করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় আগামী সোমবার (৫ এপ্রিল) থেকে সারাদেশ এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার।
শনিবার (৩ এপ্রিল) সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তার সরকারি বাসভবনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান। তিনি বলেন, সোমবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করছে সরকার।
করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং মাস্ক পড়া জরুরি কর্তব্য বলে মনে করে সেগুলো পালন করার আহ্বান জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী। তিনি বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সরকার ইতোমধ্যেই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। কিন্তু এখনো অনেকেই মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধির প্রতি অনিহা দেখাচ্ছে। যা প্রকারান্তরে ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে আসতে পারে। নিজেদের সুরক্ষায় সবাই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করাই এখন মূল কাজ।
সারাদেশে সোমবার থেকে শুরু হতে যাওয়া লকডাউনে জরুরি সেবার প্রতিষ্ঠান, কাঁচা বাজার ওষুধ ও খাবারের দোকানের পাশাপাশি পোশাক এবং অন্যান্য শিল্প কারখানা খোলা থাকবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। শনিবার দুপুরে গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা চাচ্ছি লকডাউনে যেন মানুষের চলাচল যতটাসম্ভব বন্ধ করা যায়। কারণ যেভাবে করোনা ছড়াচ্ছে তাতে মানুষের ঘরে থাকা জরুরি। তবে জরুরি সেবার প্রতিষ্ঠান, কাঁচা বাজার খাবার ও ওষুধের দোকান লকডাউনের আওতামুক্ত থাকবে।
প্রতিমন্ত্রী জানান, এছাড়াও পোশাক ও শিল্প কারখানাগুলো খোলা থাকবে। কারণ কারখানা বন্ধ হলে শ্রমিকদের বাড়িতে ফেরার বিষয় থাকে। এতে করোনার ঝুঁকি আরও বাড়বে। তবে কারখানায় শ্রমিকদের একাধিক শিফটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করতে হবে। লকডাউনের বিষয়ে আজকালের (শনি ও রোববার) মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি হবে বলেও জানান তিনি।
এর আগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার ১৮দফা নির্দেশনা দেয়। ইতিমধ্যে দেশের সব পর্যটন কেন্দ্র গুলো ১৪ ই এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশে এর আগে তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে লকডাউন চলেছে গত বছর। তবে ২৬শে মার্চ ২০২০ সালে শুরু হওয়া সেই লকডাউন পরিস্থিতিকে সরকার ‘সাধারণ ছুটি’ বলে অভিহিত করেছিল।
দেশজুড়ে ‘লকডাউন’ করার আগ পর্যন্ত আক্রান্ত বাড়ি, প্রয়োজনে জেলা-উপজেলা ইত্যাদি লকডাউন করা হয়েছিল।
২০২০ সালের ১৮ই এপ্রিল পর্যন্ত দেশের ২৯টি জেলা সম্পূর্ণ এবং ১৯টি জেলা আংশিকভাবে লকডাউন করা হয়েছিল। বিভিন্ন দেশের মত দেশজুড়ে ‘লকডাউন’ না হলেও সারা দেশেই অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মুক্তভাবে চলাচলের উপর বাধা আরোপ করা হয়েছিল। সারা দেশে সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত বাইরে বের হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল সরকার। একইসাথে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় চলাচল বন্ধের জন্যও প্রশাসন কড়াকড়ি আরোপ করেছিল।
এদিকে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ৬,৮৩০ জনের শরীরে। এটিই একদিনে সর্বাধিক শনাক্তের ঘটনা। এ নিয়ে মোট শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬,২৪,৫৯৪ জনে। এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় এই ভাইরাসে আরও ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৯ হাজার ১৫৫ জনে দাঁড়িয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার অধিদপ্তর জানায়, আগের ২৪ ঘণ্টায় ৬ হাজার ৪৬৯ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত এবং ৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সারা দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ২২৬টি পরীক্ষাগারে ৩০ হাজার ২৯৩টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। অ্যান্টিজেন টেস্টসহ পরীক্ষা করা হয় ২৯ হাজার ৩৩৯টি নমুনা।২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২৩.২৮ শতাংশ। মোট পরীক্ষায় এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ২১ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় মোট মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এর আগে বৃহস্পতিবার অধিদপ্তর জানায়, আগের ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ছিল ২২.৯৪ শতাংশ।
এদিকে, ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হয়েছেন আরও ২ হাজার ৪৭৩ জন। এ নিয়ে দেশে মোট সুস্থ ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৪১১ জনে। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৭ দশমকি ৬৪ শতাংশ। গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর ১৮ মার্চ প্রথম একজনের মৃত্যুর কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩৫৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ