করোনাভাইরাসে যারা আগে সংক্রমিত হয়েছেন, তাদের জন্য দুটি নয়, টিকার একটি ডোজই যথেষ্ট। নতুন আরেকটি গবেষণার ভিত্তিতে এমন অভিমত দিয়েছেন কয়েকজন বিজ্ঞানী। তারা বলছেন, যারা কোভিড-১৯ এ সংক্রমিত হয়েছেন, তাদের শরীরে এন্টিবডি তৈরি হয়েছে। কারো বেশি, কারো কম।
এন্টিবডি কম হলে তা কয়েক মাসের মধ্যে আবার শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। কিন্তু যদি একবার আক্রান্ত হয়েছে এমন মানুষের শরীরে টিকার এক ডোজ দেওয়া যায়, তাহলে তা হাজারগুণ বাড়িয়ে দেয় এন্টিবডি। গবেষণায় দেখা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুস্থ হয়েছেন, এমন ব্যক্তির শরীরে টিকার একটি ডোজ যথেষ্ট রোগ প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি করতে পারে। এতে আবার করোনায় সংক্রমিত হওয়া থেকে তিনি সুরক্ষিত থাকতে পারেন। করোনায় একবার সংক্রমিত হলে মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হয়। তাই টিকার একটি ডোজই বুস্টার হিসেবে কাজ করে।
তা শুধু কোভিড-১৯ না, বি ১৩৫১ নামে করোনার যে নতুন জাত যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বেশ কয়েকটি জায়গা ছড়াচ্ছে, তার বিরুদ্ধেও কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। এ বিষয়ক দুটো গবেষণা আগেই হয়েছিল। আরো বেশ কয়েকটি সম্প্রতি হয়েছে। তার একটির নেতৃত্বদানকারী এন্ড্র্যু টি ম্যাকগুয়ার এ বিষয়ে কথা বলেছেন নিউ ইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে।
তিনি জানান, একবার করোনা হওয়া ব্যক্তির শরীরে ফাইজার-বায়োএনটেক বা মডার্নার টিকার এক ডোজ দিলে যে এন্টিবডি হয়, তা একবারও আক্রান্ত না হওয়া ব্যক্তির শরীরে দুই ডোজ দেওয়ার পরে তৈরি হওয়া এন্টিবডির তুলনায় বেশি। তা যে শুধু করোনা বা এর নতুন প্রজাতির বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলে তা না, তা সার্সের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তোলে। সিয়াটল কোভিড কোহর্ট স্টাডি নামের ওই গবেষণায় আগে করোনা হয়েছিল এমন দশজনের মধ্যে সাতজনকে ফাইজার-বায়োএনটেক এবং তিনজনকে মর্ডানার টিকা দেওয়া হয়।
প্রথমে তাদের রক্তের নমুনা নেওয়া হয়। তারপর টিকার ডোজটি দেওয়া হয়। দুই-তিন সপ্তাহ যেতে না যেতেই বাড়তে থাকে এন্টিবডি। তবে সেই এন্টিবডি কতদিন থাকবে তা নিশ্চিত না হওয়া গেলেও সহসাই তা শেষ হবে না বলে আশা প্রকাশ করেছেন ম্যাকগুয়ার। নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের আগে করোনা হয়েছিল, টিকার দ্বিতীয় ডোজে তাদের নতুন এন্টিবডি যোগ হয়নি। তাদের পরীক্ষণে দেখা যায়, যাদের সাত-আট মাস আগে করোনা হয়েছিল, তাদের দেহে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়ার পর এন্টিবডি কয়েকশ থেকে কয়েক হাজার গুণ বেড়েছিল। পরেরটা যোগ হওয়ার পর তাতে খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি।
এদিকে ইতোমধ্যে যারা করোনাভাইরাস রোগ থেকে নিরাময়ে এসেছেন তাদের বিষয়ে ফ্রান্সের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ টিকার একটিমাত্র ডোজ গ্রহণ করার জন্য সুপারিশ করেছে। ফ্রান্সের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই রোগের সংক্রামিত ব্যক্তিদের শরীরে ইতোমধ্যে একটি টিকার ডোজের অনুরূপ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে। সুতরাং সংক্রমণের পরে তাদের জন্য একটি ডোজই সম্ভবত যথেষ্ট হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বিশ্বাস করেন এ বিষয়টি বাংলাদেশের জন্যও সমানভাবে প্রযোজ্য। তিনি বলেন, আমাদের সরকারেরও উচিত এ বিষয়টিকে বিবেচনা করা এবং টিকা সম্পর্কিত সকল তথ্য জনগণের নিকট প্রকাশ ও প্রচার করা। তাহলে ফ্রান্সের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় জনসাধারণ উপযুক্ত আস্থা রাখতে পারবে।
ইইউর রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থার প্রধান বললেন, সংক্রমণের গতি কমে যাওয়ার পাশাপাশি টিকাদান কর্মসূচি চললেও সহসাই করোনা থেকে মুক্তি মিলছে না বলে। তিনি বলেছেন, করোনাভাইরাসকে দীর্ঘকাল ধরে মোকাবেলার প্রস্তুতি বিশ্ববাসীর রাখতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৭৪০
আপনার মতামত জানানঃ