মাটির ৮৫ ফুট নিচে নেমে গিয়েছে আঁকাবাঁকা পথ। সঙ্কীর্ণ। কোথাও কোথাও এতটাই সঙ্কীর্ণ যে মানুষের পক্ষে সেই পথে চলা অসম্ভব। দুর্গম সে পথ কখনো হামাগুড়ি দিয়ে নামতে হয় তো কখনো স্পাইডারম্যানের মতো বেয়ে উঠতে হয়। এই সঙ্কীর্ণ এবং দুর্গম পথে ৮৫ ফুট নিচে নেমে খোঁজ মেলে রহস্যজনক এক মানবখুলির!
২০১৫ সালে একদল গুহা অনুসন্ধানকারী এই খুলির খোঁজ পেয়েছিলেন। উত্তর ইটালির মার্সেল লবেন গুহার মধ্যে এই রহস্যজনক খুলির খোঁজ পান তারা। বিস্ময়ের বিষয় ছিল, এমন একটি দুর্গম জায়গায় কোথা থেকে এবং কীভাবে এই খুলি এসে হাজির হলো? এই অনুসন্ধান ঘিরে সে সময় বিস্তর জলঘোলা হয়েছিল।
অনেকেই মনে করেছিলেন, বহু আগে কোনো গুহা অনুসন্ধানকারী হয়তো গুহায় আটকে গিয়েছিলেন। খাবার, জল এবং অক্সিজেনের অভাবে ক্রমশ তিনি মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েন। কিন্তু এত সহজে সেই ব্যাখ্যা মানা সম্ভব ছিল না। কারণ খুলিটুকু ছাড়া মানব কঙ্কালের আর কোনো অংশই আশেপাশে মেলেনি। খুলি রহস্যে বিস্তর মতবাদ সামনে আসে।
অবশেষে ২০২১ সালে পৌঁছে সেই রহস্যের সমাধান হয়। ২০১৭ সাল থেকে খুলি নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন একদল বিজ্ঞানী। তারাই রহস্যের সমাধান করেন।
২০১৭ সালে প্রত্নতত্ত্ববিদ লুসিয়া কাস্টাগনার নেতৃত্বে ১২ জন অনুসন্ধানকারীর একটি দল ওই গুহায় প্রবেশ করেন। ২০১৫ সালে যে দলটি খুলিটির খোঁজ পেয়েছিল তাদের থেকে গুহার মানচিত্র ভালো করে বুঝে নিয়েই রওনা দিয়েছিলেন তারা।
২০১৫ সালে খোঁজ পেলেও গবেষণার সুবিধার্থে খুলিটি গুহার ভেতরে ওই স্থানেই রেখে এসেছিলেন সে সময়ের অনুসন্ধানকারীরা। ২০১৭ সালে অনুসন্ধানকারীর ওই দল খুলিটি গবেষণাগারে নিয়ে আসে।
মাটির ৮৫ ফুট নিচে গুহার মধ্যে খুলিটির কাছে পৌঁছতে রীতিমতো বেগ পেতে হয়েছিল তাদের। তার উপর খুলিটি এমন একটি জায়গায় ছিল যেখানে পৌঁছতে গুহার দেওয়াল বেয়ে অন্তত ৪০ ফুট উপরে উঠতে হয়। গুহার একটি খাঁজে আটকে ছিল খুলিটি।
গবেষণায় প্রথম যে বিষয়টি সামনে আসে সেটি হলো খুলিটি এক নারীর। যার বয়স অন্তত ৫ হাজার বছর। একা নারী গুহার ভেতরে কী করছিলেন তা জানতে আরো উৎসুক হয়ে পড়েন গবেষকেরা।
খুলিটির কিছু অস্বাভাবিকত্ব চোখে পড়ে গবেষকদের। খুলিটিতে গর্ত ছিল। তার চোয়ালের অংশ ছিল না এবং ধারালো কিছু দিয়ে ওই খুলি থেকে মাংস খুবলে নেয়া হয়েছিল। খুব নিখুঁত পর্যবেক্ষণের পর এই সিদ্ধান্তে আসেন তারা।
আরো জানা যায় যে, মৃত্যুর আগে দীর্ঘদিন অপুষ্টিতে ভুগেছিলেন তিনি। ওই নারী কি কোনো কুসংস্কারের শিকার হয়েছিলেন? মৃত্যুর আগে কি তাহলে তার উপর মর্মান্তিক নির্যাতন করা হয়েছিল। মৃত্যুর জন্য তাকে এই গুহায় আটকে রাখা হয়েছিল? আর তারপর মারা যাওয়ার পর কোনো রীতি মেনে তার শরীর থেকে মাংস খুবলে নেয়া হয়?
এই গুহার কিছু দূরে মানুষের অনেক হাড়গোড়ের সন্ধান পান তারা। পরবর্তীকালে জানা যায়, সেটি ছিল অতীতের কবরস্থান। আগে তার পাশ দিয়েই জলের স্রোত এসে প্রবেশ করত গুহায়। ধর থেকে আলাদা হয়ে কোনোভাবে স্রোতে ভেসে গুহায় পৌঁছে যায় খুলিটি।
তারপর স্রোতের সঙ্গেই কিংবা ভূমিধসের ফলে খুলিটি গুহার ভেতরে ওই দুর্গম জায়গায় আটকে যায়। এতদিন সবার নজরের বাইরেই ছিল সেটি। ২০১৫ সাল নাগাদ ওই জায়গায় এসে পৌঁছলে তার সন্ধান মেলে।
তবে কীভাবে গুহার মধ্যে খুলিটি এসে পৌঁছালো সে রহস্যের সমাধান হলেও কেন তার মৃত্যু হয়েছিল এবং কেনই বা তার খুলি থেকে মাংস খুবলে নেয়া হয়েছিল সে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর এখনো অধরা।
এসডব্লিউ/এসএস/১৬১৫
আপনার মতামত জানানঃ