ধর্মীয় উৎসবকে সামনে রেখে মানুষের বর্বরতম আচরণের নমুনা পাওয়া যায় প্রায় প্রতি উৎসবেই। মানুষের ভেতরের হিংস্রতায় যেনো আগুনে ঘি ঢালে ধর্মীয় উৎসবগুলো।
ইরাকের রাজধানী বাগদাদের সাদর শহরের ওয়াহিইলাত নামের জনাকীর্ণ একটি বাজারে জোড়া আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ৩৫ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরো অন্তত ৬০ জন। ঈদুল আজহার প্রাক্কালে গতকাল সোমবার (১৯ জুলাই) সন্ধ্যায় এই বিস্ফোরণ ঘটে।
হতাহতরা সবাই আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ওই বাজারে কেনাকাটা করতে গিয়েছিলেন বলে আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। হতাহতের মধ্যে নারী আর শিশুও রয়েছে। বোমা বিস্ফোরণের কারণে বাজারের বেশ কয়েকটি দোকানে আগুন ধরে গেছে। বিস্ফোরণের পর আহতরা রক্তাক্ত শরীরে চিৎকার করছিলেন বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে।
স্থানীয়ভাবে তৈরি আইইডি বোমা দিয়ে এই হামলা চালানো হয়েছে বলে ইরাকের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।
গত তিন বছরে ইরাকে এত বড় বিস্ফোরণ হয়নি। ইসলামিক স্টেটকে পরাস্ত করার পরে এত বড় হামলার ঘটনা সেখানে ঘটেনি। এই হামলার দায় স্বীকার করেছে জঙ্গি সংগঠন আইএসআইএল (আইএসআইএস)। টেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করা একটি বার্তায় সংগঠনটি জানিয়েছে, তাদের একজন আত্মঘাতী হামলাকারী শরীরে বোমা বেঁধে ভীড়ের মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটায়।
এই হামলাকে ‘জঘন্য অপরাধ’ বলে অভিহিত করে শোক প্রকাশ করেছেন ইরাকের প্রেসিডেন্ট বারহাম সালিহ।
এদিকে এই বছরের জানুয়াতেই আরেকটি বোমা বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিলো বাগদাদ। নিহতের সংখ্যা ছিলো ৩২ এবং আহত শতাধিক। ওই হামলার দ্বায় স্বীকার করে আইএস জঙ্গিরা বিবৃতি দিয়েছিলো। ইরাকে যে তাদের উপস্থিতি এখনও ভালোই, তার প্রমাণ দিতেই তারা এ কাজ করেছিলো। প্রশাসনের তদন্ত মতে, স্লিপিং সেলের সাহায্যে ওই ঘটনা ঘটানো হয়েছিলো। ফলে গোয়েন্দাদের কাছে এ বিষয়ে বিশেষ তথ্য ছিল না।
বাগদাদের বাজারে প্রথমে একজন আত্মঘাতী জঙ্গি ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়ে। জায়গা বুঝে রাস্তার উপর শুয়ে পড়ে এবং শরীর খারাপের অভিনয় করতে শুরু করে। তার অবস্থা দেখে আশপাশে মানুষ ভিড় জমান। অনেকেই তাকে সাহায্য করার চেষ্টা করেন। ঠিক সেই সময়েই বিস্ফোরণ ঘটায় সে। তার কিছুক্ষণের মধ্যে ওই ভিড়ের ভিতর থেকেই দ্বিতীয় আত্মঘাতী জঙ্গি বিস্ফোরণ ঘটায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, নিমেষের মধ্যে গোটা এলাকাটি রক্ত আর ছিন্নভিন্ন দেহে ভরে যায়।
ঘটনার পরেই বাজারের অদূরে বাগদাদের গ্রিন জোন সিল করে দেওয়া হয়েছিলো। সেখানেই অ্যামেরিকা সহ একাধিক দেশের দূতাবাস। এর আগে সেখানেও বার বার হামলার চেষ্টা হয়েছিলো।
ইরাকে গতকাল হামলাকারী সংগঠন ইসলামিক স্টেট অব ইরাক এন্ড দ্য লেভান্ট (আইএসআইএল) ইরাক ও সিরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারকারী একটি উগ্র সুন্নী মতবাদীভিত্তিক গোষ্ঠী। খিলাফত ঘোষণার পর তারা বিশ্বব্যপী মুসলিমদের উপর ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সামরিক কর্তৃত্ব দাবি করে। আইএসআইএস ঘোষিত খিলাফত ও বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। এসব কাজের মধ্যে রয়েছে বিনাবিচারে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ হত্যা, শিরশ্ছেদ ও আগুনে পুড়িয়ে প্রতিপক্ষ ও বেসামরিক ব্যক্তিদের হত্যা দৃশ্যের ভিডিও প্রকাশ, প্রাচীন পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন ধ্বংস ইত্যাদি। তাদের নিয়ন্ত্রণে আনা এখনও সম্ভব হয়নি।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিজেএ/১২০৫
আপনার মতামত জানানঃ