আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণার পর থেকেই আবার সক্রিয় হতে শুরু করেছে তালেবানরা। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের আরও তিনটি জেলা দখলে নিয়েছে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবান। সাঁড়াশি আক্রমণ চালিয়ে গত সপ্তাহের শেষের দিকে এই তিনটি জেলা দখল করে তারা। তালেবানের এই আক্রমণে আফগানিস্তানের বহু সংখ্যক সেনা ও সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।
দেশজুড়ে উভয় পক্ষের মধ্যে লড়াই বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এমন ঘটনা ঘটল। আফগানিস্তন-জুড়ে বিভিন্ন জায়গা আক্রমণ করে তালেবান। তাদের সেই আক্রমণে প্রচুর সেনা ও সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, নর্দার্ন প্রভিন্সের কেসর জেলা কার্যত তালেবানের অধিকারে চলে গেছে। এখানে শহরের কেন্দ্রে পুলিশ সদরদফতরে প্রথমে একটি গাড়ি বোমা বিস্ফোরণ হয়। তাতে ২০ জন নিরাপত্তা কর্মী মারা গেছেন। তারপর তালেবান আক্রমণ চালিয়ে পুলিশের সদরদফতর দখল করে নিয়েছে। স্থানীয় পৌরসভা ভবনও তাদের দখলে।
শহরের কেন্দ্রস্থলে তাদের সঙ্গে আফগানিস্তানের সরকারি সেনার প্রবল যুদ্ধ চলছে। শহরের অধিকাংশ এলাকাই মূলত চলে গেছে তালেবানের দখলে। প্রাদেশিক গভর্নর আব্দুল বাকি হাশিমি জানিয়েছেন, তালেবানের হামলায় ১০ জন সেনা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৮ জন। এছাড়া আরও ২০ জনকে আটক করেছে যোদ্ধারা।
আফগানিস্তানের পূর্ব নূরস্তানের দো আব জেলা রাতারাতি দখল করে নিয়েছে গোষ্ঠীটি। আগের দিন গত শুক্রবার দক্ষিণ জাবুলের শিংকাই, সংলগ্ন গজনির দেহ ইয়াক এবং পার্শ্ববর্তী দাইকুন্দি প্রদেশের গিজাব জেলারও নিয়ন্ত্রণ নেয় তারা।
নূরস্তান প্রদেশের আইনপ্রণেতা ইসমাইল আতিকান বলেন, দো আব জেলায় এক মাস ধরে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীকে অবরোধ করে রেখেছিল তালেবানরা। সেখানে ৩০০-এর অধিক সেনা তালেবানদের কাছে নিজেদের অস্ত্র জমা দিয়েছে এবং চুক্তির অংশ হিসেবে অঞ্চলটি থেকে সরে গিয়েছে।
কাবুলের পূর্বদিকে দো আব জেলা থেকে সেনাবাহিনী চলে গেছে বলে জানিয়েছেন কাউন্সিলর সাইদুল্লাহ নুরিস্তানি। জেলাটি এখন তালেবানের দখলে। আফগান সেনাবাহিনী চলে যাওয়ার আগে এই জেলার খাবার ও অস্ত্র সরবরাহের সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছিল তালেবান।
ফলে অতিরিক্ত সেনাও সেখানে যেতে পারেনি। এমনকি অস্ত্র বা খাবারও ঢুকতে দেয়নি তারা। এই অবস্থায় আদিবাসী নেতাদের মধ্যস্থতায় সব সেনাকে জেলা ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তাবে সম্মতি দেয় তালেবান।
পার্লামেন্ট সদস্য ইসমাইল আতিকান জানিয়েছেন, তালেবানের অবরোধের পর জেলা ছেড়ে চলে যাওয়া ছাড়া সেনা সদস্যদের আর কোনো বিকল্প ছিল না। গত সপ্তাহের শেষ নাগাদ সব মিলিয়ে নতুন করে মোট তিনটি জেলা তালেবানের দখলে গেছে।
তালেবানরা এখন নওরাগম অঞ্চলের দিকে এগিয়ে চলছে। যেটি নূরস্থানকে পাঞ্জশির প্রদেশের সঙ্গে যুক্ত করার একটি কৌশলগত জেলা। এটিকে দীর্ঘদিন ধরে একটি অদম্য এবং শক্তিশালী অঞ্চল হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, পূর্বে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং তালেবান সৈন্যরাও এটি দখল করতে ব্যর্থ হয়েছিল, যোগ করেন তিনি।
দক্ষিণ আফগানিস্তানের জাবুল প্রদেশের একজন সংসদ সদস্য তালেবানদের কাছে এই অঞ্চলটির ক্ষয়ক্ষতির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বলেন, তারা জাবুলের অপর জেলা শাহজয়েতে একটি মূল সেনা ঘাঁটি কোনো রকম প্রতিরোধ ছাড়াই দখল করে নিয়েছে। সৈন্যরা অঞ্চলটি ত্যাগ করে এবং তালেবানরা সরকারের ওপর চাপ বাড়ায়।
আফগানিস্তানের প্রায় প্রতিটি প্রদেশের রাজধানীতে তালেবান আক্রমণ চালাচ্ছে। তারা চেক পয়েন্টগুলোতেও আক্রমণ করছে। আফগান ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মুখপাত্র রহমতুল্লাহ আন্দার জানিয়েছেন, বিদেশি সেনা প্রত্যাহার শুরু হওয়ার পর থেকে তালেবান এক হাজার ৪৫৫ বার আক্রমণ চালিয়েছে।
তবে আফগানিস্তানের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র রোহুল্লাহ আহমদজাই দাবি করেছেন, তালেবানের হাতে দখল হওয়া সকল জায়গা পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা করেছে সেনাবাহিনী।
উল্লেখ্য, গত ১ মে থেকে মার্কিন ও ন্যাটো বাহিনী আফগানিস্তান ছাড়ছে। তারপর মোট সাতটি জেলা তালেবানের দখলে চলে গেছে। আগামী ১১ সোপ্টেম্বরের মধ্যে সকল বিদেশি সেনা আফগানিস্তান থেকে চলে যাবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪৪২
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ