পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিন দিন বাড়ছেই। এসব অভিযোগের মধ্যে ঘুষ, হয়রানি, নারী নির্যাতন, চাঁদা দাবি বা আদায় ছাড়াও পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে জীবননাশের হুমকির অভিযোগও রয়েছে। এছাড়া প্রকৃত আসামি বাঁচানোর জন্য নিরীহদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগও রয়েছে। নওগাঁর আত্রাই থানা–পুলিশের বিরুদ্ধে আজও তেমনি একটি অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, খুনের মামলায় প্রকৃত আসামিদের বাঁচাতে একটি পরিবারকে হয়রানি ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করছে পুলিশ। আজ বুধবার(১৭ মার্চ) সকালে নওগাঁ জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করে ভুক্তভোগী ওই পরিবার।
আত্রাই উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুর রাজ্জাকের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তার চাচাতো ভাই হেলাল খাঁ শাপলা। এ সময় আবদুর রাজ্জাক, তার ভাই সাজ্জাদ হোসেন ও চাচা আবদুল গফুর উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, উপজেলার ভবানীপুর বাজারের মুদি ব্যবসায়ী সুশান্ত কুমার ঘোষ ৭ মার্চ রাত ৯টার দিকে তার দোকান বন্ধ করে দিনের বেচাকেনার টাকা নিয়ে বাজারের পার্শ্ববর্তী ভবানীপুর গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। বাড়ি যাওয়ার পথে বাজারের পাশে কালিদাশ মালাকারের বাড়ির পাশে দুর্বৃত্তরা তার পথরোধ করে টাকা ছিনিয়ে নেয় এবং তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে তার চিৎকার শুনে স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করেন। পরে ১১ মার্চ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুশান্ত ঘোষ মারা যান।
এ ঘটনায় পরদিন নিহত ব্যবসায়ীর ছেলে সুদীপ্ত কুমার ঘোষ অজ্ঞাতনামা ৩-৪ জনের বিরুদ্ধে আত্রাই থানায় মামলা করেন। ওই মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান আত্রাই থানার এসআই হায়দার আলী। ওই দিন সাজ্জাদ হোসেনকে ফোন করে তার ছেলে সাব্বির হোসেন খাঁকে (২০) নিয়ে থানায় যেতে বলেন। ওই দিন সন্ধ্যায় সাব্বিরকে নিয়ে তার বাবা সাজ্জাদ ও চাচা আবদুর রাজ্জাক থানায় যান। থানায় গেলে সাব্বিরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় থাকতে বলে তার বাবা সাজ্জাদ ও চাচা রাজ্জাককে বাড়ি চলে যেতে বলেন। ওই দিন সারা রাত সাব্বিরকে থানায় আটকে শারীরিক নির্যাতন করে পুলিশ। পরদিন সুশান্ত কুমার হত্যা মামলায় আসামি দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাব্বিরকে কোর্টে চালান দেওয়ার সময় লিখিত কাগজে পুলিশ লিখেছে তাকে মির্জাপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। অথচ আমি ও আমার বড় ভাই সাব্বিরকে নিজে থানায় গিয়ে পুলিশ হেফাজতে দিয়ে এসেছি। সেই দিনের থানার সিসি টিভির ফুটেজ দেখলেই তা প্রমাণিত হবে।
কোর্টে চালান দেওয়ার সময় সাব্বির আমাদের বলেছেন, পুলিশ তাকে প্রচণ্ড মারধর করে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বলেছে এবং এই খুনের ঘটনায় পরিবারের অন্য সদস্যদের নাম বলতে বলেছে। অথচ আমার ভাতিজা সাব্বির ও আমাদের পরিবারের কেউ ব্যবসায়ী সুশান্ত কুমার হত্যার ঘটনায় জড়িত নই। আমাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে পুলিশ এই হত্যা মামলার প্রকৃত আসামিদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে।’
এ বিষয়ে আত্রাই থানার ওসি আবুল কালাম আজাদ দৈনিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যবসায়ী সুশান্ত কুমার হত্যা মামলায় প্রাথমিক তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণের সাপেক্ষে আমাদের কাছে মনে হয়েছে এ ঘটনার সঙ্গে অভিযুক্ত সাব্বির জড়িত রয়েছেন এবং এ জন্যই তাকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এখানে কাউকে হয়রানি করার উদ্দেশ্য পুলিশের নেই। অভিযুক্ত সাব্বিরকে পূর্ণাঙ্গ তদন্তে নির্দোষ পাওয়া গেলে মামলার অভিযোগপত্র থেকে তার নাম অবশ্যই বাদ যাবে। আর আসামিকে তার পরিবারের লোকজন থানা–পুলিশের হেফাজতে দিয়ে গেছেন বলে যে কথা বলা হয়েছে, সেটি সঠিক নয়। তাকে মির্জাপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্প্রতি ধরে নিয়ে টাকা দাবি, ক্রসফায়ার ও বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার হুমকির অভিযোগ এসেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এছাড়াও প্রায় প্রতিনিয়তই পুলিশের হাতে হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগও করেছেন অনেকে। কিন্তু মানুষ কোথায় অভিযোগ করবেন, সেটা জানা নেই। পুলিশের হাতে হয়রানির শিকার হলে অভিযোগ করার জন্য কয়েকটি মাধ্যম রয়েছে। আছে হটলাইনও। তবে হটলাইনগুলো জরুরি সেবার ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা সমীচীন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলেন, অপরাধ দমনে পুলিশ সদর দপ্তরকে আরো কঠোর হতে হবে। পুলিশ প্রশাসনকে আরো বেশি শক্তিশালী হতে হবে। অভিযোগ আসলে সাথে সাথে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিলে তাদের মধ্যে ভীতি আসবে। তারা আর এ ধরনের অপরাধ করবে না।
তারা মনে করেন, পুলিশের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ গতানুগতিকভাবে দেখার সুযোগ নেই। বর্তমানে পুলিশ প্রশাসনে যারা আছেন তাদের এটা ইফেকটিভলি দেখা উচিত।
এসডব্লিউ/পিএ/কেএইচ/১৭৫৮
আপনার মতামত জানানঃ