আদালতের নির্দেশে বাসায় ফিরেছেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল কেএস নবীর দুই নাতি। শনিবার টেলিভিশনের আলোচনা অনুষ্ঠান দেখে মধ্যরাতে আদালত বসিয়ে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ধানমণ্ডি থানা পুলিশ তাদের বাসায় পৌঁছে দিয়েছেন। এছাড়া এ বিষয়ে প্রতিবেদনও দাখিল করতে ধানমণ্ডি থানার ওসিকে নির্দেশ দেন আদালত। সে মোতাবেক রোববার আদালতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার ওয়ারেস আল হারুনী যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আদালত আগামী ১১ অক্টোবর এ বিষয়ে পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন। সেদিন উভয়পক্ষকে আদালতে হাজির হয়ে ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। ওইদিন পর্যন্ত তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেয়ার জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি মো. জাকির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে ধানমণ্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকরাম আলী মিয়া রোববার একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। সেখানে তিনি বলেছেন, হাইকোর্টের নির্দেশের পর তাৎক্ষণিকভাবে মোবাইল ফোনে দুই শিশুর মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। শিশু কাজী নাহিয়ান নবী (১৬), কাজী আদিয়ান নবী (১২) তাদের মা শাহনাজ নবী এবং কাজের মেয়েকে তাদের বাসার সামনে আসতে বলি। শনিবার রাত আনুমানিক দেড়টায় তারা সেখানে এলে দুই শিশুর চাচা কাজী রেহান নবীর উপস্থিতিতে বাসায় পৌঁছে দিই। আদালত রোববার ওসি ইকরামকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনি ১১ অক্টোবর পর্যন্ত জাস্ট এক-দুজন পুলিশ পাঠিয়ে খোঁজ নেবেন তারা ঠিক আছে কিনা, এটা শুধু মনিটর করবেন। এই শিশুদের মনে একটা ভয়ভীতি আছে, ফলে তারা নিরাপদবোধ করবে না। ‘আজকের আদেশটা বিশেষ বার্তাবাহকের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেব। আর ধানমণ্ডি থানাকে বলছি, যিনি বাচ্চাদের বের করে দিয়েছেন, ওই বাসায় গিয়ে তাকে বলবেন আদালত বলেছেন, কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত বা পদক্ষেপ না নিতে। সবাই যেন বাসায় অবস্থান করেন। তাদের বাড়ির নিরাপত্তা তাদেরই নিশ্চিত করতে হবে। পুলিশ মানুষের জীবন রক্ষা করতে পারে না। আমরা নিজেরা নিজেরা যদি সচেতন না হই তাহলে কিছু হবে না। সুতরাং ব্যারিস্টার কাজী রেহান নবীকে বলবেন বাচ্চাদের যাতে কিছু না হয়। উভয়পক্ষই যেন সচেতন থাকে। নাবালক যে দুই শিশু আছে তাদের বলবেন, সংযত আচরণ করতে। সংযত আচরণ করে যেন তারা বাড়িতে অবস্থান করে। কোনো উচ্ছৃঙ্খলতা যাতে না দেখায়। নাবালক বলতে আমরা যেমনটা ভাবছি সে রকম নয়। নাবালকদেরও আমরা দেখছি অপরাধ করতে। সুতরাং পুলিশ দিয়ে আগামী তারিখ পর্যন্ত বাচ্চাদের নিরাপত্তা দেবেন। এই শিশু দুটিকে নিয়ে আপনি কোর্টে আসবেন। আইনজীবী যদি থাকে তিনিও আসবেন।’
শনিবার রাত বারোটার দিকে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একাত্তর টিভিতে আলোচনা হচ্ছিল এ দুই শিশু নিয়ে। শিশু দুটিকে তাদের চাচা বাসায় ঢুকতে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করা হয়। ১০ আগস্ট শিশুদের বাবা মারা গেছেন। এই টকশোতে যুক্ত ছিলেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদও। আর এ টকশোটি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের নজরে আসায় মধ্যরাতে স্বপ্রণোদিত হয়ে তাৎক্ষণিক আদেশ দেন। থানা তাৎক্ষণিকভাবে আদেশটি পালন করেন।
মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘একাত্তর জার্নালের একটা চ্যাপ্টার ছিল শিশু অধিকার নিয়ে। সেটাতে আমি যুক্ত ছিলাম। ওই টকশোতে আলোচনায় আসে যে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার কেএস নবীর দুই নাতিকে বাসায় ঢুকতে দিচ্ছেন না তাদের চাচা। তখন আমি বললাম, এটা তো মানবাধিকার লঙ্ঘন। উনি যেহেতু আইনজীবী, উনার তো এটা আরও ভালো করে জানার কথা। তাছাড়া পুলিশও তাদের দায়িত্বটা নাকি সঠিকভাবে পালন করেনি। শিশু দুটিকে থানায় গিয়েও ফেরত আসতে হয়েছে। থানা থেকে বলেছে কোর্টে যেতে। এ কথা শোনার পরই টকশোর শেষদিকে আদালত স্বতঃপ্রণোদিত রুল ইস্যু করে ধানমণ্ডি থানাকে নির্দেশ দেন যে, এখনই ওই বাসায় শিশু দুটির থাকার ব্যবস্থা করতে এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য।’
১৯৯৬ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত অ্যাটর্নি জেনারেল হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন কেএস নবী। তিনি ২০১৮ সালে মারা যান। তার দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে কাজী রেহান নবী সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী। ছোট ছেলে সিরাতুন নবী ১০ আগস্ট মারা গেছেন। সিরাতুন নবীর দুই ছেলেকেই বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছিলেন না তাদের চাচা কাজী রেহান নবী। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কাজী রেহান নবী বলেন, আমি সময়মতো বিষয়টা ক্লারিফাই করব। আমার শরীরটা একটু খারাপ। পাঁচ দিন ধরে জ্বরে পড়ে আছি। আমি পুরো বিষয়টা নিয়ে রিজয়েন্ডার দেব।
আপনার মতামত জানানঃ