দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পুলিশের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ আসা অব্যাহত রয়েছে। কোথাও কোথাও মাদকের সাথে সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগ আসে পুলিশের বিরুদ্ধে, কোথাওবা অস্ত্র বিক্রয়কারী হিসাবে, কোথাওবা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ, অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ, পুলিশের নেতৃত্বে মাদক পাচার চক্র গড়ে ওঠার অভিযোগ, চুরি ডাকাতি ইত্যাদি হেন কোনো অপরাধ নেই যা পুলিশ শব্দটির সাথে জুড়ে বসে নাই। প্রতিদিনই পুলিশের বিরুদ্ধে এমনসব অভিযোগ আসে।
নিয়মিত খবরের মতোই এবার কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় এক হাজার ৯৪৫টি ইয়াবা বড়িসহ আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশের (এপিবিএন) তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার তাজনিমারখোলা রোহিঙ্গা শিবির থেকে এপিবিএনের কর্মকর্তারাই ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করেন। পরে তাদের উখিয়া থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, ৮ এপিবিএন কর্মরত এসআই সোহাগ ও দুই কনস্টেবল মিরাজ ও মো. নাজিম।
পুলিশ ও রোহিঙ্গা সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন সময় রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করেন এসআই সোহাগ। সম্প্রতি উদ্ধার করা কিছু ইয়াবা বিক্রি করে দিতে তাজনিমারখোলা আশ্রয় শিবিরের (ক্যাম্প-১৩ ব্লক-এ) রোহিঙ্গা নেতা মো. একরামকে চাপ দিতে থাকেন এসআই সোহাগ। একরাম এ বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ করলে এসআই সোহাগ নানাভাবে তাকে হুমকি দেন। বিষয়টি একরাম ৮ এপিবিএন ব্যাটালিয়নের সিনিয়র এএসপি কামরুল ইসলামকে জানান। পরে এপিবিএন কর্মকর্তারা অনুসন্ধানে মাঠে নেমে এক হাজার ৯৪৫টি ইয়াবা, কিছু জাল নোটসহ ওই তিন আর্মড পুলিশ সদস্যকে আটক করেন।
এসপি শিহাব বলেন, মো. একরাম (৩৮) নামে এক রোহিঙ্গাকে ইয়াবা বিক্রির জন্য চাপ দিয়ে আসছিলেন এসআই সোহাগ। এতে রাজি না হওয়ায় তাদের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। অভিযোগ পেয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এপিবিএনের একটি দল অনুসন্ধান চালায়। পরে এসআই সোহাগের ঘরে অভিযান চালিয়ে লুকিয়ে রাখা এক হাজার ৯৪৫টি ইয়াবা ও কিছু জাল টাকা পাওয়া গেছে। এর সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে এসআই সোহাগ ও দুই কনস্টেবলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান এসপি শিহাব কায়সার খান।
আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) -৮এর অধিনায়ক শিহাব কায়সার খান গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। ইয়াবা সম্পৃক্ততার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর রাত ১০টার দিকে গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলার দায়ের করে উখিয়া থানায় হস্তান্তর করা হয় হয়েছে।
এ ছাড়াও আরও কেউ মাদকের সঙ্গে জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মাদকের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীঘোষিত জিরো টলারেন্স নীতি বাস্তবায়নে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহমেদ সঞ্জুর মোরশেদ বলেন, ইয়াবাসহ আটক এপিবিএনের তিন সদস্যের বিরুদ্ধে গতকাল রাতে থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, অস্ত্র, মাদক চোরাচালান ও ব্যবসায়ের সঙ্গে পুলিশের জড়িয়ে পড়াতে সমাজে অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে। লোকজনের নিকট পুলিশ ভরসা হারিয়ে এখন মাদক সিন্ডিকেট ও সন্ত্রাসী সংগঠন ভিন্ন অন্যকিছু নয়। অস্ত্র ও মাদকের সঙ্গে একেরপর এক পুলিশের জড়িয়ে পড়াতে এক রকম আতঙ্ক বিরাজ করছে সমাজে। পুলিশের আইজিপি নিয়মিতই বলে যাচ্ছেন মাদকের সঙ্গে পুলিশের সংশ্লিষ্টতা থাকলে কোনো ছাড় নেই, যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েই শুদ্ধি অভিযান চালাতে চান তিনি। অথচ মাদক ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে পুলিশ জড়িয়ে পড়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন লোকজন। নিজেদের শুদ্ধ করতে পারছেন না যে বাহিনী, অন্যান্য অপরাধ পুলিশ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারে, লোকজন এমন ভরসা হারিয়ে ফেলেছেন বলে মনে করেন তারা।
তারা বলছেন, পুলিশের ভূমিকায় মানুষের নিশ্চিন্ত থাকার কথা থাকলেও এখন আতঙ্কে ভোগেন। দেশে সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী, ধর্ষক ও ডাকাতির ভূমিকায় নেমে পড়া পুলিশ বাহিনী নিয়ে দেশে এক রকম আতঙ্ক চলছে। ক্ষমতার অপব্যবহারের পাশাপাশি পুলিশের অস্ত্র ও মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ায় উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়ে দেশে এক রকম বিরুদ্ধমত চলছে। আর এর পেছনে রয়েছে তাদেরই জোরালো ভূমিকা। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পুলিশের থাকার কথা থাকলেও পুলিশ নিজেই এখন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। যাদের রক্ষা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাদের এহেন ভক্ষকের ভূমিকায় স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্কে আছে দেশবাসী। এ থেকে উত্তরণের জন্য পুলিশ বাহিনীকেই উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি সরকারের কড়া নজরদারিও দাবি করেন বিশেষজ্ঞরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭০৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ