জিন্স পরার অপরাধে এক কিশোরীকে পিটিয়ে মেরে মরদেহ পানিতে ফেলে দিয়েছে তার দাদা ও চাচা। এমনই অমানবিক ঘটনা ঘটেছে ভারতের উত্তরপ্রদেশে। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের আটক করেছে পুলিশ।
জানা যায়, ওই কিশোরীর নাম নেহা পাশওয়ান। ১৭ বছর বয়সী ওই কিশোরীর অপরাধ সে জিন্স পরেছিল, আধুনিকতায় বিশ্বাসী ছিল। আর তাই দাদু ও চাচার নির্মম পিটুনিতে প্রাণ দিতে হলো তাকে। এমনকি হত্যাকাণ্ডের পর অপরাধ ঢাকতে কিশোরীর মরদেহ অভিযুক্তরা ফেলে দেয় পানিতে।
ভারতের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, ১৭ বছরের ওই কিশোরী বাবার সঙ্গে লুধিয়ানায় থাকত। এবার সে গ্রামের বাড়িতে এসেছিল। কিশোরীর আধুনিক পোশাক মেনে নিতে পারছিলেন না বাড়ির সদস্যরা। কারণ জিন্স, টপ, ট্রাউজার পরত এই কিশোরী। এই নিয়ে সমস্যার শুরু। আর তাই চাচা ও দাদা পোশাক নিয়ে ধমক দিত। হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। যাতে কান দিত না ওই কিশোরী। এবার বিষয়টি নিয়ে তীব্র কথা কাটাকাটি হয়। আর তা থেকেই এই ঘটনা ঘটে গেল।
এসব ঝামেলার পরও জিন্স পরত কিশোরী। তাই তাকে বেধড়ক মারতে থাকে তার দাদা ও চাচা। মারের চোটে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ওই কিশোরী। তখন তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে আত্মীয়রা। কিন্তু পথেই মারা যায় কিশোরী। এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই ভয় পেয়ে যায় পরিবারের সদস্যরা। তখন বিকল্প পথ হিসাবে এক সেতু থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয় কিশোরীর মৃতদেহ। কিন্তু দেহটি পানিতে না পড়ে মাঝপথে ঝুলতে থাকে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে।
নিহত নেহা পাশওয়ানের মা শকুন্তলা দেবী পাশওয়ান বিবিসি’কে জানিয়েছেন, কিশোরীর দাদা বাড়ি উত্তরপ্রদেশের দেওরিয়া জেলার সাবরেজি খড়গ নামক গ্রামে। পোশাক নিয়ে তর্ক-বিতর্কের একপর্যায়ে দাদা ও চাচারা নির্মমভাবে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে নেহাকে হত্যা করে।
তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন তার মেয়ে ধর্মীয় কারণে সারাদিন না খেয়ে ছিল। সন্ধ্যায় একটি জিন্স ও টপস পরে ধর্মীয় কিছু কাজ করার সময় পরিবারের সদস্যরা তাকে নিষেধ করে। প্রত্যুত্তরে নেহা জানায়— জিন্স পরার জন্য তৈরি করা হয়েছে এবং সে সবসময় এটা পরবে। একপর্যায়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে পরিবারের সদস্যরা।’
বিবিসি বলছে, উত্তরপ্রদেশের দেওরিয়া জেলা এবং এর অধীনস্থ সাবরেজি খড়গ গ্রামটি রাজ্যটির সবচেয়ে অনুন্নত এলাকা।
পুলিশ সূত্রে খবর, কিশোরীর মামা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। কিশোরীর দাদাসহ চারজনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। তাদের সকলকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এমনকী গ্রেপ্তার করা হয়েছে এক অটো চালককেও। কারণ এই অটো চালক কিশেরীর দেহটি সেতু থেকে ফেলতে সাহায্য করেছিল। তবে চাচা এখনও পলাতক। পুরো ঘটনার তদন্তে পুলিশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, জিন্স ভারতে বরাবরই পুরুষতন্ত্রের ঝাল ঝাড়ার লক্ষ্যবস্তু। জিন্সের পোশাক ভারতে একই সঙ্গে নৈতিক স্খলনের কারণ এবং লক্ষণ মনে করা হয়। ছেলে-মেয়েদের, বিশেষ করে মেয়েদের এরকম পোশাক পরতে দেয়ার জন্য বাবা-মা’দের সমালোচনা করেন ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী তীরাথ সিং রাওয়াতও। এটিকে ভারতের পিতৃতান্ত্রিক সমাজের অধিপতিরা প্রায় নিয়মিতই তরুণদের নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ হিসেবে দায়ী করেন। তরুণীদের ক্ষেত্রে আরও খড়্গহস্ত। আর তাইতো এবার জিন্স পরার অপরাধে নিজেরই নাতনিকে পিটিয়ে মেরেছেন এক দাদা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩২৩
আপনার মতামত জানানঃ