মানবাধিকার সংগঠন ও অধিকারভিত্তিক অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপগুলোর পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে না। এবার ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কটাক্ষ করে ভিডিও শেয়ারের অভিযোগে দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় যুবদল নেতা শেখ মানিককে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার দিবাগত রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকা থেকে শিবালয় থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। পরে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আসামি শেখ মানিককে মানিকগঞ্জ আদালতে পাঠানো হয়।
মামলার বাদী ইমরান চৌধুরী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে স্থানীয় যুবদল নেতা শেখ মানিক তার ফেসবুক আইডিতে কুরুচিপূর্ণ ভিডিও শেয়ার করেন। আমি গত ২৩ এপ্রিল এই অপপ্রচারকারীর বিরুদ্ধে শিবালয় থানায় মামলা দায়ের করি। গতকাল রাতে শিবালয় থানা পুলিশ তাকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে এই অপ প্রচারকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। ভবিষ্যতে আর কেউ যেন প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে অপপ্রচার করার সাহস না পায়।
শিবালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ কবির জানান, শিবালয় উপজেলার দাসকান্দি গ্রামের মৃত নেয়ামত আলীর ছেলে শেখ মানিক গত ৪ এপ্রিল তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ ভিডিও শেয়ার করেন। এ বিষয়ে গত ২৩ এপ্রিল শিবালয় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডারের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ইমরান চৌধুরী বাদী হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় গতকাল রাতে আসামি শেখ মানিককে ঢাকার ধানমন্ডি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এদিকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দী লেখম মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর পর বাংলাদেশে এ আইন নিয়ে বিতর্ক এবং সমালোচনা অব্যাহত রয়েছে। অনেকেরই অভিযোগ এ আইন অধিকাংশ ক্ষেত্রে হয়রানির এবং অপব্যহারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আইন কার্যকরের মাত্র দুই বছরের মধ্যেই দাবি উঠেছে আইনটি একেবারে বাতিল করে দেয়ার।
হয়রানি নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ
বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গত দুই বছরে সাংবাদিক, রাজনীতিক, শিল্পী, অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, গার্মেন্টসকর্মী থেকে শিক্ষক ছাত্র পর্যন্ত আসামী হয়ে জেল খেটেছেন। এ আইন নিয়ে বিতর্ক এবং উদ্বেগের মূল কারণ হিসেবে বলা হয় বেশকিছু ধারার মাধ্যমে যথেচ্ছা হয়রানির সুযোগ রয়েছে।
এ আইনের ৪৩ ধারায় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি, জব্দ এবং আটকের অসীম ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। আর আইনে ব্যাক্তি বা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তী ক্ষুণ্ন করা, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত বা উস্কানি, মানহানিকর তথ্য প্রচার ও প্রকাশ এবং আইন শৃঙ্খলার অবনতির মতো বিষয়গুলোতে বিভিন্ন ধারায় অপরাধ ও শাস্তির বিধান রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে ভুল ব্যাখ্যার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন অনেকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহনাজ হুদা বলেন, সংবিধানে নাগরিকদের স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার দিয়েছে। যেখানে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অনেক ক্ষেত্রে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে।
“সবার মধ্যে একটা ভীতি যে এইটা বললে কী হবে! এবং আমরাও বলি যে এতকিছু বলো না তোমার বিপদ হবে। এটা স্বাধীন দেশে আমরা কেন করবো? এটা কিন্তু বেশ স্বার্থকভাবে সরকার করে ফেলেছে। সেল্ফ সেন্সরশিপ একটা ভীতি প্রদর্শন, ভীতি মানুষের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া।”
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৪৫৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ