বরগুনার বেতাগীতে ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবন আচমকা ভেঙে পড়েছে। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই ভেঙে পড়েছে ভবনটি। গতকাল বৃহাস্পতিবার (১৮ ফ্রেরুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে ঠিকাদারের লোকজন সেন্টারিং খোলার সময় হঠাৎ ভবনের সামনের অংশ ভেঙে পড়ে। সিডিউল মোতাবেক কাজ না করা এবং নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করার ফলে নির্মানাধীন ভবন ভেঙে পড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এলাকাবাসীর অভিযোগ, শুরু থেকেই ঠিকাদার ভবনটি নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে আসছেন। এ ছাড়া নির্মাণকাজে প্রকৌশলীর গাফিলতি রয়েছে বলেও এলাকাবাসী অভিযোগ তুলেছেন।
জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বরগুনার বেতাগীতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণের জন্য গত বছর দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৪৭ লাখ টাকা। বেতাগী উপজেলার মেসার্স খান এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই নির্মাণকাজ করছেন। খান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী ও হোসনাবাদের ইউপি চেয়ারম্যান মো. খলিলুর রহমান এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক।
গত বছর ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। শুরু থেকেই ভবন নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ শুরুর অভিযোগ ওঠে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে। নির্মাণকাজ শেষ না হতেই গতকাল হঠাৎ ধসে গেছে। অনিয়ম বন্ধ করে নিয়মানুযায়ী কাজের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ভূমি কার্যালয়ের ভবন নির্মাণের ইট, বালু, রড ও সিমেন্টের আনুপাতিক হারে প্রয়োগ করা হয়নি। এতে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে।
কাজিরাবাদ ইউনিয়নের ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মো. মহাসিন খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সকাল ১১টার দিকে আমি অফিসে দাপ্তরিক কাজ করছিলাম। তখন বিকট শব্দ শুনতে পাই। পরে বাইরে গিয়ে দেখি, নির্মাণাধীন ভবনের সামনের একটি অংশ ধসে পড়ছে।’
তিনি আরও বলেন, উপকরণ কম দেওয়ার কারণে ছাদটি ধসে পড়েছে। এ ছাড়া ছাদ ঢালাইয়ের পর থেকে এই ভবনে পানি দেওয়া হয়নি।
বেতাগী উপজেলা প্রকৌশলী শিপলু কর্মকার বলেন, ‘ঠিকাদার নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে ভবন নির্মাণ করার কারণে ভবনের একটি অংশ ভেঙে পড়েছে। ঠিকাদারকে আমরা এই অংশ ভেঙে ফেলার জন্য চিঠি দিয়েছি। তিনি আমাদের কথা শোনেননি। এই অংশ নির্মাণের সময় আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করেননি।’
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান খান ইন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী মো. খলিলুর রহমান খান বলেন, ভূমি কার্যালয়ের ভবন নির্মাণের কাজের দরপত্রের প্রাক্কলন অনুযায়ী কাজ করা হয়েছে। বলেন, কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি। নির্মাণশ্রমিকদের ভুলবসত মেইনটেনেন্স সমস্যার জন্য এমনটি হয়েছে। তবে দ্রুতই নতুনভাবে কাজ শুরু করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সুহৃদ সালেহীন বলেন, ভবন ধসে পড়ার খবর শোনার পর এ বিষয় আমি সার্বিক খোঁজ নিয়েছি। ঠিকাদারের লোকজন দীর্ঘদিন কাজটি ফেলে রাখায় অসতর্কতার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে। এটি ভবনের বাইরের অংশ। তবে এতে বড় ধরনের কোনো সমস্যা হবে না।
তিনি আরো বলেন, ঠিকাদারকে সঠিকভাবে সিডিউল মোতাবেক কাজ শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সিডিউল মোতাবেক কাজ না করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি বাজেটের টাকা ভবন পর্যন্ত আসতে আসতে এতটাই সংকুচিত হয়ে যায় যে, পরিকল্পনা অনুযায়ী ভবন নির্মাণ করা প্রায় কঠিন হয়ে পড়ে। সেখানে রয়েছে আবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ। ফলে ভবন যা পায় তাতে তার দাঁড়িয়ে থাকে অসম্ভব হয়ে ওঠে। এর কারণেই ঘটে ধসের মতো ঘটনা। তারা মনে করেন, ভবন নির্মাণের জন্য যে বাজেট পাস হয় তা কাজে লাগালে শত বছরেও ধসে পড়ার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু দেশের বাজেটগুলো পাস হয় বাজেট বাস্তবায়ন পর্যন্ত যেতে যেতে যতগুলো পকেট পড়ে সেসবের কথা চিন্তায় রেখে। ফলে পরিকল্পিত কাজটি আর পরিকল্পিতভাবে হয়ে ওঠে না।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৪৯
আপনার মতামত জানানঃ