সরকারি ভাতা পান এমন অতিদরিদ্ররা সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছেন। ফলে তাদের ব্যাংক হিসাবে জমা টাকার পরিমাণ প্রতিনিয়ত কমছে। আবার করোনার কারণে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচির তহবিলও মাঠপর্যায়ে যাচ্ছে না। ফলে বড় ধরনের সংকটে পড়েছেন অতিদরিদ্র মানুষেরা। ২০১৯ সালের তুলনায় গত বছর ১০/৫০/১০০ টাকার অ্যাকাউন্ট (নন-ফ্রিল অ্যাকাউন্ট) সংখ্যা ৯ শতাংশ বাড়লেও আমানতের পরিমাণ ০.৬ শতাংশ কমেছে। অতিদরিদ্র মানুষ যাদের ১০ টাকার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে, তাদের সঞ্চয় গত বছর প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। করোনার প্রকোপে আয় কমে যাওয়ায় ব্যাংকে আমানত রাখতে পারেননি অনেকে; আবার কেউ কেউ আমানত ভেঙে ফেলেছেন।
এসবের প্রভাবে ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ব্যাংকে রাখা তাদের সঞ্চয় কমে গেছে প্রায় ৪৫ শতাংশ। তবে অ্যাকাউন্ট সংখ্যা ৭ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এদিকে, ২০১৯ সালের তুলনায় গত বছর সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অধীনে সুবিধাভোগী ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অ্যাকাউন্ট সংখ্যা ও আমানতের পরিমাণ বেড়েছে। তবে কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট সংখ্যা কমলেও বেড়েছে আমানত। এর বাইরে অন্যান্য অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ও আমানতের পরিমাণ কমেছে।
বৃহস্পতিবার ( ৪ মার্চ ) কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত ‘কোয়ার্টারলি রিপোর্ট অন নন-ফ্রিল অ্যাকাউন্টস (অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০২০)’ প্রতিবেদন থেকে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদেনে দেখা যায়, ২০১৯ সালের তুলনায় গত বছর ১০/৫০/১০০ টাকার অ্যাকাউন্ট (নন-ফ্রিল অ্যাকাউন্ট) সংখ্যা ৯ শতাংশ বাড়লেও আমানতের পরিমাণ ০.৬ শতাংশ কমেছে।
নন-ফ্রিল অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে গ্রাহকরা সরকারি ব্যাংকগুলোকেই বেছে নিচ্ছেন। এরমধ্যে অ্যাকাউন্ট সংখ্যা ও আমানতের পরিমাণের দিক থেকে সবার ওপরে আছে সোনালী ব্যাংক। নন-ফ্রিল অ্যাকাউন্ট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক নাজনীন আহমেদ বলেন, করোনার ধাক্কায় অতিদরিদ্রদের আয়ে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। তবে আসলে ওইসব অ্যাকাউন্ট কতটা আমাদের মতো তারা (দরিদ্ররা) ব্যবহার করেন, সেটাও দেখতে হবে।
অন্যদিকে একই সময়ে সরকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীদের সহায়তার জন্য সামাজিক কর্মসূচির আওতা এবং পরিমাণ বাড়ায় এ সংক্রান্ত অ্যাকাউন্ট সংখ্যা ও আমানত বেড়েছে বলে তিনি মনে করেন।
নন-ফ্রিল অ্যাকাউন্টগুলোর মধ্যে স্কুল শিক্ষার্থীদের অ্যাকাউন্টও রয়েছে। করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও ২০২০ সালে ২০১৯ সালের তুলনায় শিক্ষার্থীদের অ্যাকাউন্ট সংখ্যা ৯.৭৯ শতাংশ এবং আমানত ৭.১১ শতাংশ বেড়েছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, স্কুল ব্যাংকিংয়ের অ্যাকাউন্টগুলো শহরাঞ্চলেই বেশি। অ্যাকাউন্ট সংখ্যা ও আমানতের বেশির ভাগই ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে। স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনায় সবচেয়ে এগিয়ে আছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক।
নন-ফ্রিল অ্যাকাউন্ট প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জনান, সরকারের বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচির বাস্তায়ন, যেমন- সামাজিক সুরক্ষা খাতে সহায়তা, শিক্ষাবৃত্তি, কৃষকদের ভর্তুকি দেওয়া- এসব ক্ষেত্রে এই অ্যাকাউন্টগুলোর গুরুত্ব আছে। এসব অ্যাকাউন্টের বিপরীতে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত জামানত ছাড়া ঋণ দেওয়ার সুযোগ আছে। জামানতসহ ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ ও দেওয়া যায়।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৬৫৫
আপনার মতামত জানানঃ