নোভেল করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরি নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। তার মধ্যেই এ বার আমেরিকান সংস্থা মডার্না আইএনসি-তে থাকা নিজেদের বিপুল অঙ্কের অংশিদারিত্ব বা শেয়ার বিক্রি করে দিল ব্রিটিশ-সুইডিশ সংস্থা অ্যাস্ট্রাজেনেকা। ১০০ কোটি ডলারের বিনিময়ে নিজেদের ৭.৭ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করেছে তারা। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির ফলে মডার্নার শেয়ারের দাম বৃদ্ধির পরে এই পদক্ষেপ নিল অ্যাস্ট্রাজেনেকা। ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টাইমসের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ভ্যাকসিন তৈরির কারণে দু’টি কোম্পানিই বর্তমানে আলোচনায় রয়েছে। তবে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ঠিক কবে মডার্নার কাছে মালিকানার অংশ বিক্রি করেছে তা এখনো পরিষ্কার নয়। এ বিষয়ে অ্যাস্ট্রাজেনেকা ও মডার্নার পক্ষ থেকে তাৎক্ষনিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী মহল সূত্রে খবর, একাধিক রোগের প্রতিষেধক তৈরিতে একসঙ্গে কাজ করছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং মডার্না। করোনা সংক্রমণ যদি চিরস্থায়ী হিসেবে থেকে যায়, সে ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে কোভিড প্রতিষেধকের বাণিজ্যিকীকরণও করতে পারে অ্যাস্ট্রাজেনেকা।
করোনাভাইরাস ছাড়াও অন্যান্য রোগের চিকিৎসায় মডার্নার সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে কাজ করছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা। করোনাভাইরাস মহামারি বৈশ্বিক পর্যায় থেকে স্থানীয় পর্যায়ে সীমিত হয়ে এলে অ্যাস্ট্রাজেনেকা করোনা ভ্যাকসিন বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভ্যাকসিনের জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমতি পেয়েছে মডার্না। গত সপ্তাহে কোম্পানিটি জানিয়েছে, চলতি বছর ১ হাজার ৮শ ৪০ কোটি ডলারের ভ্যাকসিন বিক্রির প্রত্যাশা করছে তারা।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভ্যাকসিন দ্রুত সরবরাহের আশ্বাস দিয়েছে ফাইজার এবং মডার্না। এ জন্য নতুন ভ্যাকসিন প্লান্ট চালু করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনগোষ্ঠীকে করোনা প্রতিষেধক দিতে পর্যাপ্ত টিকা তৈরি করার জন্য প্রায় জুলাই মাসের শেষ পর্যন্ত সময় লাগার আভাস দেয়া হয়েছে।
ফাইজার চিফ বিজনেস অফিসার জন ইয়ং-এর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে গণমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকা জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ লাখ এবং মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ করোনা টিকার ডোজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে ফাইজার।
জনসন অ্যান্ড জনসনের ভ্যাকসিনের ব্যাপারে জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম মোস জানিয়েছেন, এই ভ্যাকসিনের কেবল একটি ডোজ নিলেই হবে। ফাইজার এবং মডার্নার ভ্যাকসিনগুলির মতো এটি অত্যন্ত শীতল তাপমাত্রায় রাখারও প্রয়োজন হবে না। এটি গুরুতর রোগের বিরুদ্ধে ৮৫ শতাংশ কার্যকর হবে। অন্য দুটির তুলনায় কিছুটা কম কার্যকরী হলেও এটি খুব ভাল কাজ করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র গ্রহণ করা করোনা টিকা বিতরণের বৈশ্বিক কর্মসূচি কোভাক্স কার্যক্রমে ফাইজার এই বছর স্বল্প আয়ের দেশগুলির জন্য ৪ কোটি ডোজ বিক্রি করেছে। জনসন ও জনসন বিক্রি করেছে ১০ কোটি । বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সারা বিশ্বের সাত হাজার আটশ’ কোটি মানুষের কাছে টিকা পৌঁছাতে বিশ্বজুড়ে আরও অনেক ভ্যাকসিন কারখানার চালু করার প্রয়োজন হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১২৪৫
আপনার মতামত জানানঃ