অক্সিজেনের অভাবে করোনা রোগীর মৃত্যুকে অপরাধমূলক কাজ এবং একটি গণহত্যার চেয়ে কম নয় বলে রায় দিয়েছেন ভারতের উত্তরপ্রদেশের একটি আদালত। মঙ্গলবার (৪ মে) রাজ্যে কোভিড-১৯ সংকট সংক্রান্ত এক মামলার শুনানিতে এ রায় দেন আদালতের বিচারপতির দ্বৈত বেঞ্চ।
ভারতে করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যের মধ্যে অন্যতম উত্তরপ্রদেশ। সেখানকার শীর্ষ আদালত এলাহাবাদ হাইকোর্ট এ রায় দেন। পরে আদালতের ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করা হয়েছে।
আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ‘হাসপাতালে শুধু অক্সিজেনের অভাবে করোনা রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় আমরা যন্ত্রণা পেয়েছি। এই ধরনের ঘটনা অপরাধমূলক এবং তা কোনও অর্থেই গণহত্যার থেকে কম নয়।
এ সময় উত্তরপ্রদেশ সরকারের সংকট সামাল দেওয়ার কঠোর সমালোচনা করে, রাজ্যের শীর্ষ আদালত অক্সিজেন সিলিন্ডার সংগ্রহ এবং অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য হাহাকার করা দরিদ্র লোককে হয়রানি করা হচ্ছে এমন কিছু ভিডিও দেখায়। বলেন, রাজ্য সরকারের দাবি একটি পর্যায়ে অক্সিজেনের সরবরাহ রয়েছে। কিন্তু এখানে সেটার সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র দেখাচ্ছে।
রাজ্যের মীরাট ও লখনৌতে ঘটে যাওয়া দুটি ঘটনার কথাও উল্লেখ করেন আদালত। সেখানে অক্সিজেনের অভাবে রোগীর মৃত্যু হয়েছিল। এই ঘটনায় তাত্ক্ষণিক প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি মামলা দুটির তদন্তেরও নির্দেশ দিয়েছেন।
ভারতে এক দিনে করোনায় মৃত্যুতে রেকর্ড
বিবিসি বলছে, বিশ্বে বর্তমানে করোনার সংক্রমণের কেন্দ্র ভারত। ভারতে সংক্রমণের ‘বিস্ফোরণের’ জন্য করোনার ভারতীয় ধরনকে অনেকাংশে দায়ী করা হচ্ছে। এ ছাড়া সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যেও নির্বাচন অনুষ্ঠান, ধর্মীয় উৎসব ও খেলাধুলার আয়োজনকে দায়ী করা হয়েছে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে—এমন আশঙ্কার কথা বিজ্ঞানীরা আগে জানালেও তাতে গুরুত্ব না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে।
এনডিটিভির তালিকা অনুসারে, ভারতে করোনার সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি মহারাষ্ট্রে। তারপর রয়েছে কেরালা, কর্ণাটক, উত্তর প্রদেশ, তামিলনাড়ু, দিল্লি, অন্ধ্র প্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ। ছত্তিশগড়, রাজস্থান, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ ও হরিয়ানার পরিস্থিতিও উদ্বেগজনক।
ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যাও বেড়েছে। দেশটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় তিন হাজার ৭৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এক দিনে কোভিড রোগীর মৃত্যুর এই সংখ্যা এখন পর্যন্ত সর্বাধিক। এ নিয়ে ভারতে মোট মৃত্যু হয়েছে দুই লাখ ২৬ হাজার ১৮৮ জনের। মোট মৃত্যুর হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলেরক পরই রয়েছে ভারত। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
এ ছাড়া তিন ধরে কিছুটা কমার পর গত ২৪ ঘণ্টায় আবারও বেড়েছে ভারতে দৈনিক করোনার সংক্রমণ। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে তিন লাখ ৮২ হাজার ৩১৫ জন। যা এর আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় প্রায় ২৫ হাজার বেশি। ভারতে মোট কোভিড আক্রান্ত এরই মধ্যে দুই কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পর কেবল ভারতে মোট আক্রান্ত দুই কোটির বেশি। ভারতের পেছনে থাকা ব্রাজিলে মোট আক্রান্ত এখনও দেড় কোটি ছাড়ায়নি। বিশ্বের অন্য কোনো দেশে এক কোটিও ছাড়ায়নি আক্রান্তের সংখ্যা।
দেশটিতে করোনা রোগীর সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকায় চাপ সামাল দিতে হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে। হাসপাতালে পাওয়া যাচ্ছে না শয্যা। অনেকের অবস্থা গুরুতর হলেও হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন না। ঘরে রেখে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাবে রোগীদের মৃত্যুর খবর আসছে প্রায় প্রতিদিনই। বিদেশ ও দেশের অন্য এলাকা থেকে অক্সিজেন এনে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে ভারতের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। ভারতের করোনা সংকটে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, সৌদি আরব, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি দেশ ও সংস্থা জরুরি চিকিৎসাসহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। বিদেশি সহায়তা ভারতে পৌঁছাচ্ছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৪১১
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ