ফিলিস্তিনের জন্য জেল খেটেছেন এক ইসরায়েলি তরুণী। নাম শাহার পেরেৎস। মূলত ইসরায়েলি দখলদারিত্ব অপছন্দ হওয়ায় সেনাবাহিনীতে যোগ দেননি এই তরুণী। আর এই জন্যই জন্য তিনবার জেল খাটতে হয়েছে তাকে। ইসরায়েলের সেনা আদালত তাকে এই শাস্তি দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, ইসরায়েলের ১৮ বছর বয়স পূর্ণ হলে নারীদের সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক। সেখানে কমপক্ষে দুই বছর তাকে সেনাবাহিনীর সদস্য হিসেবে কাজ করতে হয়। তবে এই নিয়ম না মানায় তিনবার জেল খাটতে হয়েছে শাহারকে। নিজের ১৯ তম জন্মদিনও জেলে কাটাতে হয়েছে তাকে।
এরই মধ্যে ইসরায়েল ছেড়েছেন শাহার। এখন থাকছেন যুক্তরাজ্যে। তার পরিবারও এই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। জানা গেছে, প্রতিবছরই শাহারের মতো অনেকেই ইসরায়েলি সেনাবাহিনীতে যোগ না দেওয়ায় জেল খাটেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে শাহার বলেন, গাজা এবং পশ্চিম তীরে লাখ লাখ মানুষের ওপর অত্যাচার চালায় সেনাবাহিনী। কেউ কেউ আমাকে বিশ্বাসঘাতক বলতে পারে তবে এতে আমার কিছু আসে যায় না। ইসরায়েলি দখলদারিত্ব আমার পছন্দ না।
প্রসঙ্গত, ইসরায়েল একমাত্র দেশ যেখানে প্রাপ্ত বয়স্ক সব নাগরিকের জন্যই সেনা প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক৷ সুতরাং দেশটিতে যতজন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক সেনাসদস্যও এক অর্থে ততজন৷ সেনাপ্রশিক্ষণও স্বল্পমেয়াদি হয় না৷ সব প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেকে ৩ বছরের এবং মেয়েকে অন্তত ২ বছরের প্রশিক্ষণ নিতে হয়৷
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইহুদিদের অবস্থান
ইসরায়েলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে দেশটির মানুষের অবস্থান এই প্রথম নয়। চলতি বছরের মাঝামাঝি ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলের সহিংসতা বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানিয়েছেন দেশটির সাবেক এক শ’ সৈন্য।
সূত্র মতে, ইসরায়েলের বাধ্যতামূলক সামরিক দায়িত্ব পালন শেষ করা এই সাবেক সৈন্যরা চিঠিতে বলেন, ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা প্রতিরোধের ভার এখন গান্টজ ও বার-লেভের হাতে রয়েছে। চিঠিতে তারা পশ্চিম তীরে তাদের দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন।
সাবেক সৈন্যরা তাদের চিঠিতে বলেন, ‘আমরা হচ্ছি ওই সব সৈনিক যারা ফিলিস্তিনিদের অঞ্চলে দায়িত্ব পালন করেছি, আমরা দেখেছি কিভাবে সহিংসতার ঘটনা ঘটে।’
‘আমাদেরকে পাঠানো হয়েছে তাদের (ইহুদি বসতি স্থাপনকারী) রক্ষায় পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু তাদের রক্ষা করায় আমাদের কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই।’
চিঠিতে বলা হয়, ইহুদি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা সম্প্রতি চরমভাবে বাড়ছে। ইহুদি বসতি স্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনিদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি নষ্ট করছে ও পাথর ছুঁড়ছে, ফিলিস্তিনিদের শারীরিকভাবে হেনস্থা করছে। এছাড়া মানবাধিকারকর্মী ও ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ওপরও হামলা চালাচ্ছে বলে চিঠিতে জানানো হয়।
এদিকে প্রকাশিত এক গবেষণা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ইহুদিরা ইসরায়েলকে বর্ণবাদী রাষ্ট্রি হিসেবে উল্লেখ করেছে। যা দেশটিতে গঠিত নতুন সরকারের পররাষ্ট্রনীতির জন্য বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। সূত্র মতে, যুক্তরাষ্ট্রের ৩৪ শতাংশ ইহুদি মনে করেন ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের আচরণ আমেরিকার বর্ণবাদের মতই।
জরিপে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ২৫ শতাংশ ইহুদির চোখে ইসরায়েল একটি ‘বর্ণবাদী রাষ্ট্র’। এ ছাড়া ২২ শতাংশ মনে করেন ফিলিস্তিনে গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল।
ইসরায়েল সেনাবাহিনীতে নারীরা
ইসরায়েল সেনাবাহিনীতে নারী সহকর্মীদের ওপর যৌন হয়রানির ঘটনা বেড়েছে। বিগত কয়েক বছরের চেয়ে ২০২০ সালে এ যৌন হয়রানির পরিমাণ ২৪ শতাংশ বেড়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
এ নিয়ে ইসরায়েল সেনাবাহিনীর জেন্ডার অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজর চিফ অব স্টাফ বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ইয়াফাত ইয়েরুশালমি একটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছেন।
এতে দাবি করা হয় ২০২০ সালে ইসরায়েল মিলিটারি পুলিশে ১৫৪২টি যৌন হয়রানির ঘটনা ঘটেছে। যা গত কয়েক বছরের চেয়ে ২৪ শতাংশ বেশি।
বিভিন্ন ইসরায়েলি সংবাদ মাধ্যমের বরাত দিয়ে বলা হয়, ২০১২ সাল থেকে প্রতি বছর এ যৌন হয়রানির ঘটনা বাড়ছে। কয়েকটি ঘটনায় নারীরা আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন।
এসডব্লিউ/এসএস/১২৪৪
আপনার মতামত জানানঃ