পদ্মা সেতু আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। সেতুর সবগুলো স্প্যান বসানো শেষ। এখন চলছে স্লাব বসানোর কাজ। স্লাবসহ অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করে ২০২২ সালেই পদ্মার এপার-ওপার যাতায়াত করতে পারবে মানুষ। দক্ষিণের মানুষের এই স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি তাদের আরেকটি স্বপ্ন খুব শিগগিরই পূরণ হতে যাচ্ছে। এগিয়ে চলছে পটুয়াখালীর পায়রা সেতুর নির্মাণকাজ। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২১ সালের জুনে সেতুটি যান চলাচলের উপযোগী হবে বলে দাবি প্রকল্প-সংশ্লিষ্টদের। তবে এরইমধ্যে আতঙ্কিত হবার মতোই ঘটনা ঘটেছে। পায়রা সেতুর পলেস্তারা খসে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে জনমনে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পলেস্তারা ধসের ছবি ছড়িয়ে পড়ায় নির্মাণ ত্রুটি নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
গতকাল বুধবার(১৭ মার্চ) দুপুরে হঠাৎ করে লেবুখালী ফেরিঘাটের দক্ষিণ প্রান্তের একটি পিলারসংলগ্ন নির্মাণাধীন পায়রা ব্রিজের পলেস্তারা ধসের ঘটনা ঘটে। অন্তত দুই ফুট দৈর্ঘ্য ও দেড় ফুট প্রস্থের পলেস্তারা খসে পড়ায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। পথচারীদের অনেকেই যে যার মতো ছবি ও ভিডিও করে ফেসবুকে আপলোড দিলে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। ব্রিজের আশপাশে স্প্যান ধস হতে পারে বলেও এক ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়েছে।
পায়রা (লেবুখালী) সেতু নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবদুল হালিম বলেন, একটি স্প্যানে টেনশন দেওয়ার সময় দুই ফিটের মতো জায়গায় নিচের অংশের পলেস্তারা ধসে পড়েছে। এটি বড় ধরনের কোনো সমস্যা না। এটা ঝুঁকি বা তেমন খারাপ কিছু না। ব্রিজের জন্য এটা ক্ষতিকরও নয়। যারা টেকনিক্যাল বিষয় বোঝে না, তারাই এটা নিয়ে গুঞ্জন রটাচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি। এ থেকে সবাইকে সর্তক থাকার আহ্বানও জানান তিনি।
তিনি বলেন, আমরা মূল ব্রিজের কাজে এগিয়ে আছি। ইতোমধ্যে পায়রা সেতুর নির্মাণ কাজ ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বর্ষা ও করোনার কারণে আমরা পিছিয়ে ছিলাম ইতোমধ্যে সেখান থেকে ৩০ শতাংশ কাজ অগ্রগতি হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে ব্রিজের সার্বিক কাজ সম্পন্ন করে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।
কুয়াকাটা-ঢাকা মহাসড়কের পটুয়াখালী জেলার দুমকি উপজেলার লেবুখালীতে পায়রা নদীর ওপর ‘পায়রা সেতু’ নির্মাণ ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। সে লক্ষ্যে ২০১১ সালে কুয়েত সরকারের সঙ্গে চুক্তি সই হয়। ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট, ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ বিনিয়োগে এক হাজার ১৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে পায়রা নদীতে নির্মিত হচ্ছে সেতুটি।
চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লনজিয়াল ব্রিজ অ্যান্ড রোড কনস্ট্রাকশন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী সেতুর আদলে নির্মিত এই সেতুর দৈর্ঘ্য এক হাজার ৪৭০ মিটার এবং প্রস্থ ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার। সেতুটি কেবল দিয়ে দু’পাশে সংযুক্ত করা থাকবে। ফলে নদীর মাঝখানে একটি মাত্র পিলার ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া খরস্রোতা পায়রা নদীর তীর সংরক্ষণেও প্রকল্প থেকে কাজ চলমান রয়েছে। আটটি স্প্যান ও ২৬টি ভায়াডাক থাকবে মূল সেতুতে। এর দু’পাশে এক মিটার করে ফুটপাতের পাশাপাশি সেতুর উত্তর প্রান্তে (বরিশালের বাকেরগঞ্জ অংশ) ৩০০ মিটার এবং দক্ষিণ প্রান্তে (পটুয়াখালীর দুমকী অংশ) ৫৯০ মিটার সংযোগ সড়ক রয়েছে।
গত ডিসেম্বরে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কারিগরি জটিলতা এবং করোনাভাইরাসের কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান প্রকল্প পরিচালক।
ইতোমধ্যে সেতুর ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সেতুটি চালু হলে দক্ষিণ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি নিরবিচ্ছিন্ন সড়ক ব্যবস্থা স্থাপিত হবে।
এরইমধ্যে শোনা গেলো সেতুর পলেস্তারা খসে পরার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা ধরনের গুঞ্জন দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৯ সালের ২৩ এপ্রিল সেতুটির নির্মাণ কাজ সম্পন্নের কথা থাকলেও নানা কারণে বিলম্বিত হয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় দফায় শেষ হবার কথা থাকলেও সেটাও পিছিয়ে যায়। ২০২১ সালের ৩০ জুনে সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। সেটাও পিছিয়ে যাচ্ছে। এদিকে নির্মাণ ত্রুটির কারণে ধসে পড়ছে সেতুটি। সেতুটি আমাদের অন্যান্য প্রকল্পের মতোই আচরণ করছে।
তারা বলেন, সেতুটি দিয়ে মানুষসহ বিভিন্ন ভারবাহী যান চলাচল করবে। সেই মতেই পরিকল্পনা করা হয়েছে। নির্মাণ কাজ শেষ হবার আগেই যেখানে ধসের মতো ঘটনা ঘটে সেখানে সেতু পারাপার কতটা নিরাপদ সেবিষয়ে মোটা অক্ষরেই প্রশ্ন দেখা দেয়। এবিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে হবে। বড় কোনো ঘটনা যেন না ঘটে সেবিষয়ে আগে থেকেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৫২
আপনার মতামত জানানঃ