করোনাকালের প্রণোদনা তহবিল থেকে বেসরকারি খাতে সর্বোচ্চ ঋণ পেয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপ। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোক্তা। বেক্সিমকো গ্রুপ জনতা ব্যাংক থেকে ১৮০ কোটি টাকা ও গ্রুপটির অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেলস ৮০ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছে।
সরকারের নেক নজরে থাকা আরেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপও পেয়েছে বড় অঙ্কের প্রণোদনার অর্থ। জনতা ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপ ২০০ কোটি টাকা পেয়েছে। আবার রূপালী ব্যাংক থেকে ৩৩ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছে এস আলম গ্রুপের গ্যালকো স্টিল। এছাড়া প্রণোদনা খাতে সর্বোচ্চ এক হাজার কোটি টাকা ঋণ পেয়েছে জাতীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ। বিমান বংলাদেশ এই ঋণ নিয়েছ সোনালী ব্যাংক থেকে।
জানা গেছে, বেসরকারি খাতের থারমেক্স গ্রুপ পেয়েছে ১৮৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংক থেকে ৮৪ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংক থেকে ৫৭ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংক থেকে ৪৭ কোটি টাকা। আবার আবুল খায়ের গ্রুপ পেয়েছে ১২৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংক থেকে ৪৮ কোটি টাকা, জনতা ব্যাংক থেকে ৪০ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংক থেকে ৩৫ কোটি টাকা।
এছাড়া সোনালী ব্যাংক থেকে নাভানা রিয়েল এস্টেট ১০০ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংক থেকে জাবের অ্যান্ড জুবায়ের ৯০ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংক থেকে নাভানা লিমিটেড ৮৮ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংক থেকে নাইস স্পেন মিলস ৬০ কোটি টাকা, সোনালী ব্যাংক থেকে স্টার পার্টিকেল ৫৫ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংক থেকে দবিরউদ্দিন স্পিনিং মিলস ৫০ কোটি টাকা পেয়েছে ও অগ্রণী ব্যাংক থেকে একমি ল্যাবরেটরি ৫০ কোটি টাকা পেয়েছে।
করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ দিতে সরকার প্রথমে ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। পরে পোশাকশ্রমিকদের বেতনের ঋণ যুক্ত করায় এর আকার বেড়ে হয় ৩৩ হাজার কোটি টাকা। সম্প্রতি তা বাড়িয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। এই তহবিলের ঋণের প্রায় পুরোটাই এখন শেষের পথে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, দ্রুত সময়ে এই ঋণ বিতরণের তাগিদ ছিল। ব্যাংকগুলোও সেভাবে দিয়েছে।
বড় ব্যবসায়ী গ্রুপগুলোর অধিকাংশের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ঋণখেলাপির অভিযোগ থাকলেও ব্যাংকগুলো তাদের বড় অঙ্কের প্রণোদনার ঋণ দিতে কার্পণ্য করেনি। সরকারের নীতি নির্ধারকদের সবুজ সংকেতেই এটা ঘটেছে বলে মনে করেন ব্যাংকিং খাত বিশেষজ্ঞরা। তবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের উদ্যোক্তারা খেলাপি না হলেও তাদের ঋণ দিতে চায় না ব্যাংকগুলো।
করোনাভাইরাসের অর্থনৈতিক প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। এ ঋণ বিতরণের শেষ সময় আগামী শনিবার পর্যন্ত। তবে এখন পর্যন্ত এ তহবিল থেকে বিতরণ হয়েছে ৭ হাজার কোটি টাকারও কম। ব্যাংকগুলোর অনীহার জন্যই এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ করেও ঋণ বিতরণের লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি।
সাড়ে ৪ শতাংশ সুদে এই ঋণ পাচ্ছে বেসরকারি কোম্পানিগুলো। দেশে বিদ্যমান বর্তমান সুদ হারের এটা অর্ধেক। ব্যাংকগুলোকে সুদের বাকি সাড়ে ৪ শতাংশ শোধ করবে সরকার স্বয়ং। প্রণোদনার এই ঋণ বিতরণে বেশ কিছু শর্ত দিয়েছিল সরকার। বলা হয়েছিল, শুধু ক্ষতিগ্রস্তরাই এ ঋণ পাবে। এ ঋণের মেয়াদ হবে তিন বছর। তিনবারের বেশি খেলাপি হয়ে পুনঃতফসিলির সুবিধা নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণপ্রদানে বিরত থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে যেসব প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে ব্যাংক থেকে চলতি মূলধন সুবিধা নিয়েছে, তারা এই তহবিল থেকে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ চলতি মূলধন নিতে পারবে।
মিই/আরা/১৪৫০
আপনার মতামত জানানঃ