দুইদিন ধরে নিখোঁজ হেফাজতে নেতা মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদীর সন্ধান পাওয়া গেছে। নিখোঁজ থাকা ইসলামাবাদী বর্তমানে ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে রয়েছেন। আজ সোমবার(১২ এপ্রিল) দুপুরে আজিজুল হকের ছোটভাই ফয়েজুল হক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে বিষয়টি জানিয়েছেন।
তবে মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) দাবি, ২০১৩ সালে রাজধানীর মতিঝিলে জ্বালাও-পোড়াও মামলায় হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীকে গ্রেপ্তার করেছে। আজ সোমবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) যুগ্ম-কমিশনার মো. মাহবুব আলম গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের জ্বালাও-পোড়াওয়ের অভিযোগে আজিজুল হক ইসলামাবাদীর বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা হয়। ওই মামলায় গতকাল (রোববার) ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক কর্মকর্তা টেলিফোনে জাতীয় এক দৈনিককে জানান, চট্টগ্রাম থেকে তাকে আটক করা হয়েছে। ঢাকায় হেফাজতের একটি মামলায় তাকে আটক দেখানো হয়েছে। আজই তাকে বিজ্ঞ আদালতে সোর্পদ করা হবে।
এর আগে সোমবার (১২ এপ্রিল) দুপুরে ইসলামাবাদীর ছোট ভাই ফয়েজুল হক তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে লেখেন, ‘বড়ভাই হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। তিনি ঢাকা ডিবি অফিসে আছেন, সুস্থ আছেন। উদ্বিগ্ন না হয়ে সবাই ভাইয়ের জন্য দোয়া করবেন।’
চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক হয় রোববার। বৈঠকে অংশ নেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী। বৈঠক শেষে চট্টগ্রামের চকবাজারের বাসায় ফেরার পথে ‘নিখোঁজ’ হন ইসলামাবাদী। এই দাবি করেছে তার পরিবার। সোমবার দুপুর দেড়টা পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান পায়নি পরিবার। তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করেছে কিনা বা গুম হয়েছেন কিনা সেটি নিয়ে উৎকণ্ঠায় ছিল পরিবার।
হেফাজত নেতা আজিজুল হক ইসলামাবাদী চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার হরিণখাইন এলাকার মাওলানা সৈয়দ আহমেদের বাড়ির হাফেজ আহমদ উল্লাহর ছেলে। তিনি ছয় ভাইবোনের মধ্যে সবার বড়। তিনি পরিবার-পরিজন নিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন।
ইসলামাবাদীর ছোট ভাই ফয়েজুল হক জানান, রোববার হাটহাজারী মাদ্রাসায় হেফাজতের বৈঠকশেষে মাগরিবের নামাজ পড়ে আমার ভাই মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী চট্টগ্রামের চকবাজারের বাসার উদ্দেশে রওনা দেন। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদও তার সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের যোগাযোগ হয়। এ সময় তিনি জানিয়েছেন, বাসার দিকে রওনা হয়েছেন; তার সঙ্গে একজন সফরসঙ্গী রয়েছে।
রাত ৮টার দিকে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। সারারাত মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজ নিয়েও তার কোনো সন্ধান পায়নি পরিবার। তবে সোমবার ভোর ৪টা থেকে ইসলামাবাদীর বন্ধ থাকা মোবাইল সচল হলেও ফোন রিসিভ হচ্ছে না। এমতাবস্থায় পরিবারের সদস্যরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ছিলেন বলে জানান ইসলামাবাদীর ছোটভাই মুহাম্মদ ইরফানুল হক।
এদিকে নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে নিখোঁজ হওয়া হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদীর সঠিক সন্ধান এবং কেন্দ্রীয় সহ-অর্থ সম্পাদক মুফতি ইলিয়াস হামিদি সহ আটককৃত সকল নেতাকর্মীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটির মহাসচিব আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদী। আজ সোমবার সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এ দাবি জানান।
নুরুল ইসলাম জিহাদী বলেন, রোববার হাটহাজারীতে অনুষ্ঠিত হেফাজতে ইসলামের বৈঠক শেষে ঢাকায় ফেরার পথে নারায়ণগঞ্জের মদনপুর থেকে হেফাজতের কেন্দ্রীয় সহ-অর্থ সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরের সহ-সভাপতি মুফতি ইলিয়াস হামিদিকে আটক করেছে র্যাব। একই বৈঠক থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে আশ্চর্যজনক ভাবে নিখোঁজ হয়েছেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী। গতরাত থেকে এখন পর্যন্ত তার কোন খবর পায়নি পরিবার। তার মোবাইল -ফোন এবং তার সাথে থাকা ব্যক্তির মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকেও তাকে গ্রেপ্তারের কোন খবর পাওয়া যায়নি। মাওলানা ইসলামাবাদী কি গ্রেপ্তার হয়েছেন নাকি তাকে গুম করা হয়েছে তা নিয়ে আমরা চিন্তিত। হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে হেফাজত নেতৃবৃন্দকে এভাবে গ্রেপ্তার ও গুম করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া সকল নেতৃবৃন্দকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।
তিনি বলেন, আসন্ন পবিত্র রমজান মাস। রহমত,বরকত ও নাজাতের মাস। এ মাসকে সামনে রেখে ওলামায়ে কেরামকে গ্রেপ্তার ও হয়রানি কোনভাবে সহ্য করা যায় না। দেশের তৌহিদি জনতা এসব সহ্য করবে না। নিরীহ নিরস্ত্র মানুষদের উপর হামলা মামলা বন্ধ না হলে দেশের সর্বস্তরের জনগণ এই জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বাধ্য হবে।
তিনি আরো বলেন, একজন নাগরিকের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্র, সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্ব। রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা পাওয়া একজন নাগরিকের নৈতিক অধিকার। প্রায় ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে মাওলানা ইসলামাবাদী নিখোঁজ থাকার ঘটনা রাষ্ট্র কর্তৃক একজন নাগরিকের নিরাপত্তা অধিকারকে চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী নিখোঁজের দায়ভার রাষ্ট্র, সরকার ও প্রশাসনকেই নিতে হবে।
রোববার হাটহাজারী মাদ্রাসায় হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতাদের বৈঠক শেষে চট্টগ্রামের বাসায় ফেরার পথে ‘নিখোঁজ’ হন ইসলামাবাদী। সোমবার বেলা দেড়টা পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না বলে দাবি পরিবারের। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, ইসলামাবাদীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি ঢাকায় ডিবি কার্যালয়ে আছেন বলে ইসলামাবাদীর ছোটভাই মুহাম্মদ ইরফানুল হককে জানানো হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৬০৭
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ