তালিবানরা নারী স্বাধীনতা নিয়ে নিজেদের উদার করার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে ঘটছে তার উল্টোটা। আফগানিস্তানের নারী লাইটওয়েট বক্সার সিমা রেজাইকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে তারা। শেষ পর্যন্ত বাঁচার জন্য নিজের দেশ আফগানিস্তান ছেড়েছেন রেজাই।
লাইটওয়েট বক্সার সিমা রেজাই বলেন, তালিবানরা কাবুল দখলের পরও আমি কোচের কাছে অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু এরপর স্থানীয় কিছু লোক তালিবানকে জানিয়ে দেয়, ‘এই এলাকায় এক তরুণী থাকে, যার কোচ পুরুষ।’ এরপরই আমার কাছে তালিবানরা একটি চিঠি পাঠায়।
চিঠিতে তারা সরাসরি জানিয়ে দেয়, ‘যদি আমি অনুশীলন চালিয়ে যাই কিংবা আমেরিকায় গিয়েও বক্সিং করি তাহলে আমাকে মেরে ফেলা হবে।’
আফগানিস্তানের মহিলা বক্সিংয়ের জাতীয় দলের সদস্য রেজাই। ১৬ বছর বয়স থেকে তিনি অনুশীলন শুরু করেন। যদিও বিষয়টি তার বাবা পছন্দ করতেন না। তবুও কোচের অধীনে অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
কিন্তু এবার তালিবানের হুমকি পাওয়ার পর দেশ ছেড়েছেন এই বক্সার। কাতারের উদ্দেশে যাত্রা করেছেন তিনি। তারপর শুরু হবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার অপেক্ষা। ভিসা পেলেই উড়ে যাবেন আমেরিকা। তারপর সেখানেই পেশাদার বক্সিংয়ের কেরিয়ার শুরু করবেন।
গত শনিবার এক তালিবান মুখপাত্রকে দাবি করতে দেখা গেছে, তারা মোটেই হিংসাত্মক নয়। সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, আফগান নারীদের অধিকার রক্ষাতেও তারা সচেষ্ট। সব মিলিয়ে একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র গড়ার কথাই জানাচ্ছে তালিবান।
এদিকে তালিবানের ভয়ে তটস্থ দেশটির নারী আইনজীবী ও বিচারকরা। প্রাণ হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন অন্তত ২৫০ নারী বিচারক। সাবেক সরকারের আমলে তাদের রায়েই কারাবন্দি ছিলেন বহু মানুষ। যার বেশির ভাগই তালিবান সমর্থক ও সদস্য। বিজয়ের পর সেসব বন্দি মুক্তি পেয়েছে। এখন ‘বিনা অপরাধে’ জেল খাটার প্রতিশোধ নিতে চায় তারা। অবস্থা এমন, সামনে পেলেই হত্যা করবে। তাদের ভয়েই দেশ ছাড়তে চাইছেন এসব নারী বিচারক। গত কয়েক সপ্তাহে নারী বিচারকদের অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। কিন্তু বেশির ভাগ বিচারক সেই সুযোগ পাননি। তারা আফগানিস্তানেই রয়েছেন। অধিকারকর্মীদের বরাত দিয়ে রয়টার্স এ খবর দিয়েছে।
বিচার বিভাগে কর্মরত নারীরা ইতোমধ্যেই আক্রমণের বড় লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন। সুপ্রিমকোর্টের দুজন নারী বিচারককে জানুয়ারিতে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ইউরোপে পালানো এক উচ্চ পর্যায়ের একজন বিচারক বলেন, ‘এখন তালিবান দেশজুড়ে বন্দিদের মুক্তি দিয়েছে। যেটা ‘বাস্তবে নারী বিচারকদের জীবনকে বিপদের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।’ অজ্ঞাতবাস থেকে তিনি বলেন, ‘কাবুলে আমার বাসায় তালিবান সদস্যরা এসে জিজ্ঞেস করেছিল, বিচারক কোথায়। এদেরই আমি কারাদণ্ড দিয়েছিলাম।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, তালিবানরা কৌশলে আবারও আফগানিস্তানকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিচ্ছে। একে একে প্রত্যেক পেশার নারীকে কর্মচ্যুত করে ঘরবন্দি করে ফেলছে। এভাবে চলতে দিলে কিছুদিনের মধ্যেই আফগান নারীরা অন্ধকার যুগে ফিরে যেতে বাধ্য হবে। এ পরিস্থিতি রুখতে দ্রুত সময়ে বিশ্ব সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৪০৭
আপনার মতামত জানানঃ