কিছুই বদলায়নি তালিবান। দেশটিতে নারীদের প্রতি চরম বৈষম্যমূলক আচরণই বলে দিচ্ছে তালিবান আসলে তালিবানই রয়ে গেছে। সরকারে নারীদের কোনো অংশগ্রহণ না থাকা; নারীদের ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞা দেয়া; নারী অধিকার ক্ষুণ্ন করা; বিক্ষোভে নারীদের মারধর স্পষ্ট করে দিচ্ছে তালিবানের নীতিকে।
একই চিত্র ছিল ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে। তখনও আফগানিস্তানে তালিবানের শাসনকালে নারীদের অধিকারের বিষয়গুলো ক্ষুন্ন হওয়ার বিস্তর অভিযোগ আছে আন্তর্জাতিক মহলে।
গত ১৫ আগস্ট কাবুল দখলের মাধ্যমে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয় বর্তমান শাসকগোষ্ঠী তালিবান। তখন তালিবানের ভয়ে সেদেশ থেকে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে হাজার হাজার আফগান শরণার্থী।
কিন্তু বেশ কয়েকজন বৃদ্ধ বা অতিবৃদ্ধ শরণার্থীর সঙ্গে নাবালিকা স্ত্রী দেখে হতবাক মার্কিন কর্মকর্তারা। তাদের মধ্যে অনেকেরই বয়স মাত্র ১২ বছর। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইলের একটি প্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়েছে।
ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে আসতে মরিয়া হয়ে এই ‘বিত্তশালী’ বৃদ্ধদের সঙ্গে নাবালিকা কন্যার বিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে অনেক পরিবার। এদের অনেককেই আবার ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে বলে অভিযোগ।
কাতারের রাজধানী দোহায় আফগান শরণার্থীদের জন্য ‘ট্রানজিট ক্যাম্পে’ মার্কিন কর্মকর্তাদের কাছে এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি অভিযোগ জমা পড়েছে। আফগানিস্তান থেকে আসা ওই কিশোরীদের অনেকেই দাবি করেছে, দেশ ছেড়ে আসার বিনিময়ে তাদের ধর্ষিত হতে হয়েছে। ইতিমধ্যে এ ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
বার্তা সংস্থা এপির একটি প্রতিবেদনেও বলা হয়, অনেক আফগান শরণার্থী নাবালিকা স্ত্রী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে। কীভাবে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবে, তার উপায় খুঁজছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা।
এর আগে তালিবান মৃত নারীদের ধর্ষণ করেছে বলে দাবি করেন আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে আসা সাবেক আফগান নারী পুলিশ সদস্য। ওই নারী পুলিশ সদস্য নিজেকে মুসকান বলে পরিচয় দিয়েছেন। তার দাবি, তালিবান সদস্যরা ধর্ষণ করার সময় জীবিত বা মৃত কী না তা বাদ বিচার করত না।
এদিকে সম্প্রতি হিজাব না পরা নারীদের কাটা তরমুজের সঙ্গে তুলনা করেছেন এক তালিবান কর্মকর্তা। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা গিয়েছে, আপনারা কি কেউ কাটা তরমুজ কেনেন? নাকি পুরো তরমুজ কেনেন? অবশ্যই পুরোটা কেনেন। হিজাব না পরা মেয়েরা হল কাটা তরমুজ।
ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। এমনিতেই তালিবান ক্ষমতায় আসার পর ফতোয়া জারি হয়েছে, বাড়ির বাইরে বের হতে হলে হিজাব পরতেই হবে নারীদের। সেইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের ক্ষেত্রে নিকাব পরাও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
ওই ভিডিওটি দেখার পর ক্ষোভ প্রকাশ করছেন নেটিজেনরা। একজন লিখেছেন, ‘কেন তালিবানরা নারীদের কেনার কথা ভাবে?’ অন্য একজন বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না, এ ধরনের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে কেন বিপুল জনবিক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে না।’
পাশাপাশি স্থানীয় গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এক তালিবান মুখপাত্র জানিয়েছেন, সেখানে কোনো নারীকে মন্ত্রী করা হবে না। তাদের কাজ কেবল সন্তানের জন্ম দেয়া।
তালিবানের মুখপাত্র সৈয়দ জেকরুল্লাহ হাশিমি স্থানীয় টিওএলও নিউজকে বলেন, নারীরা মন্ত্রী হতে পারে না। এটি এমন বিষয় যেটি আপনি তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিলেন কিন্তু তারা সেটি নিতে পারবে না। নারীদের মন্ত্রিত্ব পাওয়া খুব প্রয়োজনীয় নয়। তাদের কাজ হলো জন্ম দেওয়া। যে সব নারী আন্দোলন করছে তারাই আফগানিস্তানের সব নারীর প্রতিনিধিত্ব করছে না।
সাক্ষাৎকারে তালিবানের মুখপাত্র হাশিমি বলেন, আমরা তাদেরকে তেমনভাবে দেখি না। কীভাবে তারা সমাজের অর্ধাংশ। অর্ধেক বলেই এটির ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে। অর্ধেক বলতে বোঝাচ্ছে তাদেরকে মন্ত্রিসভায় জায়গা দিতে হবে এবং আরও সুযোগ দিতে হবে। গত ২০ বছরে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার অনুগত গণমাধ্যম ও আফগানিস্তানের পুতুল সরকার যা বলেছে নারীদের নিয়ে সেগুলো কি পতিতাবৃত্তি ছাড়া আর কিছু ছিল?”
সাক্ষাৎকারে এই কথার প্রতিবাদ করেন সাংবাদিক। তিনি হাশিমিকে বলেন, আপনি সব নারীকে পতিতা বলতে পারেন না। এর জবাবে তালিবান মুখপাত্র বলেন, আমি সব নারীদের বোঝাচ্ছি না। দেখুন চারজন নারী রাস্তায় প্রতিবাদ করছে। তারা সব আফগান নারীদের প্রতিনিধিত্ব করছে না। আফগান নারী তারাই; যারা আফগানিস্তানের জনগণকে জন্ম দিয়েছে এবং তাদেরকে ইসলামের নীতি শেখাচ্ছে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৫৩০
আপনার মতামত জানানঃ