করোনাকালে বিধিনিষেধ অমান্য করার জন্য জরিমানা করা হচ্ছে রাস্তাঘাটে। এরই সুযোগ নিয়ে পুলিশের শৃংখলা ভেঙে বিভিন্ন যানবাহন থেকে চাঁদা তোলার অভিযোগে জয়পুরহাটে পুলিশের এক কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রত্যাহার হওয়া রাফি হাসান কালাইগর থানায় এসআই পদে কর্মরত ছিলেন।
আটাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আমিনুল ইসলাম জানান, শনিবার সন্ধ্যায় এসআই রাফি হাসান পাঁচবিবি থানা এলাকার হিলি-চাঁনপাড়া সড়কে সিএনজিসহ বিভিন্ন পরিবহনে চাঁদা তুলছিলেন। এ সময় একটি সিএনজি আটকে এক যাত্রীকে হাতকড়া লাগিয়ে টাকার কথা বলছিলেন। বিষয়টি দেখে স্থানীয়রা পাঁচবিবি থানা পুলিশকে জানালে পুলিশ এসে তাকে আটক করে।
পাঁচবিবি থানার অফিসার ইনচার্জ পলাশ চন্দ্র দেব বলেন, এসআই রাফি হাসান কালাই থানায় কর্মরত। পাঁচবিবি থানা এলাকায় পোশাক পরে এসে গাড়ি ধরার আইনের মধ্যে পড়ে না। এজন্য তাকে আটক করে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও তার সহযোগী সদর উপজেলার আমদই ইউনাইটেড কলেজের অফিস সহকারী মামুনুর রশিদকে আটক করা হয়েছে।
রোবাবার দুপুরে জেলার পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা বলেন, ‘প্রত্যাহার করে ওই এসআইকে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। কর্মস্থল এলাকার বাহিরে কাউকে না জানিয়ে যাওয়া এবং স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে ক্লোজড করে পুলিশ লাইনে নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।’
শুধু এই নয়, পুলিশের কারণে অক্সিজেনের অভাবে সাতক্ষীরায় সম্প্রতি এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) দুপুরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বৈচনা গ্রামে অসুস্থ বাবার জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) ছেলেকে দুই ঘণ্টা আটকে রাখায় অক্সিজেনের অভাবে ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ওই বৃদ্ধের নাম রজব আলী মোড়ল (৬৫)। তিনি সদর উপজেলার বৈচনা গ্রামের বাসিন্দা।
রজব আলী মোড়লের ছেলে ওলিউল ইসলাম জানান, বাবার জন্য জরুরি অক্সিজেনের প্রয়োজন হওয়ায় তিনি সাতক্ষীরা শহরের পলাশপোল এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আল ফেরদৌস আলফার কাছ থেকে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার নিতে তার বাড়িতে যাচ্ছিলেন।
পথিমধ্যে ইটাগাছা হাটের মোড়ে পৌঁছালে তাকে আটক করেন ইটাগাছা ফাঁড়ির সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সুভাষচন্দ্র। লকডাউনে বাইরে বেরিয়েছে বলে তিনি তার কাছে এক হাজার টাকা দাবি করেন। দাবি করা টাকা দিতে না পারায় তাকে দুই ঘণ্টা সেখানে আটকে রাখা হয়।
পরে ইটাগাছা এলাকার জিয়াউল ইসলামের মধ্যস্থতায় ২০০ টাকা নিয়ে এএসআই সুভাষচন্দ্র তাকে ছেড়ে দেন। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। বাড়িতে যেয়ে দেখেন অক্সিজেনের অভাবে তার বাবা মারা গেছেন।
তিনি আরো বলেন, যদি সময় মতো অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বাড়িতে যেতে পারতাম তাহলে হয়তো বাবাকে বাঁচানো যেতো। তিনি এই অমানবিক ঘটনার বিচার দাবি করেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ইটাগাছা পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই সুভাষচন্দ্র বলেন, বেপরোয়া গতিতে আসছিল মোটরসাইকেলটি। কাগজপত্রও ছিলো না। পরে ঘটনা শুনে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। মাত্র ২-৩ মিনিট মোটরসাইকেলটি থামিয়ে রাখা হয়েছিল।
লক ডাউনে বিভিন্নভাবে পুলিশের দ্বারা ভোগান্তিতে পড়ছে নিম্ন আয়েরসহ সকল শ্রেণির মানুষ। ট্রাফিক পুলিশ কিংবা কন্সটেবলের দ্বারা যেনো ভোগান্তির নিরসন ঘটে শীঘ্রই সেজন্য চেকপোস্টগুলোতে উপরমহল থেকে আরও বেশি নজরদারি করা উচিৎ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা এবং পুলিশের দ্বারা কোনো অপরাধমূলক কাজ ঘটতে দেখলে সেটার শাস্তি নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক বলেও মনে করছেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/ডব্লিউজেএ/১৮০৬
আপনার মতামত জানানঃ