ভারতে ১৩৪ কোটি মানুষের মাঝে ৯৬ কোটি হিন্দু, বাকিরা অন্য ধর্মাবলম্বী। কুলদীপ নায়ারের লেখায় পড়েছি মুসলমানের সংখ্যা ৩০ কোটি। অবশ্য সরকারি হিসাব তা বলে না। ভারতের মুসলমানরা পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম। তবু দেশ ভাগের পর থেকেই বারবার ধর্মের নামে, জাতপাতের নামে নির্যাতিত হয়েছে দেশটির মুসলিম সম্প্রদায়। তবে এই নিপীড়ন কেবলমাত্র কোন বিশেষ সম্প্রদায়ের উপর না। এই নিপীড়ন মানুষের উপর। অধিকারের উপর। ক্ষমতাসীনদের হাতে নির্যাতিন হবার এই চিরায়ত ধারারই আরও কুৎসিত এবং ভয়াবহ পরিণতিই আমরা দেখতে পারছি বিজেপি শাসিত ভারতে।
জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০১৪ সালের মে মাসে ভারতের ১৬তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন নরেন্দ্র মোদি। যদিও সমালোচকেরা বলতেন, গুজরাট দাঙ্গার কারণে মোদি কখনও প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না।
বিশ্লেষকদের মতে, কট্টরপন্থী হিন্দু সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) সুনজরে থাকায় মোদির গায়ে কখনো আঁচড় পড়েনি। গুজরাটের দাঙ্গার ঘটনার ঝাপটা থেকে তিনি বাঁচতে পারলেও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মায়া কোদনানির ২৮ বছরের জেল হয়। গুজরাটে আরএসএসের শক্ত ভিত্তি রয়েছে। ১৯২৫ সালে প্রতিষ্ঠিত আরএসএসের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলা। মোদির দল বিজেপির সঙ্গে এর সুসম্পর্ক রয়েছে। ১৯৮০ সালে বিজেপি গুজরাটে যোগ দেওয়ার আগে তিনি আরএসএসে প্রশিক্ষিত প্রচারক হিসেবে বহু বছর কাজ করেছেন।
২০০১ সালের জানুয়ারিতে ভূমিকম্পে গুজরাটে প্রায় ২০ হাজার মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় মোদির পূর্বসূরিরা ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন। ওই সময় রাজনীতির মাঠে বড় ধরনের সুযোগ পান নরেন্দ্র মোদি। ২০০১ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত টানা চার বার তিনি বিজেপির প্রার্থী হিসেবে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হন।
এদিকে, ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে ঘটে যাওয়া কিছু ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জন্য দায়ী দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর থেকেও দৃষ্টিকটু ২০১৪-এর নির্বাচন জয়লাভের জন্য তার ক্ষমা চাওয়া। আরও আশ্চর্যের ছিল, ধর্মকে পুঁজি করে রাজনীতির সিঁড়ি একের পর এক উতরে যাওয়া মোদিকে ভারতীয়রা ক্ষমাও করেছিল। এই ‘ক্ষমা’ অসাম্প্রদায়িক ভারতকে বদলে দিয়েছে সম্পূর্ণভাবে।
২০০২ গুজরাট সহিংসতা
২০০২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সকালে অযোধ্যা থেকে আহমেদাবাদে ফিরে সবরমতি এক্সপ্রেস গোধরা রেলস্টেশনের কাছে থামে। যাত্রীরা হিন্দু তীর্থযাত্রী ছিলেন, যারা ভেঙে দেওয়া বাবরি মসজিদ স্থলে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পরে অযোধ্যা থেকে ফিরে আসছিলেন। রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মে ট্রেনের যাত্রী এবং বিক্রেতাদের মধ্যে তর্ক বাধে। তর্কটি হিংস্র হয়ে ওঠে এবং ট্রেনের চারটি কোচ আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় এবং বহু লোকের ট্রেনের ভিতরে আটকে যায়।
ফলস্বরূপ, ৫৯ জন লোক অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যায়। এর মধ্যে ৯ জন পুরুষ, ২৫ জন মহিলা এবং শিশু ২৫ জন।
এর পরপরই মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেন যে ট্রেনে হামলা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা নয়, বরং সন্ত্রাসবাদের কাজ ছিল। স্থানীয় সংবাদপত্র এবং রাজ্য সরকারের সদস্যরা মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতা উস্কে দেওয়ার জন্য বিনা প্রমাণে দাবি করেন যে ট্রেনে হামলাটি পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা করেছে এবং স্থানীয় মুসলমানরা তাদের সাথে রাজ্যের হিন্দুদের আক্রমণ করার ষড়যন্ত্রে যুক্ত। স্থানীয় সংবাদপত্রগুলো দ্বারাও মিথ্যা গল্প ছাপা হয়, যেগুলোতে দাবি করা হয় যে মুসলমানরা হিন্দু মহিলাদের অপহরণ এবং ধর্ষণ করেছিল।
সরকারী পরিসংখ্যান অনুসারে, দাঙ্গায় ১,০৪৪ জন নিহত, ২২৩ নিখোঁজ এবং ২,৫০০ আহত হয়। নিহতদের মধ্যে ৭৯০ জন মুসলমান এবং ২৫৪ হিন্দু ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট নাগরিক ট্রাইব্যুনাল রিপোর্টে, অনুমান করেছে যে প্রায় ১,৯২৬ জন নিহত হতে পারে। অন্যান্য উৎস অনুসারে মৃতের সংখ্যা ২ হাজারেরও বেশি।
বহু নৃশংস হত্যাকাণ্ড ও ধর্ষণের পাশাপাশি ব্যাপক লুটপাট ও সম্পদ ধ্বংসের খবর পাওয়া যায়। গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী এবং পরবর্তীকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে এই সহিংসতা শুরু করার এবং প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগ করা হয়, পুলিশ এবং সরকারী আধিকারিকরা দাঙ্গাকারীদের নির্দেশনা এবং মুসলমানদের মালিকানাধীন সম্পত্তির তালিকা দিয়েছিল।
মুসলমানদের উপর বর্বর নির্যাতন
সহিংসতার পরে, এটি স্পষ্ট হয়ে যায় যে আক্রমণ কেবল মুসলিম জনগোষ্ঠীদের ওপরই নয় বরং মুসলিম মহিলা এবং শিশুদের উপরও করা হয়েছিল। তিস্তা সেতালবাদ অনুসারে ২৮ ফেব্রুয়ারি আহমেদাবাদের মোড়জারি চৌক এবং চরোদিয়া চক জেলাগুলোতে পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়া চল্লিশ জনের সকলেই মুসলমান ছিলেন।
কমপক্ষে আড়াই শতাধিক বালিকা ও মহিলাদের গণধর্ষণ করা হয়েছিল এবং পরে তাদের পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। বাচ্চাদের জোর করে পেট্রল খাওয়ানো হয় এবং তারপরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। গর্ভবতী মহিলাদের তাদের পেটের অনাগত সন্তান সহ আগুনে পোড়ানো হয়েছিল।
নানদা পটিয়া গণকবরে ৯৬ টি দেহের মৃতদেহ ছিল, যার মধ্যে ৪৬ টি জন মহিলা ছিলেন। উগ্র হিন্দুরা তাদের বাড়িতে হামলা করে ঘরের পুরো পরিবারকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করে। মহিলাদের উপর অ্যাসিড নিক্ষেপ করা হয়। মারধর এবং গর্ভবতী মহিলাদের হত্যা করা হয়। বাচ্চাদের তাদের পিতামাতার সামনে হত্যা করা হয়।
হিন্দুদের উপর আক্রমণ
সূত্র মতে, এ সময় আহমেদাবাদের দানিলিমদা এলাকায় মুসলমানরা দলিতদের উপর আক্রমণ করে। হিমাতনগরে একজনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে, যার দু’চোখে উপডড়ে ফেলা হয়েছিল বলে জানা যায়।
৫ মে, মুসলিম দাঙ্গাকারীরা শাহ আলম অঞ্চলের ভিলওয়াস এলাকায় আক্রমণ করে। একজন হিন্দু ডাক্তারকে ছুরিকাঘাতের পরে হিন্দু চিকিৎসকদের মুসলিম অঞ্চলে চিকিৎসা অনুশীলন বন্ধ করতে বলা হয়।
ফ্রন্টলাইন পত্রিকা জানান যে আহমেদাবাদে ৫ মার্চের মধ্যে উদ্ধার হওয়া ২৪৯টি মৃতদেহের মধ্যে ত্রিশজন হিন্দু ছিল। যে হিন্দুদের হত্যা করা হয় তাদের মধ্যে পুলিশি পদক্ষেপের ফলে তেরো জন মারা গিয়েছিলেন এবং মুসলমানদের মালিকানাধীন সম্পত্তিগুলোতে আক্রমণ করার সময় বেশ কয়েকজন মারা গিয়েছিলেন। হিন্দু পাড়াগুলোতে মুসলিম জনতার তুলনামূলকভাবে কয়েকটি আক্রমণ সত্ত্বেও, পুলিশের গুলিতে চব্বিশজন মুসলমান মারা গিয়েছিল বলে জানা যায়।
মোদির বিরুদ্ধে মার্কিন আদালতের সমন
নিউ ইয়র্কের একটি আদালত ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গায় ভূমিকার জন্য সমন জারি করে।
নিউ ইয়র্কের একটি ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট এই সমন জারি করে আমেরিকান জাস্টিস সেন্টার নামে একটি মানবাধিকার সংগঠনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে। ২০০২ সালের দাঙ্গা থেকে বেঁচে যাওয়া দু’জন ভারতীয় নাগরিকও এই মামলার বাদী।
২০০২ সালে গুজরাটের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত হন। এদের বেশিরভাগই ছিলেন মুসলিম। গুজরাট দাঙ্গার সময় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল এই দাঙ্গা ঠেকাতে তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি।
মোদির ক্লিনচিট
২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গায় ক্লিনচিট পান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ২০০২ সালে গোধরা পরবর্তী দাঙ্গার তদন্তে গঠিত নানাবতী কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছিল, দাঙ্গায় কোনও হাত ছিল না গুজরাটের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। তবে বেশ কিছু পুলিশ অফিসার যে দাঙ্গার সময় ‘নিষ্ক্রিয়’ ছিলেন সে কথা উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের সুপারিশও করেন কমিশন।
দাঙ্গায় তৎকালীন গুজরাট সরকার এবং তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে পরোক্ষ উস্কানি দেওয়া এবং নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু সেই সব অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে দাঙ্গার তদন্তে গঠিত নানাবতী কমিশন। অর্থাৎ দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে বা নিয়ন্ত্রণে গড়িমসির কোনও অভিযোগের প্রমাণই খুঁজে পায়নি কমিশন।
কমিশনের তদন্তের এক্তিয়ারে ছিল তৎকালীন পুলিশ-প্রশাসনের আধিকারিকদের ভূমিকাও। সে ক্ষেত্রে অবশ্য বেশ কিছু পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে কমিশন।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, তিন দিন ধরে দাঙ্গা চললেও তা নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছু পুলিশ অফিসার ‘প্রয়োজনীয় তৎপরতা ও আগ্রহ দেখাননি’। কিছু পুলিশ অফিসার আবার দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি ‘নিষ্ক্রিয়’ ছিলেন, উল্লেখ করা হয়েছে রিপোর্টে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্তের সুপারিশও করেছে কমিশন।
২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার তদন্তে দুই অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি জি টি নানাবতী এবং অক্ষয় মেটার নেতৃত্বে তদন্ত কমিশন গঠিত হয়। কমিটি অবশ্য ২০১৪ সালেই গুজরাট সরকারকে রিপোর্ট পেশ করেছিল। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন আনন্দীবেন পটেল। কিন্তু সেই সময় রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনা হয়নি। তারও পাঁচ বছর পরে বিধানসভায় সেই কমিশনের রিপোর্ট পেশ করল গুজরাট সরকার।
দিল্লির দাঙ্গা
গুজরাটের দাঙ্গাবাজ মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, যাকে বিশ্বমিডিয়া ‘গুজরাটের কসাই’ নাম দিয়েছিল, তিনি দিল্লি দাঙ্গার সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী। আর গুজরাট দাঙ্গার সময়ে সেই রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এখন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। শাসকগোষ্ঠী না চাইলে কোনও দাঙ্গা হতে পারে না, একটি দাঙ্গাই রাষ্ট্র বা শাসক উভয়ের ক্ষমতা-অক্ষমতা প্রকাশ করে।
সূত্র মতে, সংসদে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন (সিএএ) পাসের প্রতিক্রিয়ায় ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ভারত জুড়ে প্রতিবাদ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা কেবল সিএএ-র নাগরিকত্ব সম্পর্কিত ইস্যুগুলোর বিরুদ্ধে নয়, জাতীয় নাগরিক নিবন্ধক (এনআরসি) এবং জাতীয় জনসংখ্যা নিবন্ধকের (এনপিআর) বিরুদ্ধেও আন্দোলন করেন।
২০২০ সালের ২২-২৩ ফেব্রুয়ারি মধ্যবর্তী রাতে, উত্তর-পূর্ব দিল্লির সিলামপুর-জাফরাবাদ সড়কের এক প্রান্তে প্রায় ৫০০ থেকে ১,০০০ জন নারী বিক্ষোভকারীরা একটি বিক্ষোভ শুরু করেন। এই বিক্ষোভ সিলামপুর মেট্রো স্টেশন অবরুদ্ধ করে। পুলিশ এবং আধা-সামরিক বাহিনী ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়।
এরপর ২০২০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি জাফরাবাদ ও মৌজপুরে সহিংস সংঘর্ষ হয়। জনতা নিরাপত্তা বাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় এবং হেড কনস্টেবল রতন লাল গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয় এবং সহিংস সংঘর্ষের কারণে ছয়জন বিক্ষোভকারী মারা যায়।
ভজনপুরায় জনতা একটি পেট্রোল পাম্প আক্রমণ করে, আজাদির স্লোগান দেয় ও পেট্রোল বোমা, লাঠি, অস্ত্র বহন করে এবং উপলব্ধ নগদ টাকা লুটের পরে গাড়ি ও পেট্রোল ট্যাঙ্ক পুড়িয়ে দেয়। পরে সেই রাতেই উত্তর-পূর্ব দিল্লিতে একটি ভিড় দু’জনকে লাঠি ও পাথর দিয়ে মারধর করে। তাদের মধ্যে একজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। ১৭০টি গাড়ি সমেত একটি বিশাল পার্কিংয়ের জায়গা আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয়।
পরের দিন, উত্তর পূর্ব দিল্লিতে একটি দাঙ্গা শুরু হয়, হিন্দু জাতীয়তাবাদী জনতা মুসলমানদের সম্পত্তি ও মসজিদগুলোতে ভাঙচুর চালিয়ে গেরুয়া পতাকা বহন করে এবং জয় শ্রী রামকে স্লোগান দেয়।
দাঙ্গা বেশ কয়েক দিন অব্যাহত ছিল এবং সেখানে ব্যাপক লুটপাট চালানো হয়। মসজিদ পুড়িয়ে দেওয়া হয়, একটি মন্দির ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং বেশ কয়েকটি স্কুল, দোকান, ঘর এবং যানবাহনে দাঙ্গাকারীরা আগুন ধরিয়ে দেয়।
সব মিলিয়ে ৪৯ জন নিহত হয় এবং ২০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়। হিন্দু ও মুসলমান উভয়ই সহিংসতার শিকার হওয়া সত্ত্বেও মুসলমানরা তুলনামূলকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
জাফরাবাদ ও মৌজপুরের মধ্যবর্তী এলাকায়, যেখানে হিন্দু ও মুসলমানদের মিশ্র জনসংখ্যা রয়েছে, সেখানে একে অপরকে রক্ষা করে এবং সেখানকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধ্বংস করতে বাইরের জনতাকে রোধ করতে ব্যারিকেড করে ঐক্য প্রদর্শন করে স্থানীয় জনতা।
দিল্লি পুলিশ সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়। দাঙ্গা নিয়ে রিপোর্টিং করা বেশ কয়েকজন সাংবাদিক বলেন যে তাদের লোকজন সিএএ সমর্থক এবং সিএএ বিরোধী উভয়ের থেকে হুমকি পায়। ২০২০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পুলিশ ১২৩ টি এফআইআর নথিভুক্ত করেছে এবং সহিংসতায় জড়িত ৬০০ জনকে গ্রেপ্তার করে।
ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও অর্থনীতিতে ভারতের অবস্থানের কথা ভুলে গিয়ে হিন্দুত্ববাদ ও মুসলিম বিদ্বেষী ভূমিকা ভারতকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তা ক্রমে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। শতকোটি মানুষের উন্নয়নশীল দেশ ভারত এখনও বিশ্বের বৃহত্তম দরিদ্র জনগোষ্ঠির দেশ। নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে বিজেপি অশিক্ষিত মানুষের ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক মনোভাবকে উস্কে দিয়েছিল। সেই সাম্প্রদায়িকতার উন্মাদনায় বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র, সবচেয়ে সম্ভাবনাময় অর্থনীতির ধর্মনিরপেক্ষ ভারতে বিজেপি শাসকরা তাল হারিয়ে ফেলেছেন। গত চার দশকের মধ্যে ভারতের অর্থনীতি সবদিক থেকে খারাপ অবস্থায় পড়েছে। সেখানে দরিদ্র মানুষের সম্পদ গুটি কয়েক কর্পোরেট ধনকুবের ও তাদের পরিবারের মধ্যে কুক্ষিগত হয়ে পড়েছে। তা ক্রমে আরো গন্ডিবদ্ধ হয়ে পড়ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা অক্সফামের সর্বসাম্প্রতিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ভারতের ১ শতাংশ ধনী ব্যক্তির সম্পদের পরিমাণ দেশের মোট জনগোষ্ঠির ৭০ শতাংশ মানুষের মোট সম্পদের চারগুণ।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪৩০
আপনার মতামত জানানঃ