দেশের সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাম রয়েছে। দেশের প্রায় প্রতিটা থানাতেই দুর্নীতির চিত্র রয়েছে বলে বিশ্লেষকরা জানান। এরমধ্যে ব্যতিক্রম কিছু পুলিশ থাকেন যারা দুর্নীতির চারপাশেও ঘেষেন না। সম্পূর্ণ পরিষ্কার ইমেজ, কাজে নিষ্ঠাবান এমন পুলিশদেরই বিভিন্ন সময়ে জেলার শ্রেষ্ঠ হিসাবে পুরস্কৃত করা হয়। তবে এবার যেন পুরস্কৃত পুলিশদের ওপরও বিশ্বাস হারাতে হচ্ছে। তারাও জড়িয়ে আছেন দুর্নীতি নামক বৃত্তে। জানা যায়, সিলেট জেলার শ্রেষ্ঠ ওসির পুরস্কার পাওয়ার তিন মাসের মধ্যেই গোয়াইনঘাট থানার ওসি আব্দুল আহাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার জাফলং নয়াবস্তির বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা ইনছান আলী বাদী হয়ে ওসিসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা করেছেন।
গত রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) আদালত মামলা আমলে নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদী পক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ শাহ আলম।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- গোয়াইনঘাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল মান্নান, উপজেলার মামারবাজার এলাকার ইমরান হোসেন ওরফে জামাই সুমন, বাল্লাঘাটের আলাউদ্দিন, নয়াবস্তির পাখি মিয়ার ছেলে সমেদ, ফয়জুল ইসলাম, মো. ফিরোজ, রহমত আলী ও সানু মিয়া। তাদের বিরুদ্ধে সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গায় জোর করে পাথর উত্তোলনের সুযোগ দিয়ে আর্থিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত নভেম্বরে জেলার শ্রেষ্ঠ ওসির পুরস্কার পান আব্দুল আহাদ। তার বিরুদ্ধে আদালতে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা হওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা ইনছান আলী মামলায় উল্লেখ করেন, ওসি আব্দুল আহাদ ও এসআই আব্দুল মান্নান তার জমিতে অন্য আসামিদের পাথর তুলতে দিয়ে আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন। তিনি নিষেধ করলে তাকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়। এমনকি সরকারি খাস জমি থেকে এই দুই পুলিশ কর্মকর্তা আসামিদের পাথর উত্তোলনের সুযোগ করে দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এতে একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে যন্ত্র দিয়ে পাথর উত্তোলন করায় পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের দুর্নীতি রোধে বিভাগীয় শাস্তির বিধান আছে। শাস্তিও দেয়া হচ্ছে। এর পরেও থামছে না অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদের অপকর্ম। পুলিশের ঊর্ধ্বতন পর্যায় থেকে কঠোর অবস্থানের কথা বলা হলেও মাঠপর্যায়ে তার উল্টো চিত্র। পুলিশ হেড কোয়ার্টারের দেয়া এক তথ্যে জানা গেছে, প্রতি বছর পুলিশ সদস্য থেকে কর্মকর্তা পর্যন্ত অনেকেরই সাজা হয়। প্রতি বছর পুলিশ কনস্টেবল থেকে সাব ইন্সপেক্টর পর্যন্ত প্রায় ১২ হাজারেরও বেশি পুলিশের সাজা হয়। এ ছাড়াও ইন্সপেক্টর ও সহকারী পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের অনেকের সাজা হয়। কিন্তু এর পরেও কথা থেকে যায়।
তারা বলেন, দুর্নীতিবাজ এক ওসিকে কিভাবে জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি হিসাবে পুরস্কৃত করা হলো, বিষয়টা রহস্যজনক। পুলিশের মধ্যকার এই পুরস্কার বিষয়টাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে মনে করেন তারা। তারা মনে করেন, জেলার শ্রেষ্ঠ ওসি হয়েও যিনি দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন, তখন দেশের অন্যান্য পুলিশ অফিসারদের ওপর তখন আস্থা থাকে না। এ ঘটনায় এটাই প্রমাণ করে যে, দেশের কোনো পুলিশ সদস্যই দুর্নীতি থেকে মুক্ত নয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৮৩৯
আপনার মতামত জানানঃ