গত ২০ বছর যাবৎ আফগানিস্তানে আমেরিকার যুদ্ধের যেটুকু নৈতিক অবস্থান মার্কিনীরা দাবি করতো, তা বিসর্জন দিয়ে সম্প্রতি তালিবানের সাথে একটি অস্বস্তিকর অংশীদারিত্বের মধ্যে আবদ্ধ হয়েছে বাইডেন প্রশাসন। কাবুল বিমানবন্দরে আইএস-কের হামলার পরিপেক্ষিতেই এই সিদ্ধান্ত আমেরিকার। তবে আদতে এই সিদ্ধান্ত কোন সাম্প্রতিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাকি এর শেকড় প্রোথিত আছে তালিবানের উত্থানের সাথে, তা হয়তো নিকট ভবিষ্যতে সামনে আসবে বিশ্বের।
সালাফিদের সন্ত্রাসবাদ ঠেকাতে ও মার্কিন নাগরিক এবং আফগান মিত্রদের আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে নেয়া ও সুরক্ষিত করার জন্য তালিবানদের উপর আনুষ্ঠানিকভাবেই নির্ভর করতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্ব রাজনীতিতে এটা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা হয়ে থাকবে।
গত বৃহস্পতিবার কাবুলের বিমান বন্দরে তালিবানের প্রতিদ্বন্দ্বী সালাফিদের ইসলামিক স্টেটের সহযোগী আইএস-কের বোমা হামলার পর তালিবানের সাথে নিজেদের পূর্বের অবস্থান বদলে সমঝোতার হাত বাড়িয়ে দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
এ প্রসঙ্গে মার্কিন জেনারেল ম্যাকেঞ্জি বলেন, ‘মার্কিন সেনাবাহিনী তালিবানদের তাদের নিরাপত্তা বেষ্টনীতে সমন্বয় করতে এবং আইএস-কে’র হামলার ঝুঁকিপূর্ণ যুক্তরাষ্ট্রের চিহ্নিত রাস্তাগুলি বন্ধ করতে বলেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সেই সব হামলার জন্য প্রস্তুত থাকার জন্য যা যা করতে পারি তা করছি। এর মধ্যে রয়েছে তালিবানের সহায়তা নেয়া। এবং তারা এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আমরা তাদের সাথে সমন্বয় অব্যাহত রাখব।’
সূত্র মতে, দীর্ঘদিন ধরেই তালিবান এবং ইসলামিক স্টেট পরস্পরের শত্রু; যদিও বিতর্ক আছে তাদের পারস্পরিক অবস্থান নিয়ে। এই দুই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বারবার আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। একারণে আমেরিকান কর্মকর্তারা এখনও বিশ্বাস করেন যে, তারা ইসলামিক স্টেট বা অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আক্রমণ থামানোর জন্য তালিবানদের উপর নির্ভর করতে পারেন।
অথচ তাদের এই সিদ্ধান্ত, তাদের কিছুদিন আগের অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। কারণ বোমা হামলায় কয়েক ডজন মার্কিন সেনা ও আফগান নাগরিক নিহত হওয়ার আগে মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছিলেন যে, আফগানিস্তান দখল করার সময় তালিবানের বহু বন্দি মুক্তির অনুমতি দেয়া একটি স্পষ্ট লক্ষণ যে, তারা অবিশ্বস্ত কার্যকলাপ করবে, যা যুক্তরাষ্ট্রকে বিপদে ফেলতে পারে।
এমনকি যুক্তরাষ্ট্র এবং তালিবানের মধ্যকার বৈরি সম্পর্ক স্পষ্ট করতে মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, ‘সিআইএ আফগান সন্ত্রাসবাদ বিরোধী বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য নির্মিত কাবুলের উপকণ্ঠে অবস্থিত একটি সাইট তালিবানের আয়ত্তের বাইরে রাখার জন্য ধ্বংস করে দেয়।’
এ পরিকল্পনা সম্পর্কে ব্রিফিং করা মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, ‘প্রাথমিকভাবে বাইডেন প্রশাসনের চলতি মাসের সেনা প্রত্যাহার নিয়ে তালিবানদের সাথে কাজ করার কোনো ইচ্ছা ছিল না। হামলার দিন জেনারেল কেনেথ এফ. ম্যাকেঞ্জিকে তালিবান কর্মকর্তারা বলেছিলেন যে, কাবুলে নিরাপত্তার অবনতি হচ্ছিল এবং শহরটিকে সুরক্ষিত করতে তাদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হয়েছে।
ওই বৈঠকে উপস্থিত এক মার্কিন কর্মকর্তার বলেছেন যে, তালিবানরা নিরাপত্তা বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছিল। গত দুই সপ্তাহের মধ্যে কাবুলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা তালিবান কর্মকর্তাগণ এবং রিয়ার অ্যাডমিরাল পিটার জি. ভ্যাসেলিসহ আমেরিকান সামরিক কমান্ডারদের মধ্যে পর্যায়ক্রমে কথোপকথন হয়েছে।
সিআইএ’র সর্বোচ্চ মাত্রার কূটনৈতিক অভিযানের পরিচালক উইলিয়াম জে বার্নসের সোমবারের কাবুল সফর আগামী বছরগুলিতে তালিবানের সাথে ধারাবাহিক সম্পর্কের সূচনা করতে পারে। কিন্তু সিআইএ তালিবানদের সাথে কতোটা আলোচনা এবং সহযোগিতা করবে, সম্ভবত তাদের আচরণের উপর নির্ভর করবে।
মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘যদি তালিবান ইসলামিক স্টেট এবং আল কায়েদার লক্ষ্যবস্তুতে হামলার অনুমতি দেয় এবং সন্ত্রাসী দলের উন্নয়ন সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে, তাহলে মার্কিন সরকারের তালিবানদের সহযোগিতা করার সম্ভাবনা বেশি।’ তবে, সেই সহযোগিতার ব্যাপ্তি নির্ভর করতে পারে বাইডেন ক্যাপিটল হিলে এর জন্য কোন সমর্থন পান কিনা, তার ওপর।
বাইডেন এবং তার প্রশাসন তালিবানদের উপর নির্ভর করার বিষয়ে হতাশ কিনা, জানতে চাইলে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি গতকাল শুক্রবার বলেছেন যে, প্রশাসন তার মিশন শেষ করার দিকে মনোনিবেশ করেছে। তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে আত্মবিশ্লেষণের জন্য যথেষ্ট সময় নেই।’
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/২০৩৫
আপনার মতামত জানানঃ