বর্তমান সরকারের অন্যতম অর্জন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর সফল উৎক্ষেপণ। দেশের প্রথম এই কৃত্রিম যোগাযোগ উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট ২০১৮ সালের ১১ই মে যুক্তরাষ্ট্রেও কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে স্যাটেলাইট ক্লাবের ৫৭তম গর্বিত সদস্যে। এটি তৈরির সঙ্গে যুক্ত ছিল ফ্রান্সের একটি প্রতিষ্ঠান। তবে বিনিয়োগের টাকা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। আন্তর্জাতিক বাজারকে প্রথমে টার্গেট করা হলেও এখন টার্গেট করা হয়েছে অভ্যন্তরীণ বাজার। আবার এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ নিয়ে পরিকল্পনা করছে সরকার।
বিনিয়োগের টাকা উঠাতে ভোগান্তি
বিনিয়োগের প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা উঠানোর টার্গেট করা হয়েছিল ৭ বছরের মধ্যে। তবে বিশ্ববাজারে স্যাটেলাইট ব্যান্ডউইথের দাম কমে যাওয়ায় টার্গেট দামে আর ব্যবহার করা যায়নি বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১কে। তাই খরচ উঠানোর নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ বছর।
প্রথমে বড় টার্গেট ছিল আন্তর্জাতিক বাজার নিয়ে। শুরুর দিকে বেশ কয়েকটি দেশ আগ্রহ দেখায়। বাংলাদেশও তাতে ইতিবাচক সাড়া দেয়। শুরু হয় দরদাম। কিন্তু এরই মধ্যে পরিস্থিতি পাল্টায়।
পরিস্থিতি বিবেচনায় আন্তর্জাতিক বাজার ধরতে না পারলেও অভ্যন্তরীণ বাজারকে টার্গেট করা হয়েছে। এরই মধ্যে দেশের টেলিভিশনগুলো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবহার করে সুফল পাচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১
স্যাটেলাইটটি পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল) জানিয়েছে, প্রথমদিকে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো কিছুটা কারিগরি ত্রুটির মধ্যে থাকলেও এখন সেসব কাটিয়ে উঠেছে। এখন তারা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ব্যবহার করে সর্বোচ্চ মানের সেবা দিতে পারছে।
২০১৯ সালে দেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ (বিএস-১) উৎক্ষেপণের বর্ষপূর্তি ও সেবা বিপণন কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করে। প্রথম দিনেই যমুনা টিভি, সময় টিভি, দীপ্ত টিভি, বিজয় টিভি, বাংলা টিভি ও মাই টিভি এবং সোনালী ব্যাংক ও ডাচ-বাংলা ব্যাংক স্যাটেলাইটের সেবা নেয়ার জন্য সমঝোতা স্মারক সই করে। পরে দেশের অন্যান্য টেলিভিশনগুলোও স্যাটেলাইট ব্যবহার শুরু করে।
এদিকে ব্যাংকের বুথগুলো স্যাটেলাইটের ব্যান্ডউইথ ব্যবহার করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তারা ব্যবহার শুরু করেনি। তবে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে দেশের প্রায় সব কয়টি ব্যাংক বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ব্যান্ডউইথ ব্যবহার শুরু করবে বলে জানিয়েছে বিএসসিএল।
স্যাটেলাইটের তিন বছরের অর্জন প্রসঙ্গে বিএসসিএল-এর চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট হচ্ছে বর্তমান সরকারের একটি বড় অর্জন। স্যাটেলাইটটি বাংলাদেশের জনগণের আবেগের সঙ্গে মিশে গেছে। এটি এখন সম্পুর্ন আমাদের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে। মহাকাশে অনেক স্যাটেলাইট হারিয়ে যায়। আমাদেরটি সঠিক জায়গায় অবস্থান করে সঠিকভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা এখন স্যাটেলাইটের অভ্যন্তরিন বাজার বিস্তৃতি নিয়ে কাজ করছি। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্যাটেলাইটের ব্যান্ডউইথ ব্যবহার শুরু করেছি। বাণিজ্যিকভাবেও এগোনোর চেষ্টা করছি। আশা করি ১০ বছরের মধ্যে বিনিয়োগের টাকা উঠে আসবে। এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। ২০২৩ সালে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। দেশের দ্বিতীয় স্যাটেলাইট (কৃত্রিম উপগ্রহ) তৈরি ও উৎক্ষেপণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ফ্রান্সের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২
বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কম্পানি লিমিটেডের (বিএসসিএল) সঙ্গে ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান ‘প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপার্স অ্যাডভাইজারি, এসএএসের সঙ্গে অনলাইনে এই চুক্তি সই হয়। পরবর্তী স্যাটেলাইট (বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২) তৈরি ও উৎক্ষেপণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে স্যাটেলাইটের ধরন নির্ধারণের জন্য পরামর্শক হিসেবে কাজ করবে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রথম স্যাটেলাইটের জন্য প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা খরচ হলেও দ্বিতীয়টির জন্য আনুমানিক খরচ হবে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে ড. শাহজাহান মাহমুদ বলেন, প্রথম স্যাটেলাইটটির অবস্থান অনেক দূরে। দ্বিতীয়টির অবস্থান থাকবে অনেক নিচে। সবকিছু ঠিক থাকলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দ্বিতীয় স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, প্রতিরক্ষা, আবহাওয়া, কৃষি এবং স্বাস্থ্যসহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২তে কী কী থাকা উচিত এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর লাইফ টাইম মাথায় রেখে স্বল্প মেয়াদি, মধ্য মেয়াদি এবং দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা ঠিক করতে কাজও শুরু হয়েছে। এতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ যথাসম্ভব ত্রুটিমুক্ত, প্রয়োজনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ এবং চাহিদা মেটানোর উপযোগী করতে বিশেষজ্ঞ পরামর্শের ভিত্তিতে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস১৫৪৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ