মাদ্রাসায় শিশু নির্যাতনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী এখনো আলোচনা-সমালোচনা চলছে। মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে কিভাবে সংস্কার করা যায় এনিয়ে চলছে জোর জল্পনা কল্পনা। এসবের মাঝেও প্রতিদিনকার নিয়মিত সংবাদের মতো মাদ্রাসা শিক্ষক কর্তৃক মাদ্রাসাছাত্রের ধর্ষণের সংবাদ এসেছে। সাতক্ষীরার কালীগঞ্জে এক ছাত্রকে ধর্ষণের ছবি তুলে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে করা মামলায় মাদ্রাসাশিক্ষক আনোয়ারুল ইসলামকে (৩৩) বৃহস্পতিবার কারাগারে পাঠানো হয়েছে। বুধবার (৭ এপ্রিল) রাতে উপজেলার কফিল উদ্দীন হাফিজিয়া মাদ্রাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক ইয়াছিন আলম চৌধুরী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। হাফেজ আনোয়ারুল ইসলাম (৩৩) উপজেলার কালিকাপুর মোড়লপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল জব্বার মোড়লের ছেলে ও স্থানীয় একটি মাদরাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষক।
পুলিশ জানায়, মাদরাসা শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম তারই মাদরাসার ১৬ বছরের এক ছাত্রকে ধর্ষণ করে। গত ৩-৪ দিন আগে সেই ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযানে চালিয়ে ওই মাদরাসা শিক্ষককে তার মাদরাসার শয়নকক্ষ থেকে গ্রেফতার করে। এসময় তার কাছ থেকে একটি স্মার্ট মোবাইল ফোন ও দুটি সিমকার্ড জব্দ করা হয়। ওই মোবাইলে ওই শিশুসহ আরও কয়েকজন শিশুর সঙ্গে তার বিকৃত যৌনাচারের ছবি পাওয়া যায়।
পরিদর্শক ইয়াছিন আলম চৌধুরী বলেন, এ ঘটনায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক হুমায়ন কবির বাদী হয়ে পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেছেন। ওই মামলায় আনোয়ারুল ইসলামকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এই শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রদের ধর্ষণ করে ছবি তুলে রাখেন। তাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে আবারও ধর্ষণ করতেন তিনি। গ্রেপ্তার মাদ্রাসাশিক্ষককে আজ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া এক মাদ্রাসা ছাত্রকে (১১) ধর্ষণের পর কাউকে না জানাতে শপথ করানো হয়। এমনই অভিযোগ উঠেছে মাদ্রাসার মোহতামিমের (প্রধান শিক্ষক) বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে থানায় মামলাও হয়েছে। বুধবার রাত ১১টায় ঐ ছাত্রের বাবা বাদী হয়ে কুলিয়ারচর থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় আসামি করা হয়েছে মাদ্রাসার মোহতামিম হাফেজ মাওলানা ইয়াকুব আলীকে (৩২)।
তিনি উপজেলার উছমানপুর গ্রামের আবদুল কাদিরের ছেলে এবং কুলিয়ারচর পৌর এলাকার বড়খারচর আদর্শ নূরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসার মোহতামিম। মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুস সাত্তার জানান, তিনি ঘটনাটি শুনেছেন। কমিটির সভা ডেকে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুলিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একেএম সুলতান মাহমুদ জানান, এ ঘটনায় ভিকটিমের বাবা বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। আসামিকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
বাংলাদেশে এখন ছেলে শিশু ধর্ষণ উদ্বেগজনক হারে বড়ে গেছে৷ কিন্তু ধর্ষকদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়ার তেমন কোনো নজির দেখা যায় না। প্রায় সমস্তটাই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কিংবা মাতব্বর কর্তৃক শালিসে বিচারের মাধ্যমে সুরাহা করা হয়। তবে এবিষয়ে আইনে সুস্পষ্টভাবে তেমন কিছু নেই বলে অনেকে দাবি করলেও আইন বিশেষজ্ঞরা জানান, একটা ভুল ধারণা চলে আসছিলো যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে শুধু নারী ও মেয়ে শিশু ধর্ষণের শিকার হলেই বিচার করা যাবে৷ কিন্তু এই আইনের সংজ্ঞায় শিশু বলতে ছেলে বা মেয়ে আলাদা করা হয়নি৷ ১৬ বছর পর্যন্ত সব শিশুকেই বুঝানো হয়েছে৷ শিশু আইনেও শিশুদের কোনো লিঙ্গ ভাগ করা হয়নি৷ তাই ১৬ বছর পর্যন্ত কোনো ছেলে শিশু যদি ধর্ষণের শিকার হয় তাহলে ধর্ষণ মামলাই হবে৷ যার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড৷
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, আলিয়া মাদ্রাসা ছাড়া অন্য মাদ্রাসাগুলোতে সরকারের নিয়ন্ত্রণ বা তদারকি সেভাবে নেই। সেজন্য যৌন নির্যাতন বা শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের সুযোগ থাকে। এছাড়া সেখানে পরিবেশ এমন যে, শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ অনেক সময় প্রকাশও হয় না। কওমি, এবতেদায়ী বা নূরানী-বিভিন্ন ধরনের মাদ্রাসা পরিচালনার জন্য বেসরকারি উদ্যোগে কর্তৃপক্ষ যারা রয়েছে, তাদের তদারকি বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৯৪৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ