স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনা করে লকডাউন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। সংস্থাটির মুখপাত্র ডা: মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলেন, মূলত সংক্রমণ কমিয়ে আনার জন্যই লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
যদি দেখা যায় যে, সংক্রমণ কমে আসছে তাহলে আরো কমাতে লকডাউন বাড়ানো হতে পারে। আবার যদি পরিস্থিতি উল্টো হয় যে, রোগী বাড়ে এবং হাসপাতালে জায়গা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না এমন পরিস্থিতি দাঁড়ায়, তাহলেও লকডাউন বাড়তে পারে। করোনা সংক্রমণের এমন পরিস্থিতিতে সোমবার থেকে সাত দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার।
লকডাউনের আওতায় গণপরিবহন, চিকিৎসা-সৎকার ছাড়া সন্ধ্যা ছয়টা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত ঘরের বাইরে যাওয়া, হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়া, শপিংমলে গিয়ে কেনাকাটার মতো বিষয়গুলোর উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
তবে লকডাউন থাকলেও কোয়ারেন্টাইনের শর্ত মেনে বিদেশ যাওয়া-আসা করা, জরুরি পণ্য ও সেবাদানকারী যানবাহন, সীমিত আকারে অফিস-আদালত ও শিল্প কারখানা খোলা, হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে খাবার কেনা, অনলাইন বা টেলিফোনে কেনাকাটা, পণ্য সরবরাহ, নির্দিষ্ট সময়ে উন্মুক্ত স্থানে বাজার বসা এবং সীমিত আকারে ব্যাংকিংয়ের মতো কাজ পরিচালনা করা যাবে।
এ অবস্থায় সাত দিনের লকডাউন সংক্রমণ কমিয়ে আনতে কাজ করবে কিনা সে বিষয় সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা: শর্মিলা হুদা বলেন, বাংলাদেশে লকডাউন দিয়ে সংক্রমণ কমানো সম্ভব নয়।
তিনি মনে করেন, লকডাউন মানে হচ্ছে নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে যেতে পারবে না। কিন্তু বাংলাদেশে সে বিষয়টি নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না।
ডা: শর্মিলা হুদা বলেন, লকডাউন দেয়ার উদ্দেশ্যই হচ্ছে সংক্রমণ কমানো। তবে এর প্রমাণ থাকতে হবে। আর এর একমাত্র উপায় হচ্ছে সবকিছুর হার কমবে।‘সংক্রমণের হার কম হবে, মৃত্যুর হার কম হবে, এটা দিয়েই তো বোঝা যাবে যে সংক্রমণ কম হচ্ছে।’ তিনি মনে করেন, সাত দিনের লকডাউনের মাধ্যমে আসলে সংক্রমণের হার কমিয়ে আনাটা সম্ভব নয়। এই সাত দিনের তথ্য বিশ্লেষণ করে হয়তো কিছুটা আন্দাজ পাওয়া যেতে পারে যে, পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে। তবে এই সাত দিনের লকডাউন দিয়ে কিছুই হবে না।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মুখপাত্র ডা: মোহাম্মদ রোবেদ আমিন বলেন, সংক্রমণ কমাতে হলে শুধু লকডাউনের মতো একটা পদ্ধতি দিয়ে কাজ হবে না। সেক্ষেত্রে সবগুলো পদ্ধতিই অনুসরণ করতে হবে।
লকডাউনের সাথে সাথে স্বাস্থ্যবিধিও মেনে চলতে হবে বলে মত দেন তিনি। পাশাপাশি করোনা সংক্রমণের পরীক্ষা করানো, কন্টাক্ট ট্রেসিং করা, আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইনের মতো বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে। সাথে ভ্যাকসিন দেয়া অব্যাহত রাখতে হবে। এসব বিষয় সমন্বিতভাবে নেয়া সম্ভব হলে করোনা সংক্রমণ কমিয়ে আনা যাবে বলে মনে করেন তিনি।
লকডাউন নয়, চলছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা
দেশে চলমান করোনা মহামারির বিস্তার ঠেকাতে চলমান সাত দিনের সরকারি নির্দেশনা লকডাউন নয়, এটি কঠোর নিষেধাজ্ঞা বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। সোমবার (৫ এপ্রিল) ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সচিবালয়ে দুপুরে ব্রিফিং করে এ কথা জানান তিনি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে ৭ দিনের যে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেওয়া হয়েছে তা লকডাউন নয়।
সচিব বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা বলেছি, আমরা লকডাউন ঠিক বলি নাই। আমরা বলে দিয়েছি অফিস-আদালত যত কম লোক দিয়ে অফিস চালাতে পারে। তবে দেখি আমরা ৭ দিন পর কী অবস্থা হয়। এরপর বৃহস্পতিবার আবার সিদ্ধান্ত নিব।’
সভায় রমজানে নতুন অফিস সময় সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। তিনি বলেন, ‘রমজানের সময় সকাল ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অফিস কার্যক্রম চলবে। এরমধ্যে সোয়া ১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত জোহরের নামাজের বিরতি থাকবে।’ চলমান ভ্যাকসিন কার্যক্রম নিয়েও সরকার প্রধান বৈঠকে নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
খন্দকার আনোয়ার বলেন, ‘ভ্যাকসিন কার্যক্রম ৮ তারিখ থেকে চলমান থাকবে কি না, এটা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। তবে এ বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কার করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভ্যাকসিন কার্যক্রম যে ৮ তারিখ থেকে শুরু হওয়ার কথা তা যথারীতি চলবে।’
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলেন, সরকারও আনুষ্ঠানিকভাবে লকডাউন বলছে না। এটাকে বলা হচ্ছে চলাচলের বিধি-নিষেধ বা নিয়ন্ত্রণ। তারা বলেন, যদি সংক্রমণের হার কমে আসে তাহলে এই পদক্ষেপ সফল বলে ধরা হবে। আর যদি সংক্রমণ বাড়ে তাহলে এটি ব্যর্থ বলে ধরা হবে। সেক্ষেত্রে আরো কিছু বিধিনিষেধ, আরো কিছু নিয়ম এবং জনগণের জন্য সহায়তা বাড়াতে হবে বলে মনে করেন তারা। এখনো পর্যন্ত সংক্রমণ বাড়তির দিকেই আছে। এটিকে কমিয়ে আনাটাই লকডাউনের উদ্দেশ্য।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২০০১
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ