মাদ্রাসা শিক্ষক কর্তৃক শিশু বলাৎকার ও ধর্ষণের অভিযোগ প্রায়ই আসে। এসব ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে ধর্ষণের ঘটনার অভিযোগ আসে। এবিষয়ে ইতিমধ্যে দেশবাসীর নিকট মাদ্রাসা ও মাদ্রাসা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে এক নেতিবাচক মনোভাব তৈরী হয়েছে। মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত শিশু বলাৎকার ও ছাত্রী ধর্ষণের মতো ঘটনার অভিযোগ আসলেও এবার এক মাদ্রসাশিক্ষক কর্তৃক কলেজছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগ এসেছে। কুমিল্লার চান্দিনায় এক কলেজছাত্রীকে (১৮) ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে মো. শাহপরান নামের এক মাদ্রাসাশিক্ষকের বিরুদ্ধে। পেট ব্যথার কারণে হুজুরের কাছ থেকে পানিপড়া আনতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হন ওই ছাত্রী। এ অভিযোগে অভিযুক্ত মাদ্রাসার হুজুর মো. শাহপরানকে গ্রেপ্তার করে শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কুমিল্লা আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেপ্তার শাহপরান উপজেলার এতবারপর গ্রামের মো. সুন্দর আলী ছেলে। তিনি একই উপজেলার হারং গ্রামের উত্তরপাড়া এলাকার আল-করিম মাদ্রাসার শিক্ষক।
জানা যায়, দীর্ঘদিন পেটের পীড়ায় ভোগার কারণে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি চাচাতো ভাইয়ের পরামর্শে চান্দিনার হারং উত্তরপাড়া আল কারিম মাদরাসার হুজুর শাহপরানের কাছে ঝাড়-ফুঁক করার জন্য যায় ওই কলেজছাত্রী। হুজুর প্রথম দিন পানিতে ফু দিয়ে আরও কয়েকদিন আসার জন্য বলেন।
বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে হুজুরের কথামতো মাদ্রাসায় যাওয়ার পর হুজুর “জ্বিনের চালান” দেওয়ার কথা বলে তার অফিস কক্ষে নিয়ে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রী নিজেই বাদী হয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে চান্দিনা থানায় মামলা দায়ের করে। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মাদ্রাসাশিক্ষককে গ্রেপ্তার করে।
চান্দিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামসুদ্দিন মোহাম্মদ ইলিয়াছ জানান, প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। মাদরাসার হুজুরকে আটক করে শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হুজুরদের ধর্ষণের ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে এক আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত ছাত্রদের বলাৎকারের পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে ধর্ষণের অভিযোগ আসে যা অত্যন্ত আতঙ্কের বিষয়। তারা বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষক ও হুজুরদের প্রতি মানুষের মনে আলাদা এক শ্রদ্ধার জায়গা রয়েছে। ধর্মীয় শিক্ষা গুরু হিসাবেও সমাজে রয়েছে তাদের আলাদা গ্রহণযোগ্যতা। ধর্মীয় নৈতিকতার চর্চা করেন বলে তাদের প্রতি মানুষের মনে এক ধরনের ভরসা ও আস্থা কাজ করে। কিন্তু যে হারে মাদ্রাসা শিক্ষকেরা ধর্ষণের মতো গর্হিত কাজে জড়িয়ে পড়ছেন এতে দেশের ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি মানুষের অনীহা ও অনাস্থা তৈরী হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরল মনে তাদের নিকট ধর্মীয় শিক্ষা নিতে সন্তান পাঠালেও তারা সেটা বজায় রাখতে বরাবরই ব্যর্থ হচ্ছেন। সমাজে তাদের প্রতি ভরসা ও আস্থা আছে বলেই ছোটখাটো বিষয়েও লোকজন তাদের নিকট যায়। হোক সেটা পানি পড়া কিংবা কোনো ধর্মীয় উপদেশ। তারা যদি সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ঘৃণিত কাজে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন তখন মানুষের মন থেকে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভক্তি উঠে যায়। সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনাগুলোর কারণে তাই মানুষের নিকট তাদের নিয়ে এক নেতিবাচক মনোভাব তৈরী হয়েছে। তারা ধর্মীয় দিক থেকে আলেম, জ্ঞানী, তাদের হাতে যদি সন্তান নিরাপদ না থাকে তবে দেশে মাদ্রাসা শিক্ষার ব্যাপারে এক বিরূপ মনোভাব তৈরি হবে বলে মনে করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২১০২
আপনার মতামত জানানঃ