঞ্জে। ভারতের অসম-মেঘালয়ের প্রবল বৃষ্টির জেরেই পড়শি দেশের এই দুর্ভোগ বলে দাবি করেন মন্ত্রী।
কোম্পানিগঞ্জ গ্রামের লোকমান বলেন, তাদের গোটা গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সারাদিন বাড়ির ছাদে কাটানোর পর এক প্রতিবেশী তাদের উদ্ধার করে। তার মা জানান, তিনি তার জীবনে এমন বন্যা দেখেনি।
আসমা আক্তার, যাকেও উদ্ধার করা হয়েছিল, বলেন, দুদিন ধরে তার পরিবার কিছু খায়নি। পানি এতো তাড়াতাড়ি উঠেছে যে কিছুই সাথে আনতে পারিনি। আর কিছু রান্না করারও উপায় নেই।
প্রসঙ্গত, দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশে গত শুক্রবার থেকে ২১ জন নিহত হয়েছে। তার মধ্যে তিনজন শিশু আছে। যাদের বয়স ১২ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। ঘটনাটি ঘটেছে নান্দাইলে। সেখানকার পুলিশ প্রধান মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে চট্টগ্রাম শহরে পাহাড় ধ্বসে আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে এএফপিকে জানিয়েছে পুলিশ অফিসার নুরুল ইসলাম।
যদিও বাংলাদেশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সুনামগঞ্জ ও সিলেটে বন্যায় দুজনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের একজন এসএসসি পরীক্ষার্থী, সে পানির টানে ভেসে গেছে। আরেকজন বয়স্ক ব্যক্তি বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মারা গেছেন।
এদিকে রংপুরও জলমগ্ন। জলমগ্ন বগুড়া, জামালপুর, গাইবান্ধা, লালমনিরহাটও। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সতর্কবার্তা, আগামী ২৪ ঘণ্টায় বন্যা কবলিত সব জেলাতেই পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। তিস্তার জল বেড়ে যাওয়ায় প্লাবিত বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল। বিমানবন্দর থেকে রেল স্টেশনে জল ঢুকে গিয়েছে। ত্রাণ পৌঁছনোর উপায় পর্যন্ত নেই। মিলছে না পানীয় জলও।
এদিকে এই বন্যা পরিস্থিতির জেরে ব্যাহত হয়েছে মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা। সবমিলিয়ে এ বার সেখানে ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। শনিবার স্বাস্থ্য দফতরের তরফে একটি দল পাঠানো হলেও বন্যার জেরে তারা যথা স্থানে যেতেই পারেনি। এই পরিস্থিতিতে চরম ভোগান্তি হচ্ছে বাংলাদেশবাসীর।
এদিকে, ভারতের আসাম ও মেঘালয় রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হচ্ছে না। বন্যায় অন্তত ১১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে আসামে ৮০ জনের ও মেঘালয়ে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
রোববার আসাম ও মেঘালয়ে ১০ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। এই ১০ জনের মধ্যে আটজন আসামের ও মেঘালয়ের দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১২ জনের খোঁজ মিলছে না। সব মিলিয়ে আসামে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ৭০। প্রায় ৩৭ লাখ বাসিন্দা এই বন্যার জেরে ক্ষতির মুখে পড়েছেন। বন্যার জেরে প্রায় ১.৫৬ লাখ মানুষ ঘরছাড়া হয়েছেন। প্রায় ৫১৪টি ত্রাণ শিবির করা হয়েছে। সেখানে তাদের অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন।
বন্যার জেরে ১৭২,৯৯২ হেক্টর কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আসামে ৩৭.২ মিমি বৃষ্টি হয়েছে। বরাক উপত্যকার তিন জেলা ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বহু জায়গায় রাস্তা ও রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতিমধ্যেই যোগাযোগের জন্য সরকার শিলচর-গুয়াহাটি বিমান পরিষেবা চালু করেছে।
মেঘালয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় দুজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত ৪০ জনের মৃত্যু খবর মিলেছে। প্রায় ৯৬টি গ্রামের ৪৭ হাজার মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় পাঁচ হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩৬টি ত্রাণ শিবিরে ৪২৬২ দুর্গত আশ্রয় নিয়েছেন।
এদিকে বন্যা পরিস্থিতির জেরে বহু রাস্তাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে নাগাল্যান্ড ও মণিপুরে কোনও মৃত্যুর খবর নেই। তবে মণিপুরে ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এসডব্লিউ/এসএস/০৮১২
আপনার মতামত জানানঃ