সৌদি নারীদের ওপর থেকে গাড়ি চালানোর নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়েছে, যা ২০১৮ সালের জুন থেকে কার্যকর হয়। তাই, সে দেশের নারীদের গাড়ি চালানোতে আর কোনো বাধা না থাকায় এখন থেকে নারীরা হতে পারছেন উবার ড্রাইভার। বছর কয়েক আগেও উবারের সব ড্রাইভারই ছিল পুরুষ। এখন দেশটিতে পুরুষের পাশাপাশি বাড়ছে নারী উবার চালকও। বৈশ্বিক রাইড শেয়ারিং সেবা উবারের চালক হিসেবে সৌদি আরবের নারীর অংশগ্রহণ এক বছরে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। রাইড শেয়ারিং কোম্পানি উবার এই তথ্য জানিয়েছে। আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে এই খবর জানা যায়।
আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, নারী চালক ও যাত্রীদের উৎসাহ দিতে সৌদি আরবে উবার সুনির্দিষ্ট নীতিমালা হাতে নেয়। এতে সৌদি নারীদের মধ্যে বৈশ্বিক ওই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।
সৌদি আরবের নারী চালক এবং নারী যাত্রীদের জন্য এটি একটি সহজলভ্য প্লাটফর্ম। নারীদের গাড়ি চালনায় উৎসাহ দিতেই ‘উইমেন প্রেফার্ড ভিউ’ নীতি চালু করেছে উবার। এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যেগ। এই নীতির মাধ্যমে দেশটির নারী উবার চালকরা যাত্রী হিসেবে শুধু নারীদেরই নিতে পারবেন। এই উদ্যোগের ফলে সৌদি আরবে শুধু নারী চালকের সংখ্যাই বাড়েনি, পাশাপাশি এক বছরে গড়ে নারী যাত্রী পরিবহনের হারও ৭৯ শতাংশ বেড়েছে।
উবার দুই বছর আগে ‘নারী পছন্দসই ভিউ’ এনেছিল নারী চালকদের জন্য। জনপ্রিয় এই রাইড শেয়ারিং কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়, রক্ষণশীল এই দেশটিতে নারীদের চালক হিসাবে গাড়ি চালানো ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
উবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, উবারে বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার আনা হয়েছে নারীদরে খণ্ডকালীন অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি, তাদের কর্মস্থল ও সাধারণ যোগাযোগকে আরও সহজলভ্য করতে।
উবার দুই বছর আগে ‘নারী পছন্দসই ভিউ’ এনেছিল নারী চালকদের জন্য। জনপ্রিয় এই রাইড শেয়ারিং কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়, রক্ষণশীল এই দেশটিতে নারীদের চালক হিসাবে গাড়ি চালানো ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
সৌদি আরবে উবারের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ গাজ্জাজ ওই নীতির সাফল্যকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি নারীদের আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে গাড়ি চালানো নিয়ে আমরা কয়েক মাস ধরে গবেষণা করি। আমরা এমন এক উদ্যোগ গ্রহণ করতে চেয়েছি, যা সৌদি নারীদের জীবনে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনবে।’
তিনি বলেন, ‘অংশগ্রহণমূলক অর্থনৈতিক সুবিধা দেয়ার মাধ্যমে শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যকে আমরা সমর্থন করি। এ ছাড়া কর্মস্থলে সাশ্রয়ী মূল্যে নারীরা যাতে পৌঁছাতে পারে সেদিকেও আমরা লক্ষ্য রাখি।’
অতীতে সৌদিতে নারীদের খেলাধুলা অনৈতিক কাজের অংশ হিসেবে দেখতো রক্ষণশীলরা। এখন সময় বদলেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সৌদির নারীরাও রাজপথে সাইকেল চালাতে পারছেন। আর জেদ্দা শহরে এই দৃশ্য এখন স্বাভাবিক।
সব প্রতিকূলতা পেছনে ফেলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সৌদির নারীরাও এগিয়ে চলছেন। বর্তমানে সৌদি আরবের নারীদের সাইকেল চালানোর ঘটনা চোখে পড়ার মতো। সৌদির কঠিন শাসন উপেক্ষা করেই এই দুই চাকার বাহন নিয়ে ছুটে চলছেন নারীরা।
সৌদি আরবে গত কয়েকবছর ধরে নারী অধিকারসহ নানা বিষয়ে সংস্কারকাজ চলছে৷ ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মেদ বিন সালমানের সংস্কার কর্মসূচি ‘ভিশন ২০৩০’ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সৌদি নারীরা বিভিন্ন সুবিধা পাচ্ছেন৷ গাড়ি চালানো থেকে শুরু করে সৌদি নারীরা পুরুষ সঙ্গীর অনুমতি ছাড়াই ব্যবসা শুরু করতে পারছেন৷ কর্মক্ষেত্রে সৌদি নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোরও পরিকল্পনা করা হয়েছে৷ ২০৩০ সালের মধ্যে মোট জনশক্তির এক তৃতীয়াংশ নারী করতে চায় দেশটি৷ এ সব ছাড়াও সম্প্রতি প্রথম নারী রেস্তোরাঁ মালিক, প্রথম নারী পশু চিকিৎসক, প্রথম নারী ট্যুর গাইড পেয়েছে সৌদি আরব৷
২০১৭ সালের পর সৌদির পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে। যুবরাজ সালমান দেশটির সামাজিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনায় আগের চেয়ে স্বাধীনভাবে চলতে ফিরতে পারছেন নারীরা। ২০১৭ সালের আগে সৌদিতে নারীদের সাইকেল চালানোর কথা যেখানে ভাবাই যেতো না।
২০১৮ সালে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয় দেশটি। ফলে গাড়ি চালাতে সৌদি নারীদের আর কোনো পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি নিতে হবে না। এছাড়া গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পাচ্ছেন তারা।
ওজন ও উচ্চতার শর্ত পূরণ করে নারীরা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে পারবে। তবে অন্তত উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করা লাগবে তাদের।
২০২০ সালে সৌদি আইন মন্ত্রণালয় ১০০ নারীকে পাবলিক নোটারি হিসেবে নিয়োগ দেয়। চলতি বছর জানুয়ারিতে ঘোষণা দেওয়া হয়, শিগগিরই আদালতে নারী বিচারকও নিয়োগ দেওয়া হবে।
গত ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো নারী বিমানবালা নিয়োগ দেয় সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস। দেশটিতে নারী যাত্রীদের সেবার জন্য ৫০ জন বিমানবালা নিয়োগ করা হয়।
সৌদি আরবকে আরও আধুনিক, উদার এবং ব্যবসা ও পর্যটনবান্ধব করতে ২০১৬ সালে ‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণা করেছিলেন ক্রাউন প্রিন্স মোহামেদ বিন সালমান৷ এরপর বেশ কিছু আইনে পরিবর্তন করা হয়৷ ফলে সেদেশের নারীরা এখন গাড়ি চালানো, একা সিনেমা হলে যাওয়া, ঘুরতে যাওয়াসহ নানান কাজ করতে পারছেন৷
সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলোও ভিশন ২০৩০ এর অংশ বলে বিবেচনা করা যেতে পারে৷ এমনও কথা শোনা যাচ্ছে, সেখানে অ্যালকোহল পান বিষয়ে সীমিত পরিসরে হলেও অনুমোদন দেয়া হতে পারে৷
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কট্টর রক্ষণশীল দেশ হিসেবে পরিচিত সৌদি আরব দেরি হলেও নিজেদের বুঝতে পারার চেষ্টা করছে। উবার চালানো, সাইকেল চালানো সৌদি নারীদের জন্য যুগান্তকারী এক ব্যাপার বটে। বিশ্বের অন্যান্য স্বাধীন নারীদের মতো সৌদি আরবের নারীরাও নিজেদের স্বাধীনতা ফিরে পাবেন এমন প্রত্যাশা লক্ষণীয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪২২
আপনার মতামত জানানঃ