ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে নবম শ্রেণীর এক স্কুলছাত্রী অপহরণের ৫ দিন পেরিয়ে গেলেও তাকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। তবে আসামিকে আটকের পর মাঝপথে এসে তাকে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
থানায় অভিযোগ করায় আসামিদের হুমকি ও ভয়ভীতির কারণে এলাকা ছাড়া মামলার বাদী স্কুলছাত্রীর মা শায়েস্তারা বেগম। থানায় দেয়া অভিযোগ ও ছাত্রীর মায়ের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাঞ্ছারামপুর উপজেলার নবম শ্রেণীর ছাত্রী ৩মার্চ বাড়ির পাশে মুদির দোকানে মালামাল কিনতে গেলে সেখান থেকে একই গ্রামের সুলতান মিয়ার ছেলে রায়হান ও তার সহযোগীরা মাইক্রোযোগে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় পরদিন মেয়ের মা বাদী হয়ে ৬ জনকে আসামি করে বাঞ্ছারামপুর মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
বাঞ্ছারামপুর থানার এসআই মনিরুল ইসলাম গত শুক্রবার ( ৫ মার্চ) রাতে বিষ্ণুরামপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে তার বাড়ি থেকে অভিযুক্ত রায়হানের বড়ভাই রাসেল আহাম্মদকে আটক করে। অভিযোগে রাসেল আহম্মদের নাম থাকা সত্ত্বেও তাকে আটকের পর গাড়িতে তুলে থানায় না এনে পথের মধ্যে সমঝোতা করে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এসআইয়ের বিরুদ্ধে।
এ ব্যাপারে বাদী ছাত্রীর মা বলেন, আমি থানায় একটা মামলা জমা দিয়েছি। পরে থানার মনির দারোগা শুক্রবার রাতে আমার মামলার আসামি রাসেলকে তার বাড়ি থেকে আটক করে রাস্তায় নিয়ে ছেড়ে দেয়। আমার মেয়েকে ওরা (অপহরণকারী) মেরে ফেলেছে নাকি জীবিত রাখছে, কোনো কিছুই বলতে পারছি না। আসামিদের ভয়ে আমি এলাকা ছাড়া। বাড়ি যেতে পারছি না। পুলিশ আসামিদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
এ বিষয়ে উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনিরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগে রাসেলের নাম রয়েছে এটা সত্য। সেদিন রাসেল আমাদের সঙ্গে কথা বলতে এসেছিলেন, তাই তাকে আমরা আটক করিনি। তবে তাকে চাপ দিয়েছি মেয়েটিকে উদ্ধার করে দিতে। রাসেল এখন ঢাকায় আছেন। ঢাকা থেকে তিনি নিয়মিত আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। যেহেতু রাসেলকে আটক করিনি, তাই ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্ন আসে না’, বলেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজু আহাম্মেদ বলেন, অভিযোগ পেয়ে এসআই মনিরকে পাঠিয়েছিলাম। তবে কাউকে আটক করে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এ ঘটনা জানার পর রায়হানের পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। আমরা রায়হান এবং ওই মেয়েটিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেয়েটির পরিবার থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর থেকে রায়হানের মা-বাবা এলাকা থেকে গা-ঢাকা দিয়েছেন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে রায়হানের বড় ভাই কালা মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা রায়হানকে ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। কিন্তু আমাদেরকে সেই সুযোগ দিতে হবে। আমি ও আমার স্ত্রী এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত না থাকলেও আমাদেরকে কেন মামলায় ফাঁসানো হলো’, প্রশ্ন করেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুলিশের ভূমিকায় মানুষের নিশ্চিন্ত থাকার কথা থাকলেও এখন আতঙ্কে ভোগেন। দেশে সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী, ধর্ষক ও ডাকাতির ভূমিকায় নেমে পড়া পুলিশ বাহিনী নিয়ে দেশে এক রকম আতঙ্ক চলছে। ক্ষমতার অপব্যবহারের পাশাপাশি পুলিশের সরাসরি ডাকাতিতে নেমে পড়ায় উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়ে দেশে এক রকম বিরুদ্ধমত চলছে। আর এর পেছনে রয়েছে তাদেরই জোরালো ভূমিকা। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পুলিশের থাকার কথা থাকলেও পুলিশ নিজেই এখন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। যাদের রক্ষা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাদের এহেন ভক্ষকের ভূমিকায় স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্কে আছে দেশবাসী। এ থেকে উত্তরণের জন্য পুলিশ বাহিনীকেই উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি সরকারের কড়া নজরদারিও দাবি করেন বিশেষজ্ঞরা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৯৫৯
আপনার মতামত জানানঃ