বিশেষ প্রতিবেদক : এক ঢিলে কি দুই পাখি মারল ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ? করোনা সংক্রমণ রোধে দেশজুড়ে লকডাউনের ঘোষণায় মাটি চাপা পড়লো হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন। তবে করোনা মহামারিতে এই ঢিলেঢালা লকডাউনে হুমকির মুখে পড়ছে সাধারণ মানুষের জীবন। এই অপরিকল্পিত লকডাউন করোনা সংক্রমণের হার কমাতে নিশ্চিতভাবে কোনও প্রভাব ফেলতে পারছে না। তবে হেফাজতে ইসলামের পরিকল্পনায় থাকা বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যে পানি ঢেলে দিয়েছে, এব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। একই সাথে দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাও নিয়ন্ত্রণে নিজেকে সামলে নেয়ার সুযোগ পেল সরকার। তাই বলা যায় এই লকডাউন এক প্রকার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।
করোনায় মুখ থুবড়ে পড়েছে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা। সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার আগেই টেনে ধরা দরকার লাগাম। প্রয়োজন কঠোর লকডাউন। জনসচেতনতা। আইন রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা। প্রশাসনিক সুব্যবস্থাপনা। কিন্তু সরকার ঘোষিত ৭ দিনের লকডাউন প্রহসন হয়ে উঠেছে সারাদেশে। গণপরিবহন থেকে শুরু করে খোলা আছে সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত। আগামীকাল থেকে খুলে যাচ্ছে দোকানপাট। কিন্তু করোনার সংক্রমণের হার কমেনি। আক্রান্তের হার বাড়ছে প্রতিদিন। বাড়ছে মৃত্যুর হার।
“লকডাউনে গতবারের মতো কঠোর হতে এবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।”
গত চব্বিশ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৭৪ জন। করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৬ হাজার ৮৫৪ জন। অথচ লকডাউন কার্যকরে সরকারের ঢিলেঢালা নজরদারি প্রশ্নের সম্মুখীন করছে এই লকডাউনের প্রকৃত উদ্দেশ্যকে। লকডাউনের আগের সপ্তাহেই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠান উদযাপন এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলার ঘটনায় তেঁতে ওঠে সারাদেশ। হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘটা সংঘর্ষে ১৮ জন নিহত হয়।
এরপর হেফাজতে ইসলাম যে কঠোর আন্দোলনে যাবে, তা ছিল অনুমেয়। পরিস্থিতি সামলাতে সরকারের পদক্ষেপের দিকে নজর ছিল সারাদেশের। তবে করোনার সংক্রমণ রোধে লকডাউনের সিদ্ধান্ত সরকারের জন্য ছিল অনেকটা সাপ মরলো, কিন্তু লাঠি ভাঙলো না।
কওমি মাদ্রাসা বন্ধ নিয়ে পূর্বানুমান
এদিকে করোনার দোহাই দিয়ে কওমি মাদ্রাসার কার্যক্রম বন্ধের পাঁয়তারা করতে পারে সরকার, এমন দাবি জানিয়ে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিল হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরের সভাপতি মাওলানা জোনায়েদ আল হাবীব।
গত শুক্রবার (২ এপ্রিল) বাদ জুমা রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে হেফাজতে ইসলাম আযোজিত বিক্ষোভ সমাবেশে এই হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
তিনি বলেন, সরকারের প্রজ্ঞাপনে কওমি মাদ্রাসা বন্ধের কোনো নির্দেশনা নেই। তবে এই করোনার দোহাই দিয়ে কওমি মাদ্রাসা বন্ধ ও ইসলামী সভা-সমাবেশ বন্ধ করার চেষ্টা চলছে। যদি এবার করোনার দোহাই দিয়ে মাদ্রাসা বন্ধ করা হয় তবে রাজপথে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
মাওলানা জোনায়েদ আল হাবীব বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিটি গ্রামের বাড়ি-ঘরে মানুষ রাতে ঘুমাতে পারে না। পুলিশ বাহিনী প্রত্যেক রাতে গ্রামের বাড়িগুলোতে তল্লাশি চালায়। যারা নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারের স্বজনরাও রাতে বাড়িতে থাকতে পারে না। তাদের পরিবার আতংকিত। আজ তাদেরই গ্রেফতার করা হচ্ছে।
কঠোর আন্দোলনের হুমকি
শুক্রবার (২ এপ্রিল) জুমার নামাজ শেষে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে কঠোর কর্মসূচির হুমকি দিয়েছিলেন হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হক।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, হেফাজতের শান্তিপূর্ণ হরতালে পুলিশ হামলা করেছে। গুলি করে আমার ভাইদের হত্যা করা হয়েছে। আর হামলার দায় চাপানো হচ্ছে আমাদের ওপর। হেলমেট বাহিনীকে গ্রেপ্তার করুন, আমরা হামলাকারীদের বিচার চাই। বিনা উসকানিতে যারা জনতার ওপর হামলা করেছিল তাদের কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। অবিলম্বে হাটহাজারি থানার ওসিকে প্রত্যাহার করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা শান্ত আছি, আমাদের শান্ত থাকতে দিন। আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর মামলা হামলা হয়রানি বন্ধ করেন। খবর পাচ্ছি আমাদের নেতাকর্মীদের ঘরেবাড়িতে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। আর একজন নেতাকর্মীকে যদি গ্রেপ্তার করা হয়, কোনো সমাবেশে হেলমেট বাহিনী হামলা করে তাহলে আমরা কঠোর কর্মসূচি দেব।
আবাসিক-অনাবাসিক সব মাদ্রাসা বন্ধের নির্দেশ
কওমি মাদ্রাসাসহ দেশের সব মাদ্রাসা পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বিষয়টি জানানো হয়।
এতে বলা হয়, দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় মাদ্রাসাসহ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে গত ২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে। আগামী ২২ মে পর্যন্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তের কথাও জানায় সরকার।
দেশের বিভিন্ন জায়গায় কিছু আবাসিক ও অনাবাসিক মাদ্রাসা এখনও খোলা আছে উল্লেখ করে মন্ত্রণালয় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত কওমি মাদ্রাসাসহ (এতিমখানা ছাড়া) সব মাদ্রাসা (আবাসিক ও অনাবাসিক) বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে।
এই নির্দেশ পালনে কোনো ধরনের শৈথিল্য দেখানো যাবে না বলেও উল্লেখ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
অপরিকল্পিত লকডাউন: প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক
এদিকে করোনার সংক্রমণ রোধে চলমান লকডাউন কার্যকর নয় বরং অপরিকল্পিত বলে মন্তব্য করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ।
তিনি বলেন, তাড়াহুড়ো করে হঠাৎ করে লকডাউন ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এটা অপরিকল্পিত হয়ে গেছে। প্র্যাকটিক্যালি এটা লকডাউন হয়নি। লকডাউন যেদিন ঘোষণা করা হলো সেদিন মানুষ গ্রামে চলে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ছুটির উৎসব। এটা লকডাউন হয়নি। এটা ছুটি হয়েছে। গ্রাম এলাকাগুলো ভালো ছিল।
এখন শহরের মানুষ গ্রামে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দিচ্ছে। এটা কোনো লকডাউনই হয় নাই, বলতে পারেন কয়েকদিনের জন্য ছুটি।
তিনি বলেন, আমাদের সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে। এই সংক্রমণ দ্বিতীয় ধাপে এটি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। কবে যে আরো বেড়ে পিক হবে এরপর কমা শুরু করবে। আগামী কয়েকদিন পর বোঝা যাবে আমরা কোন।পর্যায়ে আছি। আমরা এখনও পিকে উঠিনি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটা ঢিলেঢালা ভাব ছিল।
ডা. আব্দুল্লাহ বলেন, এটা লকডাউনই হয় নাই। লকডাউন দেয়ার আগেই কার্যকরী উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন ছিল যাতে মানুষ লকডাউন মানতে বাধ্য হয়। আর সাতদিনে কোনো লকডাউন হয় না। দিলে কমপক্ষে ১৪ দিন দিতে হয়। তারা মিটিং করবে- যদি মনে করে সাতদিনের লকডাউনে কাজ হয়েছে তবে বাড়াবে। আসলে কোনো কাজ হচ্ছে বলে আমার মনে হয় না।
সারাদেশে অকার্যকর লকডাউন!
করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে বাংলাদেশ সরকার যে ‘লকডাউন’ ঘোষণা করেছে সেটি দ্বিতীয় দিনেই কার্যত ভেঙ্গে পড়ে। লকডাউনের সময় দোকানপাট খোলা রাখার দাবিতে ঢাকার নিউমার্কেট এলাকায় মঙ্গলবার সকালে বিক্ষোভ করেছেন ব্যবসায়ীরা। প্রথম দিন থেকেই গণ-পরিবহন ছাড়া স্থানীয়ভাবে প্রায় সব ধরনের পরিবহনই চলাচল করছে। বনানী, মহাখালী এবং মগবাজারসহ ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় কার্যত যানজট দেখা যায়।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর চট্টগ্রামেও লকডাউনের চিত্র বেশ ঢিলেঢালা। অত্যাবশ্যকীয় নয় এমন দোকানপাটও খোলা রয়েছে। গণপরিবহন ছাড়া সব ধরনের যানবাহন চলাচল করছে রাস্তায়। চট্টগ্রামের বাসিন্দা রাকিবউদ্দিন জানান, দোকানপাট খোলা থাকলেও ক্রেতার কম। কারণ লকডাউন ঘোষণা করার পরে বহু মানুষ শহর ছেড়ে তাদের গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন।
লকডাউনের দ্বিতীয় দিনেই রাজশাহী শহরে বেশিরভাগ দোকানপাট খোলা দেখা যায়। এর আগে লকডাউনের প্রথম দিন দোকান খোলা দাবিতে শহরের সাহেব বাজার মোড়ে ব্যবসায়ীরা সড়ক অবরোধ করেছিল। তবে শহরের আরডিএ মার্কেটের বেশিরভাগ দোকান খোলা থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা কম। আবার ক্রেতা একেবারে নেই এ কথা বলা যাবে না। ব্যবসায়ীরা যেভাবে দোকানপাট খুলেছে সেটিও এক ধরনের প্রতিবাদের মতোই।
এদিকে সিলেটের পরিস্থিতি দেখে লকডাউন বোঝা যাইনি। দোকানপাট খোলা রাখার দাবিতে সিলেট শহরে ব্যবসায়ীরা মঙ্গলবার বিক্ষোভ করেছে। শহরের প্রধান শপিং-মলগুলো বন্ধ থাকলে অন্যান্য দোকানপাট খোলা হয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় নয় এমন দোকান খোলা আছে। শহরে যানবাহন বেড়েছে। গত বছর এরচেয়ে ভালো ছিল। সন্ধ্যের পরে দোকানপাটও বন্ধ হচ্ছে না।
লকডাউনে শপিংমলসহ অন্যান্য দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশ থাকলেও টাঙ্গাইলে তা পুরোপুরি মানা হচ্ছে না। সকাল থেকে বড়বড় ব্যবসা কেন্দ্র বন্ধ থাকলেও শহরের সর্ববৃহৎ ছাত্তার শপিংমল, স্বপ্ন শপিংমলসহ অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হয়েছে। এছাড়া শহরের নিরালার মোড়, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকা, জেলাসদর রোড, শান্তিকুঞ্জ মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হয়েছে।
দু’দিন পরেই স্বাভাবিক ঢাকার গণপরিবহন!
কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত লকডাউনের তৃতীয় দিন থেকে রাজধানীতে গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়। এর আগের দু’দিনের দুর্ভোগের পর অফিসগামীদের দাবির মুখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস চলাচলের সরকারি ঘোষণা বুধবার সকাল থেকেই বাস্তবায়ন করা হয়।
এদিন ভোর থেকেই সড়কে সরকারি ও বেসরকারি মালিকানাধীন গণপরিবহনের পাশাপাশি প্রাইভেটকার, জিপ, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, হিউম্যান হলার, ভ্যানগাড়ি ও রিকশা অবাধে চলাচল করছে।
এছাড়া রাস্তাঘাটে মানুষের উপস্থিতিও বহুলাংশে বেড়েছে। কোথাও কোথাও যানজটও লেগে যেতে দেখা গেছে।
গণপরিবহনগুলোতে অর্ধেক সিট ফাকা রাখা হচ্ছে। তবে কোথাও কোথাও বাস কম থাকায় অফিসযাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে দেখা গেছে।
সরকারি-বেসরকারি অফিসে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী, কারখানার শ্রমিক এবং জনসাধারণের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে গণপরিবহণ চলাচলে আরোপিত বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করে সরকার।
মঙ্গলবার সরকারি ঘোষণায় বলা হয়, আজ সকাল ৬টা হতে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের সব সিটি করপোরেশন এলাকায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস-মিনিবাস চলতে পারবে। তবে এসব বাস-মিনিবাসে অর্ধেক আসন ফাঁকা রাখতে হবে।
এ ক্ষেত্রে ভাড়া নির্ধারিত হারের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি কার্যকর হবে। মঙ্গলবার বিকালে নিজ বাসভবন থেকে এক অনলাইন ব্রিফিংয়ে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
লকডাউনের মধ্যে ঢাকায় ভারতের সেনাপ্রধানের সফর!
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের আমন্ত্রণে ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নরভানে পাঁচ দিনের সফরে ঢাকায় এসেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকায় পৌঁছান তিনি। ভারতীয় হাইকমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সফরকালে ভারতীয় সেনাপ্রধান বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও ভারপ্রাপ্ত বিমান বাহিনী প্রধান এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। তিনি কয়েকটি সামরিক ঘাঁটিও পরিদর্শন করবেন।
ভারতীয় সেনাপ্রধান ঢাকা সেনানিবাসে ‘শিখা অনির্বাণ’র বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।
ভারতীয় সেনাপ্রধান জাতিসংঘের শান্তির সমর্থনে অপারেশন সম্পর্কিত সেমিনারে অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন। তিনি যৌথ সামরিক অনুশীলন- শান্তির অগ্রসেনার সমাপনী অনুশীলন, হার্ডওয়্যার প্রদর্শনী ও সমাপনী অনুষ্ঠানেও উপস্থিত থাকবেন।
লকডাউনের আগের দিন সুজানগর পৌর নির্বাচন!
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যেই রবিবার (৪ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত হয় পাবনার সুজানগর পৌরসভা নির্বাচন।
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর ১৮ দফা নির্দেশনায় জনাসমাগম এড়িয়ে চলা এবং তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে শনিবার বিকালে সোমবার থেকে সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। কিন্তু তার ঠিক একদিন আগে পৌর নির্বাচন আয়োজনের এমন প্রস্তুতিতে বিস্মিত হন স্থানীয়রা।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় সম্প্রতি দেশের সব ধরনের নির্বাচনের পূর্বনির্ধারিত তফশিল স্থগিত করে নির্বাচন কমিশন। তবে সীমানা ও ভোটাধিকার জটিলতায় আটকে পড়া উচ্চ আদালতে দারস্থ হওয়া পক্ষ-বিপক্ষের রিটের প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন থেকে পরপর চারবার স্থগিত করা হয় পাবনার সুজানগর পৌরসভার নির্বাচন। তবে ৪ এপ্রিল নির্বাচনের ভোটগ্রহণের তারিখ দেওয়া হয়। যা স্থগিত করেনি নির্বাচন কমিশন।
শুক্রবার থেকে দোকান-বিপণিবিতান আট ঘণ্টা খোলা
করোনা পরিস্থিতিতে বন্ধ হওয়া শপিংমল ও দোকানপাট শুক্রবার থেকে খুলছে। বৃহস্পতিবার (৮ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
উপসচিব মোঃ রেজাউল ইসলামের স্বাক্ষরিত এই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ৯ থেকে আগামী ১৩ এপ্রিল সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কঠোর স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন সাপেক্ষে দোকানপাট ও শপিংমল খোলা রাখা যাবে। তবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ৫ এপ্রিল থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সাতদিনের বিধিনিষেধ আরোপ করে। এ সময়ে শিল্পকারখানা, সরকারি–বেসরকারি অফিস, ব্যাংক স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও দোকানপাট, গণপরিবহন বন্ধ রাখার কথা বলা হয়।
যদিও গতকাল বুধবার থেকে ঢাকাসহ অন্যান্য সিটি করপোরেশনে গণপরিবহন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চালু রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়।
লকডাউন বাস্তবায়নে ব্যর্থ সরকার
স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করেই মাস্ক ছাড়াই লকডাউনের নিষেধাজ্ঞা ভেঙে গতবছরের তুলনায় অনেক বেশি মানুষকে ঢাকার রাস্তায় যাতায়াত করতে দেখা যাচ্ছে।
বনানী থানার ওসি লিটন মতিন জানান, গতবছরের লকডাউনের চেয়েও বেশি মানুষকে এবার রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে দেখা যাচ্ছে। অধিকাংশ অফিসই খোলা, সেকারণে ঢাকার রাস্তায় অনেক বেশি মানুষকে যাতায়াত করতে দেখা যাচ্ছে। তবুও আমরা কিছু চেকপোস্ট বসিয়ে মানুষকে থামাচ্ছি এবং জিজ্ঞেস করছি যে তারা জরুরি কাজে বের হয়েছে কিনা।
ধানমন্ডি ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট ফরহাদ হোসেন জানান, তারা যখন লোকজনকে চেকপোস্টে থামান তখন সবাই বাসা থেকে বের হওয়ার যৌক্তিক কারণই দেখায়। কেউ কেউ অফিসে যাওয়ার কথা বলে আবার কেউ কেউ জরুরি সেবার কাজে যাচ্ছেন বলে জানান তারা।
এই ট্রাফিক কর্মকর্তা বলেন, জরুরি সেবার সঙ্গে জড়িত না থাকলে আমরা সবাইকে বাসায় ফিরে যেতে বলি। অনেকেই এইসময় অপ্রয়োজনীয় যাতায়াত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
মহাখালী জোনের ট্রাফিক সার্জেন্ট মহিদুল ইসলাম বলেন, লকডাউন সত্ত্বেও অধিকাংশ সরকারি এবং বেসরকারি অফিসই খোলা। তাই বাধ্য হয়েও চাকরিজীবীদের তাদের কর্মক্ষেত্রে যাওয়া লাগছে। দেখে মনে হচ্ছে গণপরিবহন ছাড়া আর সবকিছুই চলছে। তাই আমরা শুধু খেয়াল রাখছি, লোকজন সামাজিক দূরত্ব মানছে কিনা।
তিনি আরও বলেন, লকডাউনে সরকারি নির্দেশনা না মানায় মঙ্গলবার সকাল থেকে চারটি মামলা দায়ের হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে প্রাইভেট কার কিংবা সিএনজিতে করে ৩-৪ জন করে গেলে আমরা মামলা দিচ্ছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাতিরঝিলের একজন ট্রাফিক কর্মকর্তা বলেন, লকডাউনে গতবারের মতো কঠোর হতে এবার তাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, গতবারের মতো কর্মক্ষেত্রগুলো বন্ধ না থাকায় এবার রাস্তাঘাটে বেশি মানুষ দেখা যাচ্ছে। আমরা শুধুমাত্র সামাজিক দুরত্বের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি।
এসডব্লিউ/এসএস/১৯৩২
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ