রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বোরো ধানের জমিতে সেচের পানি না পাওয়ায় অভিমানে দুই উপজাতি কৃষক বিষপান করেছে। এদের মধ্যে অভিনাথ মার্ডি (৩০) নামের একজন মারা যান। অপরজন নিহত অভিনাথ মার্ডির চাচাতো ভাই রবি মার্ডিকে (৩২) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো। বুধবার বিকেলে নিমঘুটু গ্রামের বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গভীর নলকুপের কাছে তারা বিষপান করে। অভিনাথ মার্ডির মৃত্যুর একদিন পর শুক্রবার(২৫ মার্চ) দিবাগত রাতে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার চাচাতো ভাই কৃষক রবি মার্ডিও মারা যায়।
স্থানীয়রা জানান, অভিনাথ মার্ডি ও রবি মার্ডি দুজনেই বোরো ধান চাষ করেছিলেন। কিন্তু ১২ দিন ধরে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপে ঘুরলেও তারা সেচের পানি পাচ্ছিলেন না। এই ক্ষোভে গত বুধবার সন্ধ্যার আগে গভীর নলকূপের সামনেই দুজনে বিষ পান করেন। এতে গ্রামেই অভিনাথের মৃত্যু হয়। আর রবিকে ভর্তি করা হয়েছিল হাসপাতালে। এ দুই কৃষকের বাড়ি গোদাগাড়ীর দেওপাড়া ইউনিয়নের নিমঘুটু গ্রামে।
এদিকে দুই আদিবাসী কৃষকের বিষপানে আত্মহত্যার প্ররোচণায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন সাঁওতালরা।
গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটামোড় নামকস্থানে মঙ্গলবার দুপুর ২টা থেকে সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি পুনরুদ্ধার সংগ্রাম কমিটির উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, সব সময় একটি স্বার্থান্বেষী চক্র আদিবাসীদের জীবন-জীবিকার দিকে না তাকিয়ে তাদের জমির দিকে তাকিয়ে থাকে। আদিবাসীদের জমি কীভাবে দখল নেওয়া যায়, সেই সুযোগে থাকে তারা। যে জমিতে আমরা চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। একসময় বন-জঙ্গল সাফ করে জমি আবাদযোগ্য করে তুলেছিল এই আদিবাসীরা। আর এখন আদিবাসীদের সেই জমি থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা চলে। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে যা কারও কাম্য নয়।
যে জমিতে আমরা চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। একসময় বন-জঙ্গল সাফ করে জমি আবাদযোগ্য করে তুলেছিল এই আদিবাসীরা। আর এখন আদিবাসীদের সেই জমি থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা চলে। একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে যা কারও কাম্য নয়।
বক্তারা রাজশাহীর দুই আদিবাসী কৃষকের বিষপানে আত্মহত্যার প্ররোচণায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানান।
সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি পুনরুদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ডা. ফিলিমন বাস্কের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন— সামাজিক সংগ্রাম পরিষদ গাইবান্ধার আহবায়ক জাহাঙ্গীর কবির তনু, সদস্য সচিব হাসান মোর্শেদ দীপন, বগুড়া শিবগঞ্জ উপজেলা আদিবাসী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক এস. স্বাধীন চন্দ্র রবিদাস, সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি পুনরুদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম মাস্টার, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সুফল হেমব্রম, সদস্য প্রিসিলা মুরমু, ব্রিটিশ সরেন ও ময়নুল ইসলাম প্রমুখ।
গত বুধবার রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নিমঘুটু গ্রামের অভিনাথ মার্ডি (৩৬) ও তার চাচাতো ভাই রবি মার্ডি (২৭) নামে দুই আদিবাসী কৃষকের জমিতে পানি পেতে হয়রানির শিকার হন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা দুজনে বিষপান করেন। বুধবার অভিনাথ ও শুক্রবার রবি মারা যান। এ ঘটনায় অভিনাথের স্ত্রী রোজিনা হেমব্রম বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) গভীর নলকূপের অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচণার মামলা করেন। জমিতে সেচ না দিয়ে হয়রানির শিকার হয়ে তারা বিষপান করেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও আমরা একটি সমন্বিত ও আধুনিক কৃষিপণ্য বিপণন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারিনি। ফলে একদিকে উৎপাদিত ফসল ও পণ্যদ্রব্যের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন কৃষক, অন্যদিকে সেসব পণ্য উচ্চমূল্যে কিনতে হয় ভোক্তা তথা ক্রেতাসাধারণকে। যদি ধান ও চালের দাম বাড়ে, তাহলে নিম্ন আয়ের মানুষের কষ্ট হয়। আবার ধানের দাম কমে গেলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন। উন্নত দেশে কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের সবটাই কিনে নেয়। পরে আবার সেটা কম দামে বিক্রি করে।
সর্বত্রই কৃষি আর কৃষকের জয়গান, অথচ ঠিকঠাক একটি কৃষিনীতি আজ পর্যন্ত হল না। দরকার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ, যাতে বাজারের চাহিদা আর জোগানে কৃষকের নির্দিষ্ট কিছু ভূমিকা থাকে। সরকারি ঋণ ব্যবস্থাকেও কৃষকের দরজায় পৌঁছতে হবে। এখনও ফসল বিপণনে সরকারের ভূমিকা গৌণ। মধ্যস্বত্বভোগীদের ভূমিকাই প্রধান। সরকারের ভূমিকা প্রধান হয়ে না উঠলে কৃষকের জন্য অন্য কোনও পথ নেই বাঁচার। সরকার যদি সত্যিই কৃষিকে বাঁচাতে চায়, তা হলে সেই ব্যবস্থা কার্যকর করার চেষ্টা সরকারকেই করতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০১০
আপনার মতামত জানানঃ