পাওনা টাকা আদায় করে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) এক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ জানিয়ে গতকাল শুক্রবার রাতে থানায় মামলা করেছেন এক নারী।
অভিযোগ ওঠা ব্যক্তির নাম আবদুল ওহাব (৪৫)। তিনি উপজেলার খামারকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান। অভিযোগকারী নারীর (৩৮) বাড়ি একই উপজেলার অপর একটি ইউনিয়নে।
ভুক্তভোগী ওই নারীর অভিযোগ, একজনের কাছে তিনি টাকা পান। ওই টাকা আদায় করে দেওয়ার কথা বলেছিলেন চেয়ারম্যান। এ জন্য গতকাল সকালে চেয়ারম্যানের বাড়িতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হন।
শেরপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাঈফ আহমেদ বলেন, উপজেলা শহরের রামচন্দ্রপুর মহল্লায় একটি ভাড়াবাড়ি রয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল ওহাবের। সেখানে ওই নারীকে গতকাল সকালে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন তিনি।
ঘটনার সময় বাড়িতে চেয়ারম্যান ছাড়া পরিবারের অন্য কেউ ছিল না। ওই নারী রাতে থানা-পুলিশে শরণাপন্ন হন। তার লিখিত অভিযোগটি রাতেই ধর্ষণের মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ওই নারী খামারকান্দি এলাকার এক ব্যক্তির কাছে ৫০ হাজার টাকা পান। এই টাকা আদায় করতে না পেরে তিনি চেয়ারম্যানের দ্বারস্থ হন। চেয়ারম্যান টাকা আদায় করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। ন্যায়বিচারের আশ্বাস পেয়ে ওই নারী গতকাল সকালে চেয়ারম্যান আবদুল ওহাবের ভাড়াবাড়িতে গিয়েছিলেন।
ওই নারী বলেন, বিচারের পরিবর্তে সেখানে এমন ঘটনার শিকার হতে হবে, চিন্তা করতে পারেননি তিনি। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে রাতে থানা-পুলিশের দ্বারস্থ হন তিনি।
যদিও এ বিষয়ে খামারকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাব বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে থানায় মামলা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে শেরপুর থানার ওসি মো. শহিদুল ইসলাম শহিদ মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
ক্ষমতার বাড়াবাড়িতে চেয়ারম্যানদের বিভিন্ন কুকীর্তির মধ্যে ইদানিংকালে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধও সামিল হচ্ছে। এ মাসের ১৯ তারিখেই হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ইনাতগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বজলুর রশীদ ও তার দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে এক তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোহে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়।
আদালতে করা মামলার সূত্রে জানা গেছে, স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ১৯ বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে উপজেলার ইনাতগঞ্জ বাজারে ভাড়া বাসায় বসবাস করেন মা। বিষয়টি নজরে আসে ইনাতগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বজলুর রশীদের। এক বিকালে ভুক্তভোগীর মা ডাক্তার দেখাতে বের হলে রাস্তায় চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা হয়। এরপর মা বাসায় নেই জেনে চেয়ারম্যান ও তার দুই সহযোগী উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের অজুদ মিয়া ও রিপন মিয়া ওই দিন রাতে ভুক্তভোগীর বাসায় গিয়ে দরজা খুলে তার মা কোথায় জিজ্ঞেস করে জোরপূর্বক ঘরে প্রবেশ করে।
এ সময় চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীরা ওই তরুণীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ধর্ষণ করেন। পরে মা বাসায় এসে ঘটনা জানার পর মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে যেতে চাইলে অভিযুক্তরা তাকে বাধা দিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেন। ঘটনার তিন দিন পর কৌশলে লুকিয়ে ভুক্তভোগীকে হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালে এনে ভর্তি করায় তার মা। এরপরই ভিকটিমের মা বাদী হয়ে আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
এছাড়া গত মে মাসের মাঝামাঝি শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ৯ নম্বর মরিচপুরান ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও উপজেলা কৃষকলীগের আহ্বায়ক খন্দকার শফিকুল ইসলাম শফিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা করা হয়। শেরপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলাটি করেন উপজেলার মরিচপুরান মৌলভীপাড়া গ্রামের এক যুবতী নারী।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৬৫৭
আপনার মতামত জানানঃ