বিশ্বের অন্যতম শান্তিপূর্ণ দেশ নরওয়ের রাজধানী অসলোর সুপারমার্কেটে এক ব্যক্তি তীর ও ধনুক দিয়ে হামলা চালিয়েছে। এতে পাঁচজন নিহত ও দুজন আহত হন। স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় দেশটির কংসবার্গ প্রদেশের ‘কুপ এক্সট্রা’ সুপারমার্কেটে এই ঘটনা ঘটেছে। আহত দুইজনের একজন ওই সুপারমার্কেটেরই কর্মী, অন্যজন একজন পুলিশ কর্মকর্তা।
এই ঘটনায় ৩৭ বছর বয়সী এক ডেনিশ নাগরিককে আটক করেছে পুলিশ, তবে তার পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে। কেন সে হামলা চালালো, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এর সঙ্গে কোনো জঙ্গি গোষ্ঠীর সম্পর্ক আছে কি না, তা-ও এখনো স্পষ্ট নয়। তাকে আটক করার সময় হামলাকারী ও পুলিশের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
তবে নরওয়ের পুলিশ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, তাদের ধারণা, ওই ব্যক্তির পিছনে কোনো গোষ্ঠী নেই। কিন্তু কেন সে এমন হামলা চালালো, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলে পৌঁছেই পুলিশ সাধারণ মানুষকে নিরাপদ দূরত্বে সরে যাওয়ার জন্য আর্জি জানাতে থাকে। পুলিশ সশস্ত্র অবস্থায় এসেছিল বলে জানা গেছে। সাধারণত স্ক্যানডেনেভিয়ার দেশগুলিতে পুলিশ প্রয়োজন ছাড়া সশস্ত্র অবস্থায় রাস্তা নামে না।
স্থানীয় পুলিশ জানিয়েছে, দেশটির রাজধানী অসলো থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে কংসবার্গ নামে শহরে এই হামলায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, বুধবার (১৩ অক্টোবর) স্থানীয় সময় সাড়ে ৬টার দিকে এ হামলার ঘটনা ঘটে। দেশটির পুলিশ প্রধান ওয়েভিন্দ আস জানিয়েছেন, এক ব্যক্তিকে একাই এ হামলা চালাতে দেখা গেছে। হামলার উদ্দেশ্য সম্পর্কে এখনও জানা যায়নি। তবে তিনি আর অন্য কোনও অস্ত্র ব্যবহার করেছেন কিনা তা নিয়েও তদন্ত চলছে।
নিহতদের মধ্যে একজন পুলিশ কর্মকর্তাও রয়েছেন। যিনি ঘটনার সময় ছুটিতে ছিলেন এবং বাজার করতে বেরিয়েছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, আহতদের স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
দেশটির রাজধানী অসলো থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে কংসবার্গ নামে শহরে এই হামলায় সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
খবরে বলা হয়েছে, কংসবার্গ শহরের পশ্চিমে একটি সুপার মাকের্টে এলোপাতারি তীর ছুড়েছে। পরে সে শহরের বাইরে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে আটক করা হয়। পুলিশ ওই শহরের বড় একটি অংশ ঘিরে রেখেছে। ওই এলাকার বাসিন্দাদের বাইরে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
ঘটনাস্থলে ডজনেরও বেশি অ্যাম্বুলেন্স, পুলিশ কার, হেলিকপ্টারসহ জরুরি সেবার গাড়ি দেখা গেছে বলে খবরে বলা হচ্ছে।
কংসবার্গ শহরের পশ্চিমে কুপ এক্সট্রা নামের সুপারমার্কেটের ভেতর ওই ড্যানিশ ব্যক্তি হামলা চালান। হামলায় আহতদের মধ্যে একজন অফ-ডিউটিতে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন।
নিজেদের দোকানের ‘ভয়াবহ ঘটনা’ সম্পর্কে কুপ এক্সট্রার এক মুখপাত্র জানান, তাদের কোনো কর্মী ওই হামলায় আহত হননি।
খবর পেয়ে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছার পর হামলাকারীর সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি হয়। পৌনে ৭টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর হামলাকারীকে ড্রামেন শহরের একটি থানায় নেয়া হয়।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে একজন স্থানীয় সংবাদমাধ্যম টিভিটুকে জানান, সুপারমার্কেটে কেনাকাটার একপর্যায়ে গণ্ডগোলের শব্দ পান তিনি। এক নারীকে ওই সময় আত্মরক্ষা করতে দেখেন তিনি। এরপরই মার্কেটটির এক কর্নারে কাঁধে তীরসহ তূণীর ও ধনুক হাতে এক ব্যক্তিকে দেখা যায়।
তিনি বলেন, ‘ওই ব্যক্তিকে দেখে প্রাণ বাঁচাতে মানুষজনকে এদিক-ওদিক দৌড়াতে দেখি। তাদের মধ্যে শিশু হাতে এক নারীও ছিল।’
ঘটনার সময় হামলাকারী অন্য কোনো অস্ত্র ব্যবহার করেছিল কি না, তা পুলিশ খতিয়ে দেখছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
নরওয়ের বিচারমন্ত্রী মনিকা মেল্যান্ড ঘটনাটি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, নরওয়ের পুলিশ সাধারণ অস্ত্রবিহীন থাকে। তবে জরুরি প্রয়োজনে তাদের রাইফেল এবং গান ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে। এই ঘটনার বলে পুলিশ সদর দফতর থেকে জরুরি ঘোষণা দিয়ে সারাদেশে পুলিশ কর্মকর্তাদের অস্ত্র বহনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই দেশের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধানমন্ত্রী শোকপ্রকাশকরেছেন। দুইজনেই ঘটনাটিকে মর্মান্তিক বলে ব্যাখ্যা করেছেন। তবে এখনো পর্যন্ত কেউই ঘটনাটিকে সন্ত্রাসী হামলা বলে ব্যাখ্যা করেনি।
নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী এরনা সোলবার্গ জানান, হামলার ওই ঘটনা ‘আতঙ্কজনক’।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘অনেক মানুষ এই ঘটনায় ভয় পেয়েছে, তা বুঝতে পারছি। তবে তাদের এটি জানা জরুরি, দেশের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’
ঠিক ১০ বছর আগে নরওয়েতে আরো একটি হামলার ঘটনা ঘটেছিল। তাতে ৭৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪২৩
আপনার মতামত জানানঃ