বিজেপি শাসিত ভারতে হিজাব বিতর্ক ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে ও জটিল হচ্ছে। ভারতের কর্ণাটকের হিজাব ইস্যু নিয়ে পুরো দেশেই উত্তেজনা বিরাজ করেছেন। একই ইস্যুতে এবার উত্তপ্ত জম্মু-কাশ্মীর। শিক্ষিকারা হিজাব পরতে পারবেন না— এমন নির্দেশনা জারি করেছে জম্মু-কাশ্মিরের একটি স্কুল। এর কারণে সেখানকার রাজনীতিতেও ছড়িয়েছে উত্তাপ। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে জি নিউজ।
জানা গেছে, এ নির্দেশিকা জারি করেছে ‘ডাগর পরিবার’ নামের একটি স্কুল। পুনের একটি এনজিও এবং ভারতীয় সেনাবাহিনী বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের জন্য স্কুলটি পরিচালনা করে। সেই স্কুল কর্তৃপক্ষই শিক্ষিকাদের উদ্দেশে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে। যেখানে স্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে, স্কুলের মধ্যে শিক্ষিকারা হিজাব পরতে পারবেন না।
স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, শিশুদের মনের মধ্যে যাতে ভয়ের সঞ্চার না হয়, তারা যাতে কোনো সংশয়ে না থাকে এবং অনেক বেশি নিরাপদ অনুভব করে, সেজন্যই এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর সমালোচনা করেছেন জম্মু-কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এবং উমর আবদুল্লা।
জম্মু-কাশ্মির এখন ভারতের একটি অংশ। কিন্তু যে আশা নিয়ে অঞ্চলটি ভারতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, সেটি পূর্ণতা পায়নি বলে অভিযোগ তাদের। কাশ্মিরের ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লাহ বলেছেন, যদি তারা জানতেন মুসলিমদের অধিকার ভারতে রক্ষা হবে না, তাহলে সিদ্ধান্ত অন্য কিছু হতো।
শিশুদের মনের মধ্যে যাতে ভয়ের সঞ্চার না হয়, তারা যাতে কোনো সংশয়ে না থাকে এবং অনেক বেশি নিরাপদ অনুভব করে, সেজন্যই এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে
বুধবার (২৭ এপ্রিল) শ্রীনগরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে জম্মু-কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেন, ‘যখন আমরা ভারতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, তখন আমরা এমন একটি দেশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি, যেখানে প্রতিটি ধর্মের প্রতি সমান আচরণ করা হবে। আমাদেরকে বলা হয়নি যে, একটি ধর্ম অগ্রাধিকার পাবে এবং অন্যদের দমন করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘যদি আমরা এটা জানতাম, তাহলে সম্ভবত আমাদের সিদ্ধান্ত অন্য কিছু হতো। আমরা সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যখন আমাদের বলা হয়েছিল যে, প্রতিটি ধর্ম সমান অধিকার পাবে।’
সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক ও মধ্যপ্রদেশে মসজিদে মাইকে আজান দেওয়া, বোরকা নিষিদ্ধ ও হালাল মাংস বিক্রি নিয়ে নানা বিতর্ক চলছে। সে বিষয়েও কথা বলেছেন জম্মু-কাশ্মিরের সাবেক এই মুখ্যমন্ত্রী।
ওমর আবদুল্লাহ বলেন, ‘কেন আমরা মসজিদে লাউড স্পিকার ব্যবহার করতে পারবো না? যদি অন্য ধর্মের পবিত্র স্থানগুলোতে ব্যবহারের অধিকার থাকে, মসজিদে কেন নয়? আপনারা আমাদেরকে বলেন, হালাল মাংস বিক্রি করবেন না। কেন? আমাদের ধর্ম আমাদেরকে হালাল মাংস খাওয়ার অনুমতি দেয়। কেন আপনারা এটা বন্ধ করতে চাচ্ছেন?’
‘আমরাতো আপনাদেরকে হালাল মাংস খেতে বাধ্য করছি না। কোনো মুসলিম কি আপনাদের হালাল মাংস খেতে বাধ্য করেছে? আপনি যেভাবে খেতে চান সেভাবে খান এবং আমরা আমাদের পছন্দমতো করবো,’ যোগ করেন তিনি।
মুসলমানরা কখনোই মন্দির অথবা অন্য ধর্মীয় স্থানে লাউড স্পিকার ব্যবহার নিয়ে আপত্তি করেনি বলেও দাবি করেন ওমর আবদুল্লাহ। কাশ্মিরের এই নেতা বলেন, ‘আমরা আপনাদের কখনোই বলি না যে মন্দিরে কোনো মাইক থাকা উচিত নয়। মন্দির ও গুরুদ্বারে মাইক ব্যবহার করবেন না। কিন্তু আপনারা কেবল আমাদের মাইক নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছেন। আমাদের ধর্মে আপনারা বিচলিত হন। আপনারা আমাদের পোশাক পছন্দ করেন না, আমরা যেভাবে প্রার্থনা করি তাও। অন্য কারো সঙ্গে আপনাদের সমস্যা নেই। তারা ঘৃণা ছড়াচ্ছে।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১২৫৫
আপনার মতামত জানানঃ