মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য খালাসের অভিযোগে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পশ্চিম নাখালপাড়ায় অবস্থিত তানাজ এন্টার প্রাইজ নামক একটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়েছে ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উদঘাটিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) মামলাটি দায়ের করা হয় বলে জানিয়েছে ভ্যাট গোয়েন্দা।
সংস্থাটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, একজন গ্রাহক সুনির্দিষ্ট ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ করায় ভ্যাট গোয়েন্দা দল প্রতিষ্ঠানের নাখালপাড়া কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করে। সংস্থার উপপরিচালক নাজমুন নাহার কায়সার অভিযানটি পরিচালনা করেন। আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আইসিডি কাস্টম হাউস দিয়ে ব্যাটারির একটি চালানে মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে পণ্য খালাস করার অভিযোগ সম্পর্কিত প্রতিবেদন গত ১০ সেপ্টেম্বর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়।
ভ্যাট গোয়েন্দার অভিযানকালে দেখা যায়, নাখালপারার ৯ তলা ভবনের ৯ম তলায় একটি কক্ষে প্রতিষ্ঠানটির অফিস যা তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। ভবনের সিকিউরিটি গার্ড জানায় প্রতিষ্ঠানটির মালিক উক্ত একই ভবনের ৭ম তলায় থাকেন। গোয়েন্দা দল ওই ফ্লোরে গিয়ে সরকারি কাজে সহযোগিতা চাইলে প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষ এতে সাড়া দেননি।
প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সরকারি কাজে অসহযোগিতার কারণে ডিএমপি-র তেজগাঁও বিভাগের পুলিশের সহায়তা নেয়া হয়। তেজগাঁও থানা পুলিশের উপস্থিতিতে ৯ম তলায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির অফিস কক্ষের তালা ভেঙে প্রবেশ করে ভ্যাট গোয়েন্দার দল। অভিযানকালে প্রতিষ্ঠানের অফিস কক্ষে রক্ষিত বাণিজ্যিক কাগজপত্রদি জব্দ করা হয়।
স্থানীয় ভ্যাট সার্কেল অফিস ও অন্যান্য সূত্রে প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট সংক্রান্ত দলিলাদি সংগ্রহ করা হয়। এসব দলিলাদি পর্যালোচনা শেষে ভ্যাট গোয়েন্দার দল উক্ত আমদানিকারকের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে। অভিযানকালে প্রতিষ্ঠানের অফিস কক্ষে রক্ষিত বাণিজ্যিক কাগজপত্রদি জব্দ করা হয়। স্থানীয় ভ্যাট সার্কেল অফিস ও অন্যান্য সূত্রে প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট সংক্রান্ত দলিলাদি সংগ্রহ করা হয়। এসব দলিলাদি পর্যালোচনা শেষে ভ্যাট গোয়েন্দার দল উক্ত আমদানিকারকের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে।
ভ্যাট গোয়েন্দার তদন্ত অনুসারে, প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ উপকরণ-উৎপাদ সহগ দাখিল না করে ২০১৯ সালের নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ১ বছরে ১ কোটি ৩৫ লাখ ৩৯ হাজার ৯৪৮ টাকা রেয়াত গ্রহণ করে, যা মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ এর ধারা ৪৬ মোতাবেক অবৈধ।
এছাড়াও গেল বছর জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ২ কোটি ৬৫ লাখ ৪২ হাজার ৬৬১ টাকার পণ্য সরবরাহ করে। এতে ৩৯ লাখ ৮১ হাজার ৬৬১ টাকার ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উৎঘাটন করা হয়। এই ভ্যাট যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ভ্যাট আইন অনুসারে মাসভিত্তিক ২ শতাংশ হারে সুদ ৪ লাখ ৯০ হাজার ২৪৩ টাকা আদায়যোগ্য হয়েছে।
তদন্তে অবৈধ রেয়াত বাবদ ১ কোটি ৩৫ লাখ ৩৯ হাজার ৯৪৮ টাকা, ভ্যাট ফাঁকি ৩৯ লাখ ৮১ হাজার ৬৬১ টাকা ও প্রযোজ্য সুদ বাবদ প্রায় ৪ লাখ ৯০ হাজার ২৪৩ টাকাসহ সর্বমোট ১ কোটি ৮০ লাখ ১১ হাজার ৫৯০ টাকা ফাঁকির তথ্য উদঘাটন করা হয়। ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ আইন অনুসারে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তদন্তে ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পাওয়ায় বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির সামগ্রিক বাণিজ্যিক কার্যক্রম ভ্যাট গোয়েন্দার অডিটের আওতায় আনা হয়েছে। ভ্যাট গোয়েন্দার ধারণা, কাস্টম হাউসে আন্ডার-ইনভয়েসের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি পণ্য খালাস করে ভ্যাট কর্তৃপক্ষের কাছে কম মূল্য সংযোজন ঘোষণা করেছে। ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ ভ্যাট রাজস্ব হারিয়েছে।
যেসব প্রতিষ্ঠান সরকারকে ভ্যাট ফাঁকি দিচ্ছে তাদের চিহ্নিত করা গেলে ফাঁকি বন্ধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সজাগ ও সর্তক থাকতে হবে। যে পদ্ধতিতে ফাঁকি দেওয়া হচ্ছে সেটি আগে বন্ধ করতে হবে। ভ্যাট ফাঁকি ধরলেই হবে না, আইনানুগ ব্যবস্থাও নিতে হবে। তাহলেই কেবল ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া বন্ধ হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৭০০
আপনার মতামত জানানঃ