অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজের ছয় মাস পর তৃতীয় ডোজ করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত কার্যকরী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। গতকাল সোমবার অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির একটি গবেষণায় এমনটি বলা হয়েছে। অবশ্য গবেষণাটি এখনো পিয়ার রিভিউ করা হয়নি।
গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের মধ্যে ৪৫ সপ্তাহের বিরতি দিলে অ্যান্টিবডি উৎপাদন বাড়ে। আর দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ছয় মাস পর তৃতীয় ডোজ যথেষ্ট পরিমাণে অ্যান্টিবডি বৃদ্ধি করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নয়ন ঘটাতে সহায়তা করে।
ব্রিটিশ-সুইডিশ ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার সঙ্গে যৌথভাবে করোনার টিকা উদ্ভাবন করেছে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা ভারতে ‘কোভিশিল্ড’ নামে উৎপাদন করছে দেশটির সেরাম ইনস্টিটিউট। সেরাম ইনস্টিটিউট বিশ্বের সর্ববৃহৎ টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান।
মুদ্রণের অপেক্ষায় থাকা গবেষণাটির প্রধান গবেষক অ্যান্ড্রু পোলার্ড বলেন, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার সরবরাহে ঘাটতিতে থাকা দেশগুলো, বিশেষ করে যাঁরা দ্বিতীয় ডোজ পাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন, তাঁদের জন্য এ গবেষণার ফলাফল আশ্বস্ত হওয়ার মতো সংবাদ হওয়া উচিত।
অ্যান্ড্রু পোলার্ড আরও বলেন, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ থেকে দ্বিতীয় ডোজের ব্যবধান ১০ মাস হলেও তা দুর্দান্ত প্রতিরোধ ক্ষমতা দেখায়।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে গণটিকাদান কর্মসূচি চালু করা হয়। সেরাম থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা আনার বিষয়ে চুক্তি হয়েছিল। চুক্তি অনুযায়ী ছয় মাসে এসব টিকা আসার কথা ছিল। তবে সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে দুই চালানে মোট ৭০ লাখ টিকা পায় বাংলাদেশ। তার বাইরে ভারত সরকারের উপহার হিসেবে পাওয়া যায় ৩৩ লাখ ডোজ টিকা। করোনার সংক্রমণ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ায় গত মার্চে টিকা রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করে ভারত। এতে বাংলাদেশ এই টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছে। ইতিমধ্যে যাঁরা এই টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে প্রায় কয়েক লাখ মানুষের দ্বিতীয় ডোজ পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
অক্সফোর্ডের গবেষকেরা বলছে, করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটিকে দীর্ঘায়িত করতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৃতীয় বুস্টার ডোজের দরকার হবে। গবেষণার ফল বলছে, দ্বিতীয় ডোজের পর বিলম্বিত তৃতীয় ডোজ দারুণ কাজ করে।
গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রথম অনুমোদন দেয় যুক্তরাজ্য। পরে ভারত, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই টিকার অনুমোদন দেয়। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। বর্তমানে বিশ্বের অন্তত ১৬০টি দেশে এই টিকা ব্যবহৃত হচ্ছে।
স্মার্টফোনেই করা যাবে করোনা পরীক্ষা
করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে করোনা পরীক্ষা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বর্তমানে করোনা পরীক্ষার যে পদ্ধতিগুলো প্রচলিত তা বেশ সময় আর ব্যয় সাপেক্ষ। তবে স্মার্টফোনের সাহায্যে করোনা শনাক্তের এক পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের একদল বিজ্ঞানী।এই পদ্ধতি গরিব দেশগুলোর জন্য যুগান্তকারী আবিষ্কার বলে মনে করা হচ্ছে।
স্মার্টফোন থেকে করোনা পরীক্ষার পদ্ধতির নাম দেওয়া হয়েছে ফোন স্ক্রিন টেস্টিং মেথড বা সংক্ষেপে পোস্ট মেথড। আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে যেমন মানুষের লালারস পরীক্ষা করা হয়, এক্ষেত্রে স্মার্টফোনের স্ক্রিনের থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন এই নিয়ে এক গবেষণা চালায়। একদল মানুষ যাদের আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করা হয়েছে তাদের সবার মোবাইলের স্ক্রিন থেকে নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছিল। দেখা গেছে, আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় যারা পজিটিভ হয়েছেন, তাদের প্রত্যেকেরই পোস্ট মেথডে পজিটিভ এসেছে।
কিভাবে এই করা হয় পরীক্ষা সেই প্রশ্ন উঠতে পারে? এক্ষেত্রে স্মার্টফোনের স্ক্রিন থেকে পাওয়া ‘সোয়াব’ লবণাক্ত পানিতে মেশানো হয়। এরপর আরটি-পিসিআর টেস্টের মতোই পরীক্ষা করে দেখা হয়। পোস্ট পরীক্ষায় সাফল্য এসেছে আরটি-পিসিআরের মতোই।
ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডনের ড. রড্রিগো ইয়ংয়ের নেতৃত্বে মোট ৫৪০ জনের ওপর এই পরীক্ষা করা হয়েছিল। এই প্রক্রিয়ায় খুব কম খরচে আর অল্প সময়েই পরীক্ষা করা যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩৫০
আপনার মতামত জানানঃ