টিকা নিয়ে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার মতো শঙ্কার কারণে যাদের বয়স ৫৫ বছরের কম তাদেরকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার উদ্ভাবিত করোনাভাইরাস টিকা না দেওয়ার সুপারিশ করেছেন কানাডার বিশেষজ্ঞরা। স্থানীয় সময় সোমবার (৩০ মার্চ) কানাডার ন্যাশনাল অ্যাডভাইজারি কমিটি অন ইমিউনাইজেশন অ্যান্ড হেলথ এ সুপারিশ করে।
জাতীয় কমিটির এমন সুপারিশের পর কানাডার দুই প্রদেশ ম্যানিটোবা ও কুইবেকে এই নির্দেশনা মেনে চলার ব্যাপারে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ম্যানিটোবা ও কুইবেক প্রদেশে কানাডার ন্যাশনাল অ্যাডভাইজারি কমিটি অন ইমিউনাইজেশন অ্যান্ড হেলথের নির্দেশনা মেনে চলার ব্যাপারে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
কানাডার উপপ্রধান জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা হাওয়ার্ড এনজু এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ৫৫ বছরের নিচে যাদের বয়স, তাদের ক্ষেত্রে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার কার্যকারিতা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। আপাতত এই বয়সীদের ওপর অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রয়োগ আমরা স্থগিত করছি।
এনএসিআই এ মাসের শুরুতে ১৮ থেকে ৬৪ বছর বয়সীদের ওপর অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রয়োগের আহ্বান জানায়। কানাডায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা প্রয়োগের অনুমতি পায়। দেশটিতে জনসন অ্যান্ড জনসন, ফাইজার–বায়োএনটেক ও মর্ডানার টিকা প্রয়োগেরও অনুমোদন রয়েছে।
শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার আশঙ্কায় সম্প্রতি বেশ কিছু দেশ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাদান স্থগিত করে। তবে অ্যাস্ট্রাজেনেকা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউরোপীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ও যুক্তরাজ্যের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা জানায়, এই টিকা নিরাপদ ও কার্যকর। এই টিকার প্রয়োগ বন্ধ না করে তা চালিয়ে যাওয়া উচিত। পরে বিভিন্ন দেশে আবার এই টিকার প্রয়োগ শুরু করে।
এদিকে ষাট বছরের কম বয়সীদের জন্য অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনার টিকার ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে যাচ্ছে জার্মানি। টিকা নেওয়ার পর রক্ত জমাট বাঁধার মতো বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় দেশটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জার্মানিতে টিকা নেওয়া প্রায় ২৭ লাখ মানুষের মধ্যে ৩১ জনের মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধার মতো বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। অ্যাস্ট্রাজেনেকা বলছে- একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা রায় দিয়েছে যে, তাদের টিকা গ্রহণে ঝুঁকির তুলনায় অনেক বেশি সুবিধা পাওয়া যাবে।
অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানিয়েছে তারা টিকাবিষয়ক তথ্যগুলো নিয়মিত বিশ্লেষণ করছে। তারা বোঝার চেষ্টা করছে- ‘রক্ত জমাট বাঁধার মতো বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঘটনাগুলো বেশি মাত্রায় ঘটছে, না কি এটি স্বাভাবিক বিষয়’। জার্মানির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথাবার্তা চালিয়ে যাবে বলেও জানিয়েছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যৌথভাবে টিকাটি উদ্ভাবন করেছে যুক্তরাজ্য-সুইডেনভিত্তিক ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকা।
এদিকে, সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ফাইজার ও মডার্নার দুই ডোজের মধ্যে প্রথম ডোজ নেওয়ার দুই সপ্তাহ পরেই করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি প্রায় ৮০ শতাংশ কমে যায়।
মার্কিন স্বাস্থ্যকর্মী ও করোনায় সম্মুখসারিতে কর্মরত প্রায় চার হাজার মানুষের ওপর এই পরীক্ষা চালিয়ে আরও জানা যায়, ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার দুই সপ্তাহ পর সংক্রমণের ঝুঁকি কমে যায় ৯০ শতাংশ পর্যন্ত। মঙ্গলবার (৩০মার্চ) রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) এই গবেষণায় সংক্রমণ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার পরীক্ষা করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন পরিচালিত নতুন এই গবেষণার ফলাফল প্রথম ডোজ ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার বিষয়টিকে ফের প্রমাণ করল। এছাড়া, ভ্যাকসিন যে উপসর্গবিহীন সংক্রমণ প্রতিরোধে সক্ষম সে বিষয়টিও প্রমাণিত হলো। তবে, দেশটির স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যথারীতি দুই ডোজ ভ্যাকসিন নেয়ার জন্যই পরামর্শ দিয়েছেন।
এক বিবৃতিতে সিডিসির পরিচালক রোশেল ওয়ালেন্সকি জানান, ‘এই পরীক্ষা থেকে আমরা আমাদের ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারছি।’
মেসেঞ্জার আরএনএ (এমআরএনএ) প্রযুক্তিতে তৈরি এই ভ্যাকসিনগুলোর কার্যকারিতার সাম্প্রতিক ফলাফল গবেষণাগারে পরিচালিত ক্লিনিকাল ট্রায়ালের ফলাফলকে নিশ্চিত করছে। ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে ২০২১ সালের ১৩ মার্চ পর্যন্ত প্রায় ১৩ সপ্তাহ ধরে চরেছে এই পরীক্ষা।
নতুন এমআরএনএ প্রযুক্তি হচ্ছে এক ধরণের সিনথেটিক রাসায়নিক মেসেঞ্জার, যা প্রোটিন তৈরি করার জন্য শরীরের কোষগুলোকে নির্দেশ দেয়। বিশেষ এই প্রোটিনগুলোর গঠন নভেল করোনাভাইরাসের মত। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১২৫০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ