নতুন করে আফগানিস্তান দখল করার পর তালিবান জানিয়েছিল, তারা বদলে গেছে। আদতে কী বদলেছে? দিন যত যাচ্ছে, ততই স্পষ্ট হচ্ছে তালিবানের অবস্থান। তারা যে বদলে যাওয়ার দাবি করে আসছে, সেটা মূলত মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য; দিনের আলোর মতো এটা এখন পরিষ্কার।
কিছুই বদলায়নি তালিবান। দেশটিতে নারীদের প্রতি চরম বৈষম্যমূলক আচরণই বলে দিচ্ছে তালিবান আসলে তালিবানই রয়ে গেছে। সরকারে নারীদের কোনো অংশগ্রহণ নেই; নারীদের ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞা দেয়া; নারী অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে বিভিন্ন নীতিতে; বিক্ষোভে নারীদের মারধর স্পষ্ট করে দিচ্ছে তালিবানের নীতিকে।
আফগানিস্তানে তালিবান সরকার গঠন করেছে। আর তাতে নারীদের অংশগ্রহণের বিষয় নিয়ে বিক্ষোভ দানা বাঁধছে। তবে স্থানীয় গণমাধ্যমে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তালিবান মুখপাত্র জানিয়েছেন, সেখানে কোনো নারীকে মন্ত্রী করা হবে না। তাদের কাজ কেবল সন্তানের জন্ম দেয়া।
তালিবানের মুখপাত্র সৈয়দ জেকরুল্লাহ হাশিমি টিওএলও নিউজকে বলেন, নারীরা মন্ত্রী হতে পারে না। এটি এমন বিষয় যেটি আপনি তাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিলেন কিন্তু তারা সেটি নিতে পারবে না। নারীদের মন্ত্রিত্ব পাওয়া খুব প্রয়োজনীয় নয়। তাদের কাজ হলো জন্ম দেওয়া। যে সব নারী আন্দোলন করছে তারাই আফগানিস্তানের সব নারীর প্রতিনিধিত্ব করছে না।
A Taliban spokesman on @TOLOnews: “A woman can’t be a minister, it is like you put something on her neck that she can’t carry. It is not necessary for a woman to be in the cabinet, they should give birth & women protesters can’t represent all women in AFG.”
Video with subtitles👇 pic.twitter.com/CFe4MokOk0— Natiq Malikzada (@natiqmalikzada) September 9, 2021
সাক্ষাৎকারে তালিবানের মুখপাত্র হাশিমি বলেন, আমরা তাদেরকে তেমনভাবে দেখি না। কীভাবে তারা সমাজের অর্ধাংশ। অর্ধেক বলেই এটি ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে। অর্ধেক বলতে বোঝাচ্ছে তাদেরকে মন্ত্রিসভায় জায়গা দিতে হবে এবং আরও সুযোগ দিতে হবে। গত ২০ বছরে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার অনুগত গণমাধ্যম ও আফগানিস্তানের পুতুল সরকার যা বলেছে নারীদের নিয়ে সেগুলো কি পতিতাবৃত্তি ছাড়া আর কিছু ছিল?”
সাক্ষাৎকারে এই কথার প্রতিবাদ করেন সাংবাদিক। তিনি হাশিমিকে বলেন, আপনি সব নারীকে পতিতা বলতে পারেন না। এর জবাবে তালিবান মুখপাত্র বলেন, আমি সব নারীদের বোঝাচ্ছি না। দেখুন চারজন নারী রাস্তায় প্রতিবাদ করছে। তারা সব আফগান নারীদের প্রতিনিধিত্ব করছে না। আফগান নারী তারাই; যারা আফগানিস্তানের জনগণকে জন্ম দিয়েছে এবং তাদেরকে ইসলামের নীতি শেখাচ্ছে।
মূলত গত কয়েকদিন ধরে কাবুলসহ আরো অনেক শহরে তালিবান সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ চলছে। এই বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারীরা। স্বভাবতই তালিবানরা এই বিক্ষোভ ভালো চোখে দেখছে না।
এই কারণেই তালিবানদের ক্ষোভ গিয়ে পড়েছে প্রতিবাদী নারী, সাধারণ মানুষ এবং সাংবাদিকদের উপর। তালিবান কর্তৃক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঘোষণার পর নারীরা কাবুলের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এবং সরকারে অংশীদারিত্বের দাবি জানায়।
যদিও মহিলাদের বিক্ষোভগুলো ছিল ছোট আকারের, তবে তালিবানরা এতেই আতঙ্কিত হয়েছে। তালিবান যোদ্ধাদের দ্বারা মহিলাদের মারধর করা হয়, সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদেরও মারা হয়। এরপর সরকার গঠনের ঘোষণার পরেই তালিবানরা জানিয়েছে যে সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনো বিক্ষোভ প্রদর্শন করা যাবে না।
এমন অনেক ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে, যেখানে তালিবান যোদ্ধাদের দ্বারা মহিলাদের মারধর করতে দেখা যাচ্ছে। যোদ্ধারা নারী ও সাংবাদিকদের লাঠি ও রাইফেলের বাট দিয়ে আঘাত করছে। এর পাশাপাশি অনেক সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয় এবং তাদেরকে মারধর করা হয়। কাবুলে ইন্টারনেট পরিসেবাও বন্ধ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার আফগানিস্তানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা করেছে তালিবান। যেখানে কোনো নারীকে রাখা হয়নি। গত ১৫ আগস্ট কাবুল দখলের মাধ্যমে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেয় দেশটির এক সময়ের বিদ্রোহী গোষ্ঠী তালিবান।
‘হিজাব না পরা নারীরা কাটা তরমুজের মতো’
হিজাব না পরা নারীদের কাটা তরমুজের সঙ্গে তুলনা করলেন এক তালিবান কর্মকর্তা। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা গিয়েছে, আপনারা কি কেউ কাটা তরমুজ কেনেন? নাকি পুরো তরমুজ কেনেন? অবশ্যই পুরোটা কেনেন। হিজাব না পরা মেয়েরা হল কাটা তরমুজ। ব্রিটিশ বিবিসির সাংবাদিক জিয়া শাহরিয়ার টুইটারে ভিডিওটি শেয়ার করেছেন।
A Taliban official in an interview in Kabul on the importance of Hijab: “Do you buy a sliced melon or an intact melon🍈 . Of course the intact one. A woman without Hijab is like a sliced melon 🍉”pic.twitter.com/9lHpQnohyd
— Zia Shahreyar l ضیا شهریار (@ziashahreyar) September 6, 2021
তবে ইন্ডিপেনডেন্ট এই ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করতে পারেনি। পাশাপাশি ওই তালিবান কর্মকর্তা পরিচয়ও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর থেকেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। এমনিতেই তালিবান ক্ষমতায় আসার পর ফতোয়া জারি হয়েছে, বাড়ির বাইরে বের হতে হলে হিজাব পরতেই হবে নারীদের। সেইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের ক্ষেত্রে নিকাব পরাও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
ওই ভিডিওটি দেখার পর ক্ষোভ প্রকাশ করছেন নেটিজেনরা। একজন লিখেছেন, ‘কেন তালিবানরা নারীদের কেনার কথা ভাবে?’ অন্য একজন বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না, এ ধরনের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে কেন বিপুল জনবিক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে না।’
প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে আফগানিস্তানে তালিবানের শাসনকালে নারীদের অধিকারের বিষয়গুলো ক্ষুন্ন হওয়ার বিস্তর অভিযোগ আছে আন্তর্জাতিক মহলে। এবারও তালিবানের নতুন সরকারে উচ্চ পর্যায়ে ঠাঁই হয়নি নারীদের। যদিও তালিবান নারী ও শিশুদের অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এখনও আন্দোলন করছেন আফগান নারীরা। এর মাঝেই তালিবানের কর্মকর্তার এমন মন্তব্যে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৫০৫
আপনার মতামত জানানঃ