নিবন্ধন করেও এসএমএস পেতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে টিকা প্রত্যাশীদের। কেন্দ্র বিশেষে ৭-১০ দিনেও টিকার তারিখের এসএমএস পৌঁছায়নি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১৫ দিনও পার হয়ে গেছে। এই নিয়ে দুশ্চিন্তা না করার আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বললেন, কেন্দ্রের দৈনিক সক্ষমতা অনুযায়ী ক্ষুদে বার্তায় টিকা দেয়ার তারিখ জানিয়ে দেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, যেসব কেন্দ্রে নিবন্ধন বেশি হয়েছে, সেখানকার লোকজন এসএমএস পাচ্ছে না। তারা পেছনে পড়েছে। তবে সবাই টিকা পাবেন।
বিশেষ করে রাজধানীর পাঁচ-ছয়টি কেন্দ্রের এসএমএস পেতে বেশি দেরি হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, জাতীয় নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এ ছাড়া উত্তরার ইউটিলিটি-২ পপুলেশন সার্ভিসসহ এমন কিছু কেন্দ্র থেকে এসএমএস পেতে দেরি হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের টিকা ও নিবন্ধনের সংখ্যা বিশ্লেষণ করে সারা দেশে নিবন্ধন জটের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব হিসাব থেকে দেখা গেছে, প্রতিদিনই টিকার সঙ্গে নিবন্ধনের ব্যবধান বাড়ছে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে মোট নিবন্ধন হয়েছে ১৭ লাখ ৪০ হাজার। টিকা পেয়েছেন ৯ লাখ ৬ হাজার ৩৩ জন। সেদিন নিবন্ধন করেও টিকা পাননি ৮ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬৭ জন। পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারি নিবন্ধিত ২০ লাখ ১৬ হাজার মানুষের মধ্যে টিকা পেয়েছেন ১১ লাখ ৩২ হাজার ৭১১ জন। এদিন টিকার চেয়ে নিবন্ধনের সংখ্যা বেশি ছিল আগের দিনের চেয়ে ৪৬ হাজার ৩২২টি। এর পরদিন ১৬ ফেব্রুয়ারি মোট নিবন্ধনের সংখ্যা ছিল ২২ লাখ ৬২ হাজার ৭৯৩টি ও টিকা পেয়েছেন ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৬১৩ জন। এদিন নিবন্ধিত ৯ লাখ ৩১ হাজার ৮০ জন টিকার বাইরে ছিলেন। সর্বশেষ ১৭ ফেব্রুয়ারি মোট নিবন্ধন হয়েছে ২৫ লাখ ৪৯ হাজার, কিন্তু টিকা নিয়েছেন মোট ১৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৬৮ জন। এদিন টিকার সঙ্গে নিবন্ধনের ব্যবধান আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৯ লাখ ৬২ হাজার ৬৩২ জনে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. জুলফিকার আহমেদ আমিন গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত নিবন্ধন পেয়েছি ৩৫ হাজার। সুতরাং কেউ যদি আশা করে আমরা নিবন্ধনকারীকে আগামীকাল বা পরশু টিকার তারিখ দিয়ে দেব, সেটা সম্ভব নয়। ৫-১০টা হাসপাতাল মিলে দেবে ৩৫ হাজার। আর আমরা একাই দেব ৩৫ হাজার। আগামীকাল দেখব নিবন্ধন ৪০ হাজার হয়ে গেছে। সুতরাং আমরা চাহিদা অনুযায়ী টিকা দিতে সময় লাগছে। জনগণকে ধৈর্য ধরতে হবে। সবাই এসএমএস পাবে এবং এসএমএস প্রাপ্তিসাপেক্ষে সবাই যেন টিকা নিতে আসে।
সমাধান কীজানতে চাইলে এই পরিচালক বলেন, বিএসএমএমইউ যে কারণে সবাইকে আকৃষ্ট করতে পেরেছে, অন্য কেন্দ্রগুলোকেও সেই চেষ্টা করতে হবে। আরেকটা জিনিস মনে হয় যে, এসএমএসের জন্য যে অপেক্ষা করতে হবে, সেটাও প্রচার করার দরকার আছে। অনেকে ভাবছে এসএমএস আসবে কি না, সেই অনিশ্চয়তা দূর করতে হবে। এই অনিশ্চয়তার কারণেও অনেকের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। জনগণকে বলতে হবে ধৈর্য হারাবেন না। কোনো কোনো সেন্টারের ওপর চাপ বেশি পড়ছে। আপনারা ধীরে ধীরে এসএমএস পাবেন এবং এসএমএস প্রাপ্তিসাপেক্ষে কেন্দ্রে আসেন।
এদিকে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ২৬ লাখ মানুষ টিকার নিবন্ধন করার পর দেশে উম্মুক্ত করা হলো ‘সুরক্ষা’ অ্যাপ। বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এই অ্যাপ উদ্বোধন করেন। কথা ছিল করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি শুরুর আগে ‘সুরক্ষা’ অ্যাপ পাওয়া যাবে গুগল প্লে স্টোরে। তবে নানা জটিলতায় আটকে থাকা সুরক্ষা অবশেষে উন্মুক্ত হলো। এখন থেকে গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যাবে অ্যাপটি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ মাসেই ৩৫ লাখ টিকা দেয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের। সেই লক্ষ্যে গত ২৫ জানুয়ারি তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে এই অ্যাপ হস্তান্তর করার কথা ছিল। তবে গুগল প্লে স্টোরের অনুমোদন না পাওয়ায় প্রায় এক মাস সময় অ্যাপ হস্তান্তর আটকে গিয়েছিল। এ নিয়ে শুরুতে টিকা কার্যক্রমে ধীরগতি ছিল। এমন বাস্তবতায় টিকা নিতে সবাইকে আগ্রহী করতে নিবন্ধনপ্রক্রিয়া সহজ করেছে সরকার। ওয়েব পোর্টালে সুরক্ষা লিংক আরও সহজ করা হয়েছে। শুরুতে টিকা নিতে ৫৫ বছরের বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা কমিয়ে ৪০ বছর করা হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৪৫৫
আপনার মতামত জানানঃ