বাংলাদেশের আকাশ ব্যবহার করছে ভারত— যেন দেশ ভাগ হলেও আকাশ ভাগ হয়নি। নিয়মিতভাবে দেশের আকাশ ব্যবহার করছে ভারতের অভ্যন্তরীণ রুটের বেশ কয়েকটি ফ্লাইট। মূলত ভারতের কলকাতা, দিল্লি থেকে শিলং, মনিপুর (ইম্পাল বিমানবন্দর), গুয়াহাটি ও আগরতলার ফ্লাইটগুলো বাংলাদেশের আকাশ ব্যবহার করছে। বাংলাদেশের আকাশ ব্যবহার না করলে গন্তব্যে পৌঁছাতে তাদের দুই থেকে তিনগুণ সময় বেশি লাগত।
একটি দেশের অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইট অন্য দেশের ওপর দিয়ে যাওয়ার বিষয়টি ‘বিরল’ হলেও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এ সুযোগ নিচ্ছে ভারত।
নির্ভরযোগ্য সূত্র মতে, বর্তমানে ঢাকার আকাশ ব্যবহার করে প্রতিদিন ভারতের অভ্যন্তরীণ রুটের ৯০ থেকে ১০০টি ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে। এভিয়েশনের ভাষায় একে ‘ওভারফ্লাই’ (ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়া) বলে। আগে দৈনিক ১০টির মতো ফ্লাইট বাংলাদেশের আকাশ ব্যবহার করত। এখন দিনদিন ভারতের ফ্লাইটের সংখ্যা বাড়ছে।
ঢাকার এটিসি সূত্র আরও জানায়, ভারতের কলকাতা থেকে গ্যাংটক, শিলং ও আসামের আকাশপথ ব্যবহার করে গুয়াহাটির দূরত্ব দাঁড়ায় প্রায় ১০১৮ কিলোমিটার। সময় লাগার কথা আড়াই ঘণ্টার মতো। তবে বাংলাদেশের আকাশ ব্যবহার করে এ রুটে মাত্র সোয়া এক ঘণ্টায় গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন ভারতের যাত্রীরা।
বাংলাদেশ ব্যবহারে তাদের আকাশপথের দূরত্ব কমে এসেছে অন্তত ৫১৯ কিলোমিটার। এ রুটে প্রতিদিন স্পাইস জেটের তিনটি ফ্লাইট, ইন্ডিগো এয়ারের ১০টি, এয়ার ইন্ডিয়ার সাতটি, ভিস্তারা এয়ারলাইন্সের পাঁচটি, গো ফার্স্ট এয়ারলাইনের চারটি এবং এয়ার এশিয়া ইন্ডিয়ার দুটি ফ্লাইট চলাচল করছে।
কলকাতা থেকে আগরতলার দূরত্ব ১৫৪৭ কিলোমিটার। কিন্তু বাংলাদেশের আকাশ ব্যবহারের ফলে দূরত্ব কমেছে অন্তত ৩৩০ কিলোমিটার। এ রুটে প্রতিদিন ইন্ডিগো এয়ারের সাতটি ও এয়ার ইন্ডিয়ার দুটি ফ্লাইট চলাচল করছে। কলকাতা থেকে মনিপুরের রাজধানী ইম্পালে প্রতিদিন এয়ার ইন্ডিয়ার আটটি, ইন্ডিগো এয়ারের সাতটি, এয়ার এশিয়া ইন্ডিয়ার দুটি ফ্লাইট চলাচল করছে। ১৫০৭ কিলোমিটারের এ রুটে অর্ধেকেরও কম অর্থাৎ মাত্র ৬২০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়েই ফ্লাইটগুলো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে।
বাংলাদেশে কর্মরত স্পাইস জেটের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগে আগরতলা হয়ে দিল্লির সর্বনিম্ন ভাড়া ছিল ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা, আগরতলা-চেন্নাই ফ্লাইটের ভাড়া বাংলাদেশি টাকায় ছিল ২০ থেকে ২২ হাজার। বর্তমানে আকাশপথের দূরত্ব কমে যাওয়ায় দিল্লি যেতে পাঁচ থেকে ছয় হাজার এবং চেন্নাই যেতে ১১ থেকে ১২ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। ফলে ভারতের যাত্রীরা যেমন লাভবান হচ্ছেন, তেমনি বাংলাদেশও উপকৃত হচ্ছে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তৌহিদ-উল আহসান বলেন, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রতি মাসে ভারতের ২৫০০ থেকে ৩০০০টি অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট ওভারফ্লাই করছে। এছাড়া এশিয়া ও ইউরোপের অসংখ্য যাত্রীবাহী ও কার্গো ফ্লাইট বাংলাদেশের আকাশপথ ব্যবহার করছে। এজন্য তাদের নির্দিষ্ট অঙ্কের চার্জ দিতে হয়। ফলে বাংলাদেশের রাজস্ব বাড়ছে। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার সম্পর্কও উন্নত হচ্ছে।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের আকাশ ব্যবহারের জন্য ভারতের প্রতিটি ফ্লাইটকে ১৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ মার্কিন ডলার করে ওভারফ্লাই চার্জ গুনতে হয়। টাকার অঙ্কে বছরে দাঁড়ায় প্রায় ৯০ কোটি। কোনো বিনিয়োগ বা পরিশ্রম ছাড়াই সমুদয় অর্থ সরাসরি সরকারের রাজস্ব খাতে জমা হচ্ছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, বাংলাদেশের ওপর দিয়ে প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ ফ্লাইট চলাচল করে। এর মধ্যে অধিকাংশই পূর্ব এশিয়া থেকে দক্ষিণ এশিয়া এবং ইউরোপে যাওয়ার ফ্লাইট। দূরত্ব কমানোর জন্য তারা বাংলাদেশের আকাশপথ ব্যবহার করে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও এমন নিয়ম আছে। তবে, একটি দেশের অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইট অন্য দেশের ওপর দিয়ে যাওয়ার ঘটনা বিরল। ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশের এমন সৌভাগ্য হয়েছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৫৪২
আপনার মতামত জানানঃ