কুমিল্লার সদরে উপজেলায় প্রবাসীর স্ত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা ও নির্যাতনের অভিযোগে মো. রনি নামে এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি কুমিল্লা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলাটি করেন ভুক্তভোগী প্রবাসীর স্ত্রী। অভিযুক্ত রনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। তিনি জেলার সদর উপজেলার বারপাড়া এলাকার কৃষ্ণপুর সর্দার বাড়ির আবু তাহেরের ছেলে।
এ মামলার বাদী ওই প্রবাসীর স্ত্রীও একই এলাকার বাসিন্দা। আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি বাদী ও অভিযুক্তদের জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের নারী ও শিশু নির্যাতন সেলে হাজির হওয়ার জন্য ইতিমধ্যে নোটিশ দিয়েছে কোতয়ালী থানা পুলিশ।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, স্বামী প্রবাসে থাকার কারণে এক সন্তানের জননী ওই নারী শিশু সন্তানসহ তার বাবার বাড়িতে বসবাস করছেন। একই এলাকার ছাত্রলীগ নেতা রনি বিভিন্ন সময় তাকে কু-প্রস্তাব দিত। এ নিয়ে অতীতে সালিশ বৈঠক হয়। সালিশ বৈঠকের সিদ্ধান্ত মতে ছাত্রলীগ নেতা রনি আর এই রকম করবে না বলে অঙ্গীকার করে। কিন্তু গত ২৮ জানুয়ারি বিকালে ওই প্রবাসীর স্ত্রীকে বাড়িতে একা পেয়ে ঘরে ঢুকে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় ছাত্রলীগ নেতা রনি। এ সময় ওই নারী চিৎকার করলে তাকে মারধরও করে করে সে। এছাড়া তার কাছে চাঁদাও দাবি করেন রনি। পরে আহত এই নারীকে স্বজনরা উদ্ধার করে কুমিল্লা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
আদালতের বিষয়টি আমলে নিয়ে কুমিল্লা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের উপ-পুলিশ পরিদর্শক শামছুন নাহার গত ৮ ফেব্রুয়ারি স্বাক্ষরিত এক পত্রে কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জকে আসামিদের আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি দুপুর ২টায় কুমিল্লা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে হাজির করানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। এই পত্রের আলোকে ৯ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আনোয়ারুল হক থানার এএসআই নাজিম উদ্দিনকে দায়িত্ব দেন।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কমকর্তা এএসআই নাজিম উদ্দিন বলেন, মামলাটি নারী ও শিশু নিযার্তন ট্রাইব্যুনালের। আমাদের কাছে উভয়পক্ষের হাজিরকরণ প্রসঙ্গে নোটিশ এসেছে। আমরা তা উভয় পক্ষে দিয়েছি। রনি ও তার মা সহ নাম উল্লেখসহ চাঁদাবাজি ও ধর্ষণের চেষ্টা মামলা এজাহারভুক্ত বিষয়টি আদালত দেখবেন।
কুমিল্লা আদালতের পুলিশ পরিদর্শক সালাউদ্দিন আল মাহমুদ জানান, আদালত বাদীর অভিযোগ গ্রহণ করে এই বিষয়ে প্রাথমিক তদন্ত দাখিলের জন্য কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানাকে নির্দেশ দেন।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ছাত্রলীগ নেতা রনি বলেন, এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। এগুলো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। যেহেতু তিনি মামলা করেছেন, আমরাও আইনিভাবে জবাব দেব। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন রুবেল বলেন, আমি এখনো বিষয়টি জানি না। তবে মামলায় তিনি যদি দোষী প্রমাণিত হন, তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব। কোনো অপরাধ করে দলীয় পরিচয়ে পার পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ক্ষমতায় থাকা দলগুলোর ছাত্র সংগঠনের ধর্ষণকাণ্ড লিখতে গেলে কয়েক খণ্ড গ্রন্থ রচিত হয়ে যাবে। ধর্ষণকাণ্ডের অধিকাংশই খবরে আসে না। ধর্ষণের শিকার নারীরা সাধারণত ভয়েই ঘটনা প্রকাশ করেন না। এসব সমস্যা ছাপিয়ে ছিটেফোঁটা যে দু-একটি খবর প্রকাশিত হয়, সেগুলোর কয়েকটি দিয়েই অপরাধীদের দায়মুক্ত থাকার নমুনা টের পাওয়া যায়। তারা জানে, পুলিশ, আইন, বিচার প্রভৃতি সবকিছুই তাদের ক্ষমতার কাছে নতজানু। সরকার দলীয় বিধায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে কেউ সাহস করে না। নারী নির্যাতন রোধে বিভিন্ন আইন ও তাতে শাস্তির বিধান থাকলেও সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে নারীর ওপর সহিংসতা দিনদিন বাড়ছেই। ছোট-বড় সব নারীর সম্মান রক্ষা করা সমাজের নৈতিক দায়িত্ব এবং নারীর ওপর সহিংসতা বন্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১২২৫
আপনার মতামত জানানঃ