ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি জনসন অ্যান্ড জনসনের তৈরি করোনা টিকার একটি ডোজই নিরাপদ ও কার্যকর দেখা গেছে বলে জানিয়েছে দেশটির খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) কর্তৃপক্ষ। বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই অ্যামেরিকায় জনসন অ্যান্ড জনসনের তৈরি করোনার ভ্যাকসিন চালু হয়ে যাবে। মার্কিন রেগুলেটরদের মতে, এই ভ্যাকসিন নিরাপদ ও কার্যকর। তাছাড়া এই ভ্যাকসিন ফাইজার বা মডার্নার মতো ফ্রিজারে খুব কম তাপমাত্রায় রাখার দরকার হয় না। সাধারণ ফ্রিজে রাখলেই হয়। ফলে এই টিকা দিতে খরচও কম হবে।
এর আগে এ টিকার কার্যকারিতাসংক্রান্ত ফলাফল গত মাসে প্রকাশ করে জনসন অ্যান্ড জনসন। ওষুধ উৎপাদনকারী বৃহৎ প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান বেলজিয়ামভিত্তিক জ্যানসেন বলেছে, তারা যেসব তথ্য-উপাত্ত পেয়েছে, সে অনুযায়ী গুরুতর অসুস্থতার ক্ষেত্রেও এ টিকা উচ্চমাত্রায় কার্যকর।
বিশ্বের উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোয় করোনার টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) গৃহীত কর্মসূচি ‘কোভ্যাক্স’-এর অধীন প্রথম টিকা পেয়েছে ঘানা। এমন একটি সময় জনসনের টিকা নিরাপদ ও কার্যকর হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করলেন মার্কিন ওষুধ বিশেষজ্ঞরা।
নিজেদের উৎপাদিত টিকার কার্যকারিতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) কাছে তথ্য-উপাত্ত দাখিল করেছে জ্যানসেন। পর্যালোচনা শেষে এই টিকার কার্যকারিতা নিয়ে আরও বিস্তারিত তথ্যসংবলিত নথি প্রকাশ করেছে এফডিএ। ওষুধ নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানটি এই উপসংহারে এসেছে যে করোনার উপসর্গযুক্ত ও গুরুতর অসুস্থতা—উভয় ক্ষেত্রে জনসনের টিকার কার্যকারিতা প্রমাণিত।
যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলে চালানো জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকার ট্রায়ালে (মানবদেহে পরীক্ষা) দেখা গেছে, করোনার তীব্র সংক্রমণে এটি ‘উচ্চমাত্রায় একই রকম’ কার্যকর। তবে সার্বিকভাবে সুরক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলে এটি কম কার্যকর হয়েছে। দেশ দুটিতে ভাইরাসের নতুন ধরনগুলোকে প্রভাব বিস্তারকারীর ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে।
তথ্য-উপাত্তে দেখা গেছে, গুরুতর অসুস্থতা প্রতিরোধে জনসনের টিকা ৮৫ শতাংশের বেশি কার্যকর। তবে সার্বিকভাবে কার্যকর ৬৬ শতাংশ। এই সার্বিক অবস্থার মধ্যে মধ্যম মাত্রার অসুস্থতাও অন্তর্ভুক্ত। টিকা গ্রহণের ন্যূনতম ২৮ দিন পরের অবস্থাও বিবেচনায় আনা হয়েছে এখানে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, যারা জনসনের টিকার ট্রায়ালে অংশ নিয়েছেন, তাদের কেউ টিকা নেওয়ার ২৮ দিন পর মারা যাননি বা হাসপাতালে ভর্তি হননি।
হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, অনুমোদন পেয়ে গেলে আগামী সপ্তাহে জনসন অ্যান্ড জনসনের ৩০ লাখ ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, মার্চের মধ্যে দুই কোটি ডোজ তৈরি হয়ে যাবে। আর অ্যামেরিকার সঙ্গে আগাম চুক্তি অনুসারে জুনের মধ্যে দশ কোটি ডোজ সরবরাহ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে তারা এগোচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা প্রতিরোধে যেখানে ফাইজার ও মডার্নার টিকার দুই ডোজ প্রয়োজন, সেখানে জনসনের টিকা শুধু এক ডোজই লাগবে না; বরং এর কার্যকারিতার সুফল হিসেবে টিকাদানের জন্য তুলনামূলক কম চিকিৎসাকর্মী নিয়োগ দেওয়াই যথেষ্ট হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে এরই মধ্যে সাড়ে ছয় কোটির বেশি মানুষকে করোনার টিকা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে দৈনিক ১৩ লাখের মতো মানুষকে টিকা দেওয়া হচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশটিতে নতুন রোগী, হাসপাতালে ভর্তির হার ও কোভিড-১৯–এ মৃত্যুর ঘটনা কম দেখা যাচ্ছে। তবে শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা করোনাভাইরাসের রূপান্তর এই অগ্রগতির জন্য এখনো হুমকি বলে সতর্ক করে যাচ্ছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৪০৩
আপনার মতামত জানানঃ