বর্তমান সিরিয়া সংকটটি হচ্ছে দুনিয়ার গণতন্ত্রমনা মুক্তিকামী মানুষের অসহায়ত্বের প্রতিচ্ছবি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসী নীতির পাশাপাশি আঞ্চলিক রাজনীতির অন্যতম খেলোয়াড় সৌদি আরবের নিজস্ব স্বার্থও সিরিয়াবাসীর দীর্ঘকালীন মানবেতর জীবনযাপনের কারণ।
মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগত অবস্থান ও তেলসম্পদের ওপর দখল বিস্তারের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে তার আধিপত্য বজায় রাখতে চায়। আরও কারণ হলো, তার মিত্রদেশ ইসরায়েলের নিরাপত্তা বিধান করা।
এদিকে, আঞ্চলিক রাজনীতিতে নিজের প্রভাব অটুট রাখা, ইরানের প্রভাব ঠেকানো ও সিরিয়ার সঙ্গে ঐতিহাসিক দ্বন্দ্ব এক্ষেত্রে সৌদি আরবের জ্বালানি হিসেবে কাজ করছে। তবে এবার চীন ও ইরানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে সিরিয়া। সিরিয়ার এই পদক্ষেপ এই অঞ্চলের ভূ-রাজনীতি কতটা পাল্টে দেবে, এখন সেটাই দেখার বিষয়।
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে যোগ দিয়েছে সিরিয়া
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে যোগ দিয়েছে সিরিয়া। চীন ও সিরিয়া বিভিন্ন ইস্যুতে একমত হয়ে একটি স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেছে।
এর মাধ্যমে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ বা সিল্ক রোডে যোগ দেয় সিরিয়া। বৃহস্পতিবার এমন সংবাদ প্রকাশ করেছে মিডল ইস্ট মনিটর।
বুধবার সিরিয়ার রাজধানীতে অবস্থিত পরিকল্পনা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কমিশনের ভবনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে দু’দেশ।
সিরিয়ার পরিকল্পনা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কমিশনের প্রধান ফাদি আল-খলিল ও চীনা রাষ্ট্রদূত ফেং বিয়াও ওই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।
চীন তাদের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ কার্যক্রমের আওতায় একটি বৈশ্বয়িক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এটা সিল্ক রোড ইকোনমিক বেল্ট ও ২১ শতকের সামুদ্রিক সিল্ক রোড নামে পরিচিত।
এর মাধ্যমে চীন অন্যান্য দেশকেও এ প্রকল্পের মধ্যে নিয়ে আসতে চাইছে। এর ফলে চীনের প্রভাব বাড়বে এবং তাদের উদ্দেশ্য পূরণ হবে।
এছাড়া বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ কার্যক্রমে অংশ নেয়া দেশগুলোকে চীন তাদের সহযোগী বানিয়ে নেয়। এছাড়া এসব দেশগুলোর অবকাঠামো ও অর্থনীতিতে চীন বিনিয়োগও করে।
২০১৩ সালে চীন এ বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ কার্যক্রমের আওতায় ১৪০ দেশে তাদের প্রকল্প চালু করেছে। তাদের এ কার্যক্রম ও প্রকল্পগুলো পৃথিবীর চার মহাদেশে চালু আছে।
এ প্রকল্পের সাথে যুক্ত গুরুত্বপূর্ণ দেশ হলো: পাকিস্তান, কাজাখস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, ইরাক, অস্ট্রিয়া, বেলারুশ ও বেশিরভাগ আফ্রিকান দেশ।
চীনের এ উদ্যোগে যোগ দেয়ার মাধ্যমে সিরিয়ার বাসার আল-আসাদ সরকার বাণিজ্য, প্রযুক্তি, পরিবহন ও অর্থনৈতিক সুবিধা পাবেন।
এছাড়া সাধারণ ব্যক্তি ও বিভিন্ন শিল্প-কারখানাগুলো বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ কার্যক্রমে যুক্ত বিভিন্ন দেশে তাদের কার্যক্রম চালাতে পারবে।
যৌথ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করছে ইরান ও সিরিয়া
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান এবং সিরিয়া একটি যৌথ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে একমত হয়েছে। পাশাপাশি দুই দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করার জন্য বিশেষ মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গঠন করা হবে।
ইরানের পরিবহনমন্ত্রী রুস্তম কাসেমি সিরিয়ার সফর শেষে দেশে ফিরে বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) এ কথা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, এক দশকের যুদ্ধশেষে সিরিয়া ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে এবং এজন্য ইরান ও সিরিয়া নিজেদের অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্য সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে চলেছে।
রুস্তম কাসেমি বলেন, দামেস্ক সফরের সময় তিনি সিরিয়ার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যৌথ মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গড়ে তোলার বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গঠনের বিষয়ে চূড়ান্ত চুক্তি করার জন্য ইরানের সরকারি কর্মকর্তাদের একটি প্রতিনিধিদল শিগগিরই সিরিয়ার সফর করবে।
২০১১ সাল থেকে সিরিয়ায় বিদেশি মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের সহিংসতা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ইরান সবসময় দামেস্ক সরকারের পাশে রয়েছে।
সিরিয়ার সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় ইরান যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, তেমনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনের ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৭৩০
আপনার মতামত জানানঃ