এমনিতেই করোনা মহামারির ধাক্কায় টালমাটাল গোটা পৃথিবী। এর মধ্যে বিশাল আকারের একটি গ্রহাণু পৃথিবীর কাছাকাছি আসার খবরে অনেকেই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই গ্রহাণু নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। ২১ মার্চ পৃথিবীর খুব কাছ দিয়ে উড়ে যাবে সৌরজগতের বৃহত্তম একটি গ্রহাণু। যার আকার ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’রও প্রায় দ্বিগুণ। অতিক্রমের সময় পৃথিবী থেকে চাঁদের যতখানি দূরত্ব, তার চেয়ে পাঁচগুণ দূরত্বে থাকবে গ্রহাণুটি।
বিশাল বড় পাথরসদৃশ এই স্পেস রক’কে বিজ্ঞানীরা নাম দিয়েছেন ‘২০০১ এফও৩২’। এর মধ্যে রয়েছে কয়েক শত মিটারের একটি ডায়ামিটার এবং এটি দুই মিলিয়ন কিলোমিটার (১ দশমিক ২ মিলিয়ন মাইল) দূরত্বে থেকে পৃথিবীর দিকে এগিয়ে আসবে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মহাকাশ এজেন্সি নাসা।
গ্রহাণু হল প্রধানত পাথর দ্বারা গঠিত বস্তু যা তার তারাকে কেন্দ্র করে আবর্তন করে। আমাদের সৌরজগতে গ্রহাণুগুলো ক্ষুদ্র গ্রহ (Minor planet অথবা Planetoid) নামক শ্রেণীর সবচেয়ে পরিচিত বস্তু। এরা ছোট আকারের গ্রহ যেমন বুধের চেয়েও ছোট। বেশিরভাগ গ্রহাণুই মঙ্গল এবং বৃহস্পতি গ্রহের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত গ্রহাণু বেল্টে থেকে নির্দিষ্ট উপবৃত্তাকার কক্ষপথে সূর্যকে আবর্তন করে। ধারণা করা হয় গ্রহাণুগুলো ভ্রূণগ্রহীয় চাকতির (Protoplanetary disc) অবশিষ্টাংশ। বলা হয় গ্রহাণু বেল্টের অঞ্চলে সৌরজগতের গঠনের প্রাথমিক সময় যেসকল ভ্রূণগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিলো তাদের অবশিষ্টাংশ বৃহস্পতির আবেশ দ্বারা সৃষ্ট মহাকর্ষীয় অক্ষ বিচলনের কারণে গ্রহের সাথ মিলিত হবার সুযোগ পায়নি। আর এই অবশিষ্টাংশই গ্রহাণু বেল্টের উৎপত্তির কারণ। কিছু গ্রহাণুর চাঁদও রয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন, পৃথিবীর নিকটস্থ মহাকাশ অংশে প্রায় ১৮ হাজার গ্রহাণু ঘুরে বেড়ায়। তার মধ্যে মাত্র এক হাজার ৮০০ গ্রহাণু বিপজ্জনক। এর মধ্যে আবার ১৫০টি অত্যন্ত বিপজ্জনকের পর্যায়ে পড়ে। তবে ধাবমান গ্রহাণুটির উপর বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।
ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির গ্রহাণু বিশেষজ্ঞ ডেটলেফ কশনি ডিপিএ নিউজ এজেন্সিকে বলেন, এটি স্থিতিশীল রয়েছে, তবে কোনো ঝুঁকিপূ্র্ণ অবস্থায় নেই। তিনি আরও জানান, যথাযথ যন্ত্রপাতির মাধ্যমে এই অপার্থিব সৌন্দর্য্যময় বস্তুটি অপেশাদার জ্যোতির্বিদদের দেখার সুযোগ করে দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ‘সেন্টার ফর নিয়ার আর্থ অবজেক্ট স্টাডিজে’র প্রধান পল খোডাস জানিয়েছেন, এই গ্রহাণুটি কোনো ভাবেই পৃথিবীর গায়ে এসে পড়ার আশঙ্কা নেই। এই গ্রহাণুটি চলে যাবার পর ২০৫২ সালের আগে পৃথিবীতে আর কোনো বড় আকারের গ্রহাণু আসার সম্ভাবনা নেই।
বিজ্ঞানীদের মতে, ২০৫২ সালে যে গ্রহাণুটি পৃথিবীর পাশ দিয়ে যাবে সেটির সাথে পৃথিবীর দূরত্ব থাকবে ২ দশমিক ৮ মিলিয়ন কিলোমিটার। গ্রহাণুটিকে আরও কাছ থেকে পর্যবেক্ষণের জন্যে বিজ্ঞানীরা ফ্লাইবাই ব্যবহার করার পরিকল্পনা করছেন। কশনি জানান, তারা এই গ্রহাণু সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানেন না। তাই একে কাছ থেকে পর্যবেক্ষণ করলে গ্রহাণু-বিনিময় প্রজেক্টে কাজ করা জ্যোতির্বিদদের উপকার হতে পারে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৬৩
আপনার মতামত জানানঃ