পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার এলজিইডির আওতাধীন ২৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে শুরু থেকেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আহম্মেদ এন্টারপ্রাইজ ও সাঁথিয়া উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অনিয়ম করে আসছে। সড়কে নিম্নমানের রড ব্যবহার , ঢালাই মিক্সিংয়ে ব্যাপক অনিয়ম, পরিমাণের তুলনায় সিমেন্ট বালু কম দেওয়া, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগসহ আরো অনেক অভিযোগ করে আসছিলেন স্থানীয়রা। তবে এসব অভিযোগের থোরাই কর্ণপাত করেছেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি। এ নিয়ে স্থানীয়রা উপজেলা প্রকৌশলী বরাবর লিখিত প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
জাতীয় এক দৈনিক মাধ্যমে জানা যায়, আজাহার-আফসার আলী সড়কের সাঁথিয়া পৌরসভার তিনমাথা মোড় থেকে পোস্ট অফিস হয়ে ডা. আবুল হোসেনের বাড়ির মোড় পর্যন্ত প্রায় ২৫০ মিটার এলাকা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার অনুপযোগী ছিল। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে জিওবি মেইনটেন্যান্স প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়কটি সংস্কার করছে এলজিইডি।
অভিযোগে জানা যায়, শুরু থেকেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও সাঁথিয়া উপজেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বরত অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে অনিয়ম করে আসছে। প্রথমত সড়কের নিম্নমানের রড দেয়াকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের সাথে বিতর্ক হয় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের। পরে বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলীর নিকট অভিযোগ করলে নিম্নমানের রড সরিয়ে নেয়া হয়।
অপরদিকে সরজমিনে দেখা যায়, ঢালাই মিক্সিংয়ে ব্যাপক অনিয়ম। এক দিকে মরা পাথর তা আবার ১ বস্তা সিমেন্টে ৫ কারাইয়ের পরিবর্তে ৭ কারাই পাথর ও ২ কারাই বালির পরিবর্তে সেখানে ৩ টুকড়ি বালি দিয়ে ঢালাই মিক্সিং করা হয়েছে। কারাইয়ের পরিবর্তে টুকড়ি ব্যবহারের কারণ হিসাবে জানা গেছে টুকড়িতে বেশী পরিমাণ বালি দেয়া যায়। মরা পাথর ও ময়লা আবর্জনা মিশ্রিত নিম্নমানের বালির ব্যবহার হওয়ায় কাজের মান নিম্নমানের হয়েছে। অপরদিকে ৮ইঞ্চি ঢালাইয়ের ক্ষেত্রে ৭ ইঞ্চি ঢালাই করা হয়েছে। বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলী ও দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে বললে তারা কোন কর্ণপাত না করেই ঢালাইয়ের কাজ শেষ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকৌশল অফিসের এক কর্মচারী জাতীয় ওই দৈনিককে জানান, তদন্ত কমিটি এলে আজহার-আফসার আলী সড়কের প্রথম অংশের ১২ মিটারের মধ্য থেকে নমুনা নিয়ে ল্যাবে পাঠানো হবে। কারণ এই ১২ মিটার কাজ শিডিউল অনুযায়ী করা হয়েছে। তবে পুরো কাজই নয়ছয় হয়েছে কিন্তু সাংবাদিকদের ভিডিও করার বিষয়টি টের পেয়ে মাধপুর-সাঁথিয়া সড়কের সঙ্গে লাগানো প্রথম অংশের মাত্র ১২ মিটার কাজ শিডিউল মোতাবেক করেন।
কাজের অনিয়ম প্রসঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দারা ও বাজারের এক ব্যবসায়ী বলেন, পুরো কাজেই অনিয়ম হয়েছে। সড়ক নির্মাণকাজে এক বস্তা সিমেন্টের সঙ্গে সাত থেকে নয় কড়াই পাথর ও তিন-চার টুকরি বালি দিয়ে ঢালাই মিক্সিং করা হয়েছে। বিষয়টি দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে অবহিত করলে তিনি আমাদের ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী মো. শহিদুল্লাহ বলেন, কাজের মান খুব ভালো হয়েছে। কোনো অনিয়ম হয়নি।
তিনি বলেন, এক বস্তা সিমেন্টে দুই টুকরি বালি ও পাঁচ কড়াই পাথর দিয়েই ঢালাই মিক্সিং হয়েছে। এখানে কোনো অনিয়ম হয়নি।
আজাহার-আফসার আলী সড়ক সংস্কারের অনিয়ম বাদেও সাঁথিয়ায় নাগডেমরা ইউনিয়নে পাটগাড়ি থেকে হাড়িয়া পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি টাকা বরাদ্দে ২ কিলোমিটার কার্পেটিং রাস্তা সংস্কার কাজে নিম্নমানের ইট, খোয়া, বালুসহ বিভিন্ন ধরনের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। রাজশাহী বিভাগ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দের এই কাজের দায়িত্ব পান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জ্যোতি কন্সট্রাকশন কোম্পানি। শুরু থেকেই কাজের মান নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগের ঝড় তোলেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, ওই সড়কটিতে নিম্নমানের খোয়া বিছানো হয়েছে, এজিং-এ রয়েছে ২ নম্বর ইটের সংমিশ্রন। এদিকে নিম্নমানের খোয়া বিছিয়েই রাস্তাটির অনেকাংশে বালু দিয়ে ঢেকে দেয়া হচ্ছে।
এলাকাবাসী বলেন, রাস্তা তৈরিতে এক নম্বর ইট ও বিট বালু ব্যবহারের কথা থাকলেও তিন নম্বর ইট ও পুরাতন বালু দিয়ে করা হচ্ছে। যে কোনো সময় একটি ছোট মিনি ট্রাক-পিকআপ গেলে দেবে যেতে পারে সড়কটি। ফলে জনস্বার্থে সরকারের গৃহিত পদক্ষেপ প্রশ্নবিদ্ধ হবে। ইতোমধ্যে মানসম্মত উপকরণ দিয়ে কাজ করার জন্য অফিসিয়ালি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী সংশিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কেবল পাবনার সাঁথিয়ায় নয়, দেশের প্রায় সমস্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্পেই এমন অনিয়মের চিত্র রয়েছে। মোটা অংকের বাজেট নিয়ে কাজ শুরু করলেও কাজ পাওয়া যায় একদমই নামমাত্র বাজেটের। বাকিটা চলে যায় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ও অধিদপ্তরের অসাধু কর্মকর্তাদের পকেটে। এর মাঝে স্থানীয় নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজিতেও চলে যায় কিছু। ফলে সড়ক নির্মাণে পরিকল্পনা মাফিক অর্থ বাজেট থাকলেও কাজের কাজ তেমন একটা হয় না। ফলে কিছুদিন যেতে না যেতেই সড়কের পুরনো রুপ ফিরে আসে। ভোগান্তি বাড়ে স্থানীয়দের। এভাবেই বাজেট পাশ করার নামে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাকর্মী, অধিদপ্তুরের লোকজন ও দলীয় নেতাকর্মীদের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়মিতই রাষ্ট্রের টাকা নিজেদের বগলদাবা করে থাকেন। এবিষয়ে সরকারের প্রত্যক্ষ নজরদারিসহ সড়ক নির্মাণে তদারকির আহ্বান জানান। একইসাথে সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনার দাবিও জানান সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ
আপনার মতামত জানানঃ