দুই ব্যান্ডে ৭ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকায় ২৭ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কিনেছে তিন সেলফোন অপারেটর গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক। গতকাল (৮ মার্চ) বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) আয়োজিত নিলামে এ তরঙ্গ কেনে অপারেটর তিনটি। রাষ্ট্রায়ত্ত একমাত্র সেলফোন অপারেটর টেলিটক নিলাম প্রক্রিয়ায় অংশ নিলেও কোনো তরঙ্গ কিনতে পারেনি। নিলামে সবচেয়ে বেশি তরঙ্গ কিনেছে গ্রাহকসংখ্যায় শীর্ষ অপারেটর গ্রামীণফোন। পাঁচ বছরের কিস্তিতে অপারেটরদের কাছ থেকে টাকাগুলো পাওয়া যাবে।
নিলামে অংশ নিয়ে মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন (জিপি) ১০ দশমিক ৪, রবি আজিয়াটা ৭ দশমিক ৬ ও বাংলালিংক ৯ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কেনে। তবে সরকারি অপারেটর টেলিটক কোনো তরঙ্গ কিনতে পারেনি। সব মিলিয়ে নিলাম শেষে গ্রামীণফোনের তরঙ্গ ৪৭ দশমিক ৪, রবির ৪৪, বাংলালিংকের ৪০ ও টেলিটকের ২৫ দশমিক ২ মেগাহার্টজ দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ মোবাইল নেটওয়ার্কের যুগে প্রবেশ করেছে নব্বই দশকে। ধীরে ধীরে বেড়েছে এর ব্যবহার। বর্তমানে গ্রাহকের সংখ্যা ১৭ কোটি। করোনা মহামারির সময় মোবাইলের ওপর নির্ভরতা বেড়েছে। আর তাতেই হোঁচট খেল দেশের মুঠোফোন অপরেটররা। যখন তখন কল ড্রপ, নেটওয়ার্ক সমস্যাসহ ইন্টারনেটের দুর্বল গতি ভোগাচ্ছে গ্রাহককে।
ইন্টারনেট গতি মাপার আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ওকলার সবশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে মোবাইল ইন্টারনেটে ডাউনলোডের গড় গতি ১০ দশমিক ৫৭ এমবিপিএস এবং আপলোডের গতি ৭ দশমিক ১৯ এমবিপিএস। এ ধীরগতি নিয়ে বিশ্বের ১৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৬তম। আফ্রিকার পিছিয়েপড়া দেশ ইথিওপিয়া-সুদানের চেয়েও যার গতি দুর্বল।
মুঠোফোন সেবার এমন দুর্গতি দূর করতে সোমবার (০৮ মার্চ) তরঙ্গ নিলামে তুললো নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিটিআরসি। চার অপারেটরের অংশগ্রহণে রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বেলা ১১টায় নিলাম শুরু হয়। শুরুতে ১৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের ৭ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ তরঙ্গ মোট পাঁচটি ব্লকে নিলাম প্রক্রিয়া হয়। এর মধ্যে দুটি ব্লক দশমিক ৪৪ মেগাহার্টজ তরঙ্গের এবং দুটি ব্লক ২ দশমিক ২ মেগাহার্টজ তরঙ্গের।
প্রতিটি ব্লকের ভিত্তিমূল্য ৩১ মিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করে নিলাম শুরু হলে বাংলালিংক ২ দশমিক ২ মেগাহার্টজ তরঙ্গের দুটি ব্লক নিয়ে মোট ৪ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কিনে নেয়।
রবি ২ দশমিক ২ মেগাহার্টজের একটি এবং ৪৪ মেগাহার্টজের একটি নিয়ে মোট ২ দশমিক ৬ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কেনে। দশমিক ৪৪ মেগাহার্টজের একটি ব্লক নেয় জিপি। ভিত্তি মূল্যের ওপর কোনো দাম না ওঠায় নিলামের প্রথম পর্ব ১ ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়।
নিলামের দ্বিতীয় পর্বে ২১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে ২০ মেগাহার্টজ ব্যবহারযোগ্য তরঙ্গ ৫ মেগাহার্টজ করে মোট চারটি ব্লকে বিক্রির জন্য নিলাম শুরু হয়। দুপুর সাড়ে ১২টায় শুরু হওয়া এ নিলামে প্রতিটি ব্লকের ভিত্তিমূল্য ছিল ২৭ মিলিয়ন ডলার। বেলা দেড়টায় টেলিটক ছাড়া বাকি তিন অপারেটর ২৭ মিলিয়ন ডলার থেকে ডাক শুরু করে।
টেলিটক সরে যাওয়ার পর বাকি তিন সেলফোন অপারেটর ২৯ দশমিক ২৫ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত দর তোলে। এরপর কেউ আর দর না বাড়ালে নিয়ম অনুযায়ী রবি, জিপি ও বাংলালিংক ৫ মেগাহার্টজ করে তরঙ্গ পায়। এভাবে মোট ১৫ মেগাহার্টজ তরঙ্গ বিক্রি হয়ে গেলে বাকি থাকে আরো ৫ হার্টজের একটি ব্লক।
৫ মেগাহার্টজের সর্বশেষ ব্লকটি নিলামে ২৭ মিলিয়ন ডলার থেকে ডাক শুরু হলে শুরুতেই বাংলালিংক সরে আসে। বেলা ৩টায় দুপুরের খাবারের বিরতির আগ পর্যন্ত ৩০ মিলিয়ন ডলারে গিয়ে পৌঁছে শেষ পর্বের নিলাম।
মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর ৩০ দশমিক ৫০ মিলিয়ন ডলার থেকে দর ডাকা শুরু হলে ১৬তম রাউন্ডে এসে দাম দাঁড়ায় ৩০ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন ডলার। এ পর্যায়ে নিলাম থেকে টেলিটক সরে আসে। গ্রামীণফোন ও রবি পর্যায়ক্রমে দরকষাকষিতে অংশ নেয়। প্রায় ৭ ঘণ্টা ধরে রবি ও জিপির মধ্যে দরকষাকষির পর ৮১তম রাউন্ডে ৪৬ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন ডলারে শেষ ব্লকের ৫ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কিনে নেয় জিপি।
বিটিআরসির হিসাবে, গ্রামীণফোনের হাতে সব মিলিয়ে মোট ৩৭ মেগাহার্টজ তরঙ্গ ছিল এতদিন। নিলামে দুই ব্যান্ডের ১০ দশমিক ৪৪ মেগাহার্টজ কেনায় গ্রামীণফোনের হাতে মোট ৪৭ দশমিক ৪৪ মেগাহার্টজ তরঙ্গ হচ্ছে। এয়ারটেলের সঙ্গে একীভূত হওয়ার পর রবির বরাদ্দ পাওয়া তরঙ্গের পরিমাণ ছিল ৩৬ দশমিক ৪ মেগাহার্টজ। নিলামে আরো ৭ দশমিক ৬ মেগাহার্টজ তরঙ্গ কেনায় তাদের মোট তরঙ্গের পরিমাণ দাঁড়াল ৪৪ মেগাহার্টজ। আগের ৩০ দশমিক ৬ মেগাহার্টজের সঙ্গে নতুন তরঙ্গ মিলিয়ে বাংলালিংকের বরাদ্দ নেয়া তরঙ্গের পরিমাণ এখন ৪০ মেগাহার্টজ। তবে টেলিটক গতকাল নতুন করে তরঙ্গ না কেনায় তাদের বরাদ্দ নেয়া তরঙ্গের পরিমাণ ২৫ দশমিক ২০ মেগাহার্টজ রয়েছে।
বিটিআরসির হিসাবে, বর্তমানে গ্রামীণফোনের গ্রাহক ৮ কোটির কিছু বেশি। রবির গ্রাহক ৫ কোটি ১৫ লাখ। আর বাংলালিংকের গ্রাহক ৩ কোটি ৫৯ লাখ এবং টেলিটকের ৫৫ লাখ।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩৩০
আপনার মতামত জানানঃ