বিশ্বজুড়ে স্তন ক্যান্সার অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বে প্রতি আট জনে অন্তত একজন নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউটের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশেও প্রতি বছর দেড় লাখের বেশি মানুষ স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন।
এবার স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে আশার আলো দেখাচ্ছে গবেষেণা ভিত্তিক বায়োফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, তাদের আবিষ্কৃত একটি ওষুধ স্তন ক্যান্সারে প্রচলিত চিকিৎসার পদ্ধতির চেয়ে ৭২ শতাংশ বেশি কার্যকর। তাদের ওষুধ রোগীর শরীরে প্রয়োগ করলে মৃত্যুর ঝুঁকি এবং রোগটির ছড়িয়ে পড়া অনেকাংশেই কমে যায়।
ব্রিটিশ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিটি দাবি করছে, স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে তাদের ‘এনহার্টু’ ট্রায়ালে যুগান্তকারী ফলাফল দেখা গেছে। রোগীকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এটি শক্তিশালী প্রমাণ দিয়েছে।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে জানা গেছে, অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই এনহার্টু ট্রায়ালে এশিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, ওশেনিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার অন্তত ৫০০ রোগীকে পর্যবেক্ষণের আওতায় আনা হয়।
ট্রায়ালে অংশ নেওয়া রোগীদের মধ্যে ৭৫ শতাংশের শরীরেই স্তন ক্যান্সার আর বাড়তে পারেনি। সেই তুলনায় ট্রাস্টুজুমাব এমটানসাইন (টি-ডিএম১) নামে প্রচলিত চিকিৎসা পদ্মতিতে মাত্র ৩৪.১ শতাংশের শরীরে এমন সাড়া মিলেছে। এনহার্টু পদ্মতিতে রোগটি না বাড়ার সময়সীমা ৭.২ মাস থেকে ২৫.১ মাসে উন্নীত হয়েছে।
তিন ধাপের এই ট্রায়ালে অংশ নেওয়ার ১২ মাস পর অ্যাস্ট্রাজেনেকার এনহার্টু গ্রহণ করা রোগীদের মধ্যে ৯৪.১ শতাংশ বেঁচে ছিলেন। আর ট্রাস্টুজুমাব এমটানসাইন গ্রহণ করাদের মধ্যে বেঁচেছিলেন ৮৫.৯ শতাংশ।
ট্রায়ালের ফলাফলের কথা জানিয়ে অ্যাস্ট্রাজেনেকার অঙ্কোলজি বিভাগের নির্বাহী উপ-প্রধান সুসান গ্যালব্রেইথ বলেছেন, ‘এই ফল যুগান্তকারী।’
মূলত স্তনের কিছু কোষ অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেলে, ওই অনিয়মিত ও অতিরিক্ত কোষগুলো বিভাজনের মাধ্যমে টিউমার বা পিণ্ডে পরিণত হয়। সেটি রক্তনালীর লসিকা (কোষ-রস) ও অন্যান্য মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। এই ছড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাই ক্যান্সার।জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইন্সটিটিউটের হিসাব অনুযায়ী দেশে প্রতি বছর দেড় লাখের বেশি মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে ১৫ লক্ষাধিক নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন এবং প্রতি লাখে ১৫ জন নারী মারা যান। আমাদের দেশে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে (ক্যান্সার রেজিস্ট্রি) স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত নারীদের সংখ্যা রেকর্ড করা না হলেও, পার্শ্ববর্তী দেশের তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যায়, প্রতিবছর প্রায় ৩০ হাজার নারী নতুন করে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে সাত হাজার মানুষ এ রোগে মারা যান।
উন্নত বিশ্বে অধিকাংশ নারী ৫০ বছরের কাছাকাছি বয়সে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, আমাদের দেশেও ৪০ শতাংশেরও বেশি নারী ৫০ বছর বয়সে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।
তবে, উন্নত দেশে নারীরা স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে (স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে) ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে এবং চিকিৎসা নিয়ে থাকেন যা তাদের জীবন বাঁচাতে সাহায্য করে। তবে আমাদের দেশে অধিকাংশ নারী স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতার অভাব, সামাজিক ও ধর্মীয় কারণে শেষ পর্যায়ে (চতুর্থ পর্যায়) ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে থাকেন, যখন রোগীকে আর কোনোভাবেই বাঁচানো সম্ভব হয়না।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মাসে একবার অন্তত স্তন পর্যবেক্ষণ করে কোনো অস্বাভাবিকতা আছে কি তা লক্ষ্য করা উচিৎ। প্রাথমিক অবস্থায় অস্বাভাবিকতা ধরা পড়লে এর নিরসন সম্ভব হয়। তবে এখন, অ্যাস্ট্রাজেনেকার সাফল্য বিশ্বজুড়ে স্তন ক্যান্সারের তীব্রতা ও মৃত্যু কমিয়ে আনবে বলেও মনে করছেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৪২৭
আপনার মতামত জানানঃ