পাকিস্তানের জয় উদযাপন করায় এবার আগ্রার একটি কলেজ থেকে তিন কাশ্মীরি পড়ুয়াকে বহিষ্কার করা হল। ধৃতদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা হবে বলে জানিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।
অভিযোগ করা হয়, ওই তিন পড়ুয়া ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের জয়ে হোয়াটসঅ্যাপে স্টেটাস দিয়েছিল। সেগুলি নজরে পড়তেই দ্রুতই ব্যবস্থা নেয় কলেজের আইনশৃঙ্খলা কমিটি।
অভিযুক্ত জম্মু ও কাশ্মীরের পড়ুয়ারা হলেন আরশাদ ইউসুফ, ইনায়েত আলতাফ শেখ, শওকত আহমেদ। তারা আগ্রার বিচপুরীর রাজা বলবন্ত সিং ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনিক্যাল ক্যাম্পাস কলেজের পড়ুয়া। জানা যায় হোস্টেলের ডিন ডক্টর দুষ্যন্ত সিং একটি নোটিশ জারি করে পড়ুয়াদের বহিষ্কার করার কথা জানিয়েছেন।
পাশাপাশি ওই পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে জগদীশপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে স্থানীয় বিজেপির যুব শাখা। এর আগে কাশ্মীরের দু’টি মেডিক্যাল কলেজের কয়েকজন পড়ুয়ার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী ইউএপিএ-তে মামলা করেছে পুলিস। তাদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের জয়ে উচ্ছ্বাস ও ভারত বিরোধী স্লোগান দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচে ভারতকে ১০ উইকেটে হারিয়ে দেয় পাকিস্তান। অভিযোগ, পাকিস্তানের জয়ে উত্তরপ্রদেশের আগ্রার রাজা বলবন্ত সিংহ কলেজের কয়েক জন পড়ুয়া উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়। গত সোমবার চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়া শওকত আহমেদ এবং তৃতীয় বর্ষের দুই পড়ুয়া আরশাদ ইউসুফ, ইনায়েত আলতাফ শেখকে সাসপেন্ড করেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। বুধবার তাদের গ্রেফতার করে পুলিশ।
এর মধ্যে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ টুইট করে ঘোষণা করেছেন, পাকিস্তানের জয়ে যারা উল্লাস প্রকাশ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার ধারায় মামলা দায়ের করা হবে।
সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে আগ্রার পুলিশ সুপার বলেছেন, ‘‘ম্যাচ শেষ হওয়ার পর ঘটনাটি জানাজানি হয়। সেখানে দেশ বিরোধী স্লোগান দেওয়া হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। আমরা এই বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তার ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের করে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’ একই অভিযোগে বরেলি থেকে তিন জন এবং লখনউ থেকে এক জনকে গ্রেফতার করেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ।
অন্য দিকে পাকিস্তানের হয়ে স্লোগান দেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়তেই রাজা বলবন্ত সিংহ কলেজের সামনে জড়ো হয় বিজেপি ও অন্যান্য হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। তারা কলেজের গেটের বাইরে পাকিস্তান বিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। এলাকায় মোতায়েন পুলিশের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি হয়।
পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত কাশ্মীরি পড়ুয়াদের লোহামান্ডির জগদীশপুরা থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। আজ বৃহস্পতিবার তাদের আদালতে তোলা হবে।
এর আগে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তান জেতায় উল্লাস করতে দেখা গিয়েছিল দেশটির ডাক্তারি পড়ুয়াদের মধ্যেও। আর তাই বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন বা ইউএপিএ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে কাশ্মীরের দুটি মেডিক্যাল কলেজের পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে। জানা গিয়েছে দুটি পৃথক ঘটনার প্রেক্ষিতে দুটি মামলা রুজু করেছে কাশ্মীর পুলিশ।
জানা যায়, মামলায় নির্দিষ্ট কোনও পড়ুয়ার নাম নেই। দুটি মেডিক্যাল কলেজের হোস্টেলে বসাবসরত পড়ুয়াদের নামে মামলা করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া চলছে।
সূত্র মতে, সৌরাতে অবস্থিত এসকেআইএমএস হাসপাতালের হোস্টেল ও শ্রীনগরে গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হোস্টেলে পড়ুয়ারা পাকিস্তানের জয়ে মেতে ওঠেন। পাশাপাশি ভারত বিরোধী বিভিন্ন স্লোগানও তোলেন তারা। যেসব পড়ুয়াদের চিহ্নিত করা হবে এবং মামলায় যাদের নাম অন্তর্ভুক্ত হবে, তারা ভবিষ্যতে ভারত বা জম্মু-কাশ্মীর সরকারের কোনও পদে চাকরির জন্য আবেদন জানাতে পারবেন না।
এর আগে ভারত-পাক ম্যাচ ঘিরে উত্তেজনার খবর মিলেছিল পঞ্জাবের সাংরুরে ভাই গুরু দাস ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজিতে। সেখানে বেশ কয়েকজন কাশ্মীরি ছাত্রের ওপর হামলা হয় বলে অভিযোগ ওঠে। তাদের হোস্টেলের কক্ষে হামলা করা হয়।
জানা যায়, হামলাকারীদের অধিকাংশই পঞ্জাবে বসবাসরত উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের পড়ুয়া। আক্রান্ত এক ছাত্র হামলার লাইভ স্ট্রিমও করেন ফেসবুকে। তাতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের উপর রড ও লাঠি দিয়ে হামলা করা হয়।
বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন যে তারা কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে এই হামলা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন এবং তাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হবে। এই হামলার ঘটনায় অন্তত ছয় কাশ্মীরি ছাত্র জখম হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৫২৮
আপনার মতামত জানানঃ